বিপ্লবী গান হচ্ছে রাজনৈতিক গান যা বিপ্লবের পক্ষাবলম্বন ও বিপ্লবের প্রশংসা করে

বিপ্লবী গান (ইংরেজি: Revolutionary songs) হচ্ছে এমন রাজনৈতিক গান যা বিপ্লবের পক্ষ অবলম্বন করে বা বিপ্লবের প্রশংসা করে। এগুলি মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রচার বা আন্দোলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। সর্বাধিক পরিচিত বিপ্লবী গানের মধ্যে রয়েছে “লা মার্সেইয়েজ” এবং “আন্তর্জাতিক“। অনেক প্রতিবাদী গানকে বিপ্লবী হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে – বা পরবর্তীকালে একটি সফল বিপ্লবের পরে বিপ্লবী গান হিসাবে মহাত্যকৃত হতে পারে। অন্যদিকে, একবার বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিবাদের গানের কিছু দিককে প্রতিবিপ্লবী হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিপ্লবী গানগুলি প্রচারণার একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গ। এই জাতীয় গান গাওয়াকে প্রায়শই কোনো মিছিলে বা বিপ্লবী ক্রিয়ার সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই জাতীয় গানগুলি অসন্তুষ্ট রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সংহতির উদ্দেশ্য সাধনের সাথে পরিচিত। কিছু বিপ্লবী গান স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখা হয়েছে; অন্যগুলি বার্টল্ট ব্রেখটের মতো উল্লেখযোগ্য লেখক লিখেছেন। বিপ্লবী গানগুলি প্রায়শই নির্দিষ্ট স্বৈরতন্ত্রী, ফ্যাসিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী অবৈধ সামরিক সরকারগুলিকে উৎখাতের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

প্রতিবাদী গান

প্রতিবাদী গান হচ্ছে এমন ধরনের গান যা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত। ফলে প্রতিবাদী গান নির্দিষ্ট বিষয়শ্রেণির গানের সাথে সংযুক্ত বা বর্তমান ঘটনাসমূহের সাথে সংযুক্ত সংগীত। এটি লোকসংগীত, শাস্ত্রীয় সংগীত বা বাণিজ্যিক সংগীতের ধারার হতে পারে।

বাংলা গণসংগীত

বাংলা ভাষী অঞ্চলে বিপ্লবী গানের একটি বিশাল অংশকে গণসংগীত বলা হয়েছে। গণসংগীত হচ্ছে সেই ধরনের সংগীত যেগুলো জনগণের মুক্তির সাথে জড়িত। জনগণের মুক্তি নিহিত ছিলো বাংলায় শ্রমিক ও কৃষকের মুক্তির সাথে। বাংলায় জমিদারতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনে এই গণসংগীত গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পক্ষে, ভূমির মালিকানা কৃষকের হাতে গ্রহণের পক্ষে, বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই গণতান্ত্রিক ভূমিকা নিতে গিয়ে গণসংগীতকে জমিদারতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী ভূমিকা নিতে হয়।

মূল নিবন্ধ: বাংলা ভাষী অঞ্চলে বিপ্লবী গানের একটি বিশাল অংশ হচ্ছে বাংলা গণসংগীত

আরো পড়ুন:  দূর কোন পরবাসে তুমি চলে যাইবা রে; বন্ধু রে, কবে আইবা রে

ভারতীয় গণনাট্য প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই নাটকের সংগে সংগীতের ধারাটিতেও পরিবর্তন আসে। আধুনিক বাংলা গান দুটি ধারায় ভাগ হয়ে একটি হয়ে যায় বিপ্লবী ও প্রতিবাদী গানের ধারা, অন্যটি থেকে যায় প্রেমের বাংলা গানের ধারা। ফলে পেশাদারি গানের জগতে রোমান্টিক ভাবালুতা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেল ১৯৪০-এর দশকের শুরুতেই। গণচেতনার নতুন অভ্যুদয়ের নৃত্যে গানে মানুষ খুঁজে পেল প্রতিবাদের ভাষা। শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, উৎপাদক শ্রেণির ও মেহনতি মানুষের মনের ভাষা, গানের ভাষায় উঠে এল প্রাজ্ঞ প্রতিভাবান তরুণ কিছু উদ্যমীর সংস্পর্শে এসে।

বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ঘটে গেল গণসংগীতের সফল বিস্তার, এলো নতুন জোয়ার। বিভিন্ন গণসংগীতের গানের দল তৈরি হলো যোগ্য নেতৃত্বে। গণনাট্য সংঘের শিল্পীরা বাংলার সংগীত মঞ্চে, পথেঘাটে, কলকারখানার গেটে, সদর মফস্বলে তাঁদের আসন কায়েম করে নিলেন দারুণভাবে। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, বিনয় রায়, সলিল চৌধুরী, পরেশ ধর, সুধীন দাশগুপ্ত, প্রবীর মজুমদার, অনল চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ সৃষ্টিশীল লেখক সুরকারের গণনাট্য মঞ্চ থেকেই আবির্ভাব। এদের সৃষ্ট গান বাংলার গানের ধারায় ব্যতিক্রমী প্রয়াস।[১]

তথ্যসূত্র

১. দিনেন্দ্র চৌধুরী, গ্রাম নগরের গান (১৮০০-২০০৫) লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ, সেপ্টেম্বর ২০০৯, পৃষ্ঠা ৭২-৭৩

Leave a Comment

error: Content is protected !!