উত্তরা হচ্ছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। এই উত্তরা সিনেমার তিনটি গানই, সাঁওতালী লোকগীতি প্রভাবিত ‘লাল মাটির দেশ’ (বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম) -এর গান। গানগুলোর স্বাতন্ত্র্য হচ্ছে, তীব্র অন্তর্নিহিত হাহাকার। অভিজিৎ বসুর অনন্য গায়কীতে নিম্নে উল্লেখিত গান দুটোই প্রাণ পেয়েছে। তৃতীয় গানটি গেয়েছেন প্রশান্ত চ্যাটার্জি। তিনটি গানের কথা ও সুরই ঐ অঞ্চলের মাটি থেকে উৎসারিত।
১. ফুল গাছটি লাগইছিলাম — অভিজিৎ বসু
ফুলগাছটি লাগই ছিলাম ধুলা মাটি দিয়া রে,
সে ফুল ফুটিয়া রইলো অগম দইরার মাঝারে।
গাছে আইল বড় আম, ছ আনা সাত আনা দাম
বড় আম বড় মিঠা লাগে রে,
বাঁকুড়া বাজারে লাজ লাগে রে।
আম গাছে আম নাই, কুটা কেন লাড় রে
তুমার দেশে আমি নাই আঁখি কেন ঠার রে ?
কদমতলে মোহনচূড়া, দাঁড়ায় আছে নবীন ছুড়া
ওরে ছুড়া মোদের পাড়ায় যাবি লো
গাঁথে দিব বিনি সুতোর মালা।
সরপে সরপে যাব বাছে বাছে টুপা লিব
সেই টুপায় চালভাজা খাব রে,
সফল জনম আর কি পাব ?
ফুলগাছটি লাগই ছিলাম ধুলা মাটি দিয়া রে,
সে ফুল ফুটিয়া রইলো অগম দইরার মাঝারে।।
গানটির উত্তরা সিনেমার দৃশ্যায়ন দেখতে ইউটিউবে যান এই লিংকে।
২. কালো জলে কুচলা তবে — অভিজিৎ বসু
কালো জলে কুঁচলাতলে ডুবলো সনাতন
আজ সাড়া না, কাল সাড়া না, পাই যে দরশন।
নদীধারে চাষে বধু মিছাই করো আশ
ঝিরিহিরি বাঁকা লদী বইছে বারো মাস।
চিংড়ি মাছের ভিতর করা, তায় ঢালেছি ঘী,
নিজের হাতে ভাব ছাড়েছি ভাবলে হবে কি?
চালর চুলা লম্বা কোঁচা কুলি কুলি যায়
দেখি শ্যামের বিবেচনা কার ঘরে শ্যাম আয়?
মেদিনীপুরের আয়না চিরণ বাঁকুড়ার ওই ফিতা
যতন করে বাঁধলি মাথা, তাও যে বাঁকা সিঁতা।
পেছ পারিয়া রাজকুমারী গলায় চন্দ্রহার
দিনে দিনে বাড়ছে তোমার চুলেরই বাহার।
কলি কলি ফুল ফুলেছে লীল কালো আর সাদা
কোন ফুলেতে কিষ্ট আছেন কোন ফুলেতে রাধা?
কালো জলে কুঁচলাতলে ডুবলো সনাতন
আজ সাড়া না, কাল সাড়া না, পাই যে দরশন।
নদীধারে চাষে বধু মিছাই করো আশ
ঝিরিহিরি বাঁকা লদী বইছে বারো মাস।
গানটির উত্তরা সিনেমার দৃশ্যায়ন দেখতে ইউটিউবে যান এই লিংকে।
৩. এক দিনকার হলুদ বাটো তিন দিনকার বাসী,
এক দিনকার হলুদ বাটো তিন দিনকার বাসী,
চৌদ্দলং চৌদ্দলং ফুরায় গেল হে, গঙ্গাজল কী হলুদ মাখামাখি,
কি এই দেখাদেখি কী হলুদ মাখামাখি ২
রবিধানের কাশি, তাই ঘুরে দেখতে আসি,
ও আমার চাঁদফুলকে মইলে দিবি হে,
গঙ্গাজল কী বড়ই সুখে আসি, ২
ছেমড়ানিলো ওলো তুই যাইস না খালের ধারে… … ,
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।