বাংলাদেশের উভচর জলজ ও স্থলজ উভয় পরিবেশে বসবাসকারী ৪১ প্রজাতির প্রাণী

বাংলাদেশের উভচর (ইংরেজি: Amphibians of Bangladesh) হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জলজ ও স্থলজ উভয় পরিবেশে বসবাসকারী ৪১ প্রজাতির প্রাণী। এই ৪১টি প্রজাতির প্রাণীকে Anura এবং Apoda বর্গের অধীনে ৭টি পরিবারে ২১টি গণে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

এম্ফিবিয়া (ইংরেজি: Amphibia) গ্রীক শব্দ এম্ফি (Gr. Amphi = উভয়) এবং গ্রিক বায়োস (গ্রিক bios = জীবন) থেকে উৎপন্ন। অর্থাৎ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা জলজ ও স্থলজ উভয় পরিবেশে বসবাস করে। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যগুলাে কুনােব্যাঙ, সােনাব্যাঙ, salamanders এবং কেঁচোর মতাে Caecilians। যদিও বৈশিষ্ট্যগত ও জৈবিক কার্যাবলীর বিবেচনায় Amphibia-কে মাছসমূহ এবং সরীসৃপসমূহ-এর মধ্যবর্তী শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কর্ডেটদের মধ্যে এরা প্রথম প্রাণী যারা পানি ছাড়া ডাঙ্গায় বসবাস শুরু করে। স্থলজ পরিবেশে মানানসই করার জন্য এদের দেহে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন চলাচলের জন্য পা, শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুস, নাসারন্ধ মুখবিবরের সাথে যুক্ত এবং সংবেদী অঙ্গ বিকশিত হয়েছে। জীবিত অবস্থায় এই প্রাণীরা নরম ও স্যাতস্যাতে পরিবেশে বিচরণ করে। এদের ত্বক মসৃণ বা গ্রন্থিযুক্ত (ব্যতিক্রম caecilians), জোড়া পাখনা অনুপস্থিত, হৃৎপিন্ড ৩ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট, দুইটি ছিদ্র থাকে এবং একটি নিলয় এবং দুইটি অক্সিপিটাল কন্ডাইল থাকে। কঙ্কালতন্ত বড়; পাজর উপস্থিত থাকলে স্টার্নাম এর সাথে যুক্ত থাকে না। মাথায় ১০ জোড়া করােটিক্লায়ু থাকে। নিষেক ক্রিয়া বাহ্যিক বা অন্ত: এদের বেশির ভাগ সদস্যই সাধারণত পানিতে ডিম পাড়ে। ডিমে পিচ্ছিল আবরণ থাকে, এবং জলজ পরিবেশে লার্ভা পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে পরিণত হয়।

এম্ফিবিয়া শ্রেণীর প্রাণীর পূর্বে চারটি পা (গ্রীক শব্দ tetra =চার + podos= পা) ছিল বা স্থলজ মেরুদন্ডী প্রাণী নামে পরিচিত ছিল। এদের বেশিরভাগ সদস্য Devonian সময়কালে crossopterygian থেকে উৎপত্তি হয় এবং Carboniferous যুগে এরা বিকশিত হয়েছে। জলজ পরিবেশ থেকে স্থলজ পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এদের দেহে পাখনার পরিবর্তে অঙ্গ; ত্বক শ্বসনকার্য পরিচালনা করার জন্য; ফুলকা ফুসফুসে রুপান্তর; সংবেদী অঙ্গ জলজ পরিবেশে এবং স্থলজ পরিবেশে উপযােগীসহ কিছু গঠণগত ও আচরণগত এবং শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:  ফুলারের চিকিলা বাংলাদেশের সিসিলিয়ান পর্বের উভচর প্রাণী

এম্ফিবিয়া শ্রেণীর সদস্যরা সাধারণত স্বাদুপানিতে বা স্যাতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করে; যদিও এরা মােহনায় বসবাস করে তথাপি এরা সামুদ্রিক নয়। এদের শীত প্রধান অঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় তবে caecilians-সহ বেশিরভাগ প্রজাতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। কিছুসংখ্যক ব্যাঙ আর্কটিক অঞ্চলে পাওয়া যায়। কিছু সােনাব্যাঙ এবং গেছােব্যাঙ জীবনের কিছু সময় বা সারা জীবন গাছে বসবাস করে। শীতকালে কিছুসংখ্যক কুনােব্যাঙ এবং salamanders শীত নিদ্রা যাপন করে এবং সােনা ব্যাঙ গর্তে লুকায়িত থাকে।

শীত নিদ্রা যাপন করার সময় ব্যাঙের মেটাবলিক কার্যক্রম হ্রাস, হৃদস্পন্দন হ্রাস পায় এবং দেহের সঞ্চিত খাদ্যদ্রব্যের উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করে। বাংলাদেশে যেহেতু পরিবেশের তাপমাত্রার ওঠানামা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় না সেহেতু এম্ফিবিয়া শ্রেণীর সকল সদস্য বছরের সব সময় সক্রিয় থাকে, এমনকি শীতকালে বিভিন্ন মাত্রার তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং এদের তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হয় না। সকল প্রাপ্ত বয়স্ক উভচর প্রাণী এবং salamanders এর লার্ভা মাংশাসী এবং এরা কীটপতঙ্গ, কেঁচো এবং ছােট শামুক, শিকার করে।

উভচর প্রাণীদের জলজ পরিবেশে বসবাসকারী আকারে বড় সদস্যরা খাদ্য হিসেবে ছােট মাছ, কোলাব্যাঙ পাখি এমনকি স্তন্যপায়ী প্রাণী গ্রহণ করে। কোলাব্যাঙ ও সােনা ব্যাঙের লার্ভা প্রধানত শৈবাল, মৃত প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া, ডায়াটম, প্লাংকটন বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জীব খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে।

