[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-5″]দ্বিপদ নাম: Anas poecilorhyncha সমনাম: নেই বাংলা নাম: দেশি মেটেহাঁস, পাতি হাঁস (আই) ইংরেজি নাম: Indian Spot-billed Duck, (Spot-billed Duck) জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Anatidae গণ/Genus: Anas, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Anas poecilorhyncha Forster, 1781[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Anas গণে বাংলাদেশে রয়েছে ১০টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৪২টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশর নিম্নোক্ত ১০টি প্রজাতি হচ্ছে ১. উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, ২. উত্তুরে খুন্তেহাঁস, ৩. পাতি তিলিহাঁস, ৪. ফুলুরি হাঁস, ৫. বৈকাল তিলিহাঁস, ৬. ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস, ৭. নীলমাথা হাঁস, ৮. দেশি মেটেহাঁস, ৯. গিরিয়া হাঁস ও ১০. পিয়াং হাঁস। আমাদের আলোচ্চ হাঁসটির নাম দেশি মেটেহাঁস।
বর্ণনা: দেশি মেটেহাঁস দুইরঙ্গা ঠোঁটের বড় আকারের হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬১ সেমি, ওজন ১.৪ কেজি, ডানা ২৬.৫ সেমি, ঠোঁট ৫.৭ সেমি, পা ৪.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি)। ছেলে ও মেয়েহাঁসের চেহারায় বিশেষ পার্থক্য নেই। বাদামি পালকের প্রান্ত হালকা রঙের বলে দেখতে এদের দেহে আঁইশের মত দাগ আছে; বুকে কালো ফুটকি; মাথার চাঁদি বাদামি; চোখ ঘন বাদামি; প্রশস্ত কালো ভ্রু-রেখা ঠোঁট থেকে শুরু হয়ে চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে; চোখের সামনে ঠোঁটের দু’দিকে দুটি লালচে দাগ রয়েছে; ঠোঁটের দুই-তৃতীয়াংশ কালো ও বাকি এক-তৃতীয়াংশ হলুদ; পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল ও নখর কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস হালকা বাদামি ও এর কপালে লাল দাগ নেই। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. p. poecilorhyncha বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
স্বভাব: দেশি মেটেহাঁস হ্রদ, সেচের জলাধার, নদীর পাড় এবং নলবন ও আগাছাভরা মিঠাপানির জলাভূমিতে বিচরণ করে; সাধারণত পারিবারিক দলে বা ছোট ঝাঁকে দেখা যায়। অগভীর পানিতে সাঁতার কেটে বা পানিতে মাথা ডুবিয়ে আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় রয়েছে লতাপাতা ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বিপদে পানিতে ডুব দিয়ে এরা লুকিয়ে যায়, এবং কেবল মাত্র চোখ পানির ওপর রেখে ডুবে থাকতে পারে। জুলাই-অক্টোবর মাসের প্রজনন ঋতুতে ছেলেহাঁসেরা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে নিচু স্বরে ডাকে, মেয়েহাঁসেরা জোরে গ্যাক গ্যাক করে ডাকে; এবং পানির কাছে মাটিতে লতাপাতায় ঘাস, আগাছা ও পালকের বাসা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজে ও সাদায় মেশানো, সংখ্যা ৭-৯টি; মাপ ৫.৬ × ৪.২ সেমি। স্ত্রী একাই ডিমে তা দেয়; ২৪ দিনে ডিম ফোটে; ছেলে ও মেয়েহাঁসেরা