ব্যাঙের দেহের বিভিন্ন অংশ

বড় মাছ, বেশিরভাগ সাপ, কচ্ছপ, সারস এবং অন্যান্য পাখি খাদ্য হিসেবে সােনাব্যাঙ এবং কোলাব্যাঙ গ্রহণ করে। ব্যাঙের দেহের বিষগ্রন্থি এবং আঁচিল থেকে নিঃসৃত তীব্র ঝাজালাে পদার্থ বহিঃশত্রুর কবল থেকে রক্ষা করে। অনেক উভচর প্রাণীর প্রজননের ধরণ ও পরিস্ফুটন অদ্ভুত। কিছু salamanders এর লার্ভা জলজ ও স্থলজ উভয় পরিবেশে বসবাস করে, এবং জীবনচক্রে neoteny লার্ভা তৈরী করে। Ambystoma গণের অন্তর্ভু কিছু salamander সদস্য লার্ভা অবস্থায় প্রজনন হওয়ার ঘটনাকে paedogenesis বলা হয়। কিছুসংখ্যক mud puppy (Necturus) এবং অন্যান্য কিছুসংখ্যক উভচর প্রাণীদের দেহে সারাজীবন ফুলকা থাকে।

আরো পড়ুন:  রঙিন ভেনপু ব্যাঙ বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের অপ্রতুল তথ্যশ্রেণির ব্যাঙ

অনেক উভচর প্রাণী উপকারী এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরত্বপূর্ণ। সােনাব্যাঙ এবং কোলাব্যাঙ খাদ্য হিসেবে কীটপতঙ্গ ভক্ষণ করে এবং কীটপতঙ্গ জৈবিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা প্রাণিবিজ্ঞান প্রাথমিক কোর্স হিসেবে, মাছের টোপ এবং ব্যাঙের পা মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে উভচর প্রাণীদের সংখ্যা বেশি নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে Anura বর্গের অধীনে ৪০টি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এদের মধ্যে Bufonidae (২টি প্রজাতি), Dicroglossidae (১১টি প্রজাতি), Megophryidae (২টি প্রজাতি), Microhylidae (১১টি প্রজাতি), Ranidae (৯টি প্রজাতি) এবং Rhacophoridae (৬টি প্রজাতি)। এছাড়াও Apoda বর্গের Chikilidae পরিবারে পাওয়া যায় একটি প্রজাতি। Herpetologists-দের মতে Gymnophiona (=Apoda) এর বেশিরভাগ প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের উভচর ও সরীসৃপের তালিকা

আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০০০ এর রিপাের্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮টি প্রজাতির অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপন্ন। বাংলাদেশে প্রাপ্ত উভচর প্রাণীদের তালিকাটি নিচে দেয়া হলো। এই বিষয়ে আরো পড়ুন

০১. কুনো ব্যাঙ,

০২. মার্বেল কুনোব্যাঙ,

০৩. কটকটি ব্যাঙ,

০৪. সবুজ ব্যাঙ,

০৫. যাইযাই ব্যাঙ,

০৬. বন যাইযাই ব্যাঙ,

০৭. জার্ডনের কোলা ব্যাঙ,

০৮. দেশি সোনাব্যাঙ,

০৯. প্রসারিত মুখ ব্যাঙ,

১০. ছাগল ডাকা ব্যাঙ,

১১. বামন ব্যাঙ,

১২. লাল চক ব্যাঙ,

১৩. বাংলাদেশি ঝিঁ ঝিঁ ব্যাঙ,

১৪. মুকুট ব্যাঙ,

১৫. সরুমুখো অনর ব্যাঙ,

১৬. রঙিন ভেনপু ব্যাঙ,

১৭. চিত্র বেলুন ব্যাঙ,

১৮. বাদো লাউবিচি ব্যাঙ,

১৯. নীলফামারিয়া সরুমাথা ব্যাঙ,

২০. ছোট লাউবিচি ব্যাঙ,

২১. লাল পিঠ লাউবিচি ব্যাঙ,

২২. মুখলেসের লাউবিচি ব্যাঙ,

২৩. ময়মনসিংহের লাউবিচি ব্যাঙ,

২৪. সরুমুখো বামন ব্যাঙানু,

২৫. পটকা ব্যাঙ,

২৬. ঝর্ণাসুন্দরী ব্যাঙ,

২৭. সোনালী পাহাড়ী ব্যাঙ,

২৮. সুকর ডাকা ব্যাঙ,

২৯. সবুজ ধানী ব্যাঙ,

৩০. দুই দাগবিশিষ্ট সবুজ ব্যাঙ,

৩১. বাংলা পানা ব্যাঙ,

৩২. মুরগিডাকা ব্যাঙ,

৩৩. কালো ফোটা ব্যাঙ,

আরো পড়ুন:  মার্বেল কুনো ব্যাঙ বাংলাদেশের ন্যুনতম বিপদগ্রস্ত এবং এশিয়ার ব্যাঙের প্রজাতি

৩৪. খারের স্রোতের ব্যাঙ

৩৫. ছোট গেছো ব্যাঙ,

৩৬. দুইদাগি বাশী ব্যাঙ,

৩৭. পাটি গেছো ব্যাঙ,

৩৮. বাঁশ গেছো ব্যাঙ,

৩৯. লাল পা গেছো ব্যাঙ,

৪০. বোদো সবুজ গেছো ব্যাঙ,

৪১. ফুলারের চিকিলা,

Leave a Comment

error: Content is protected !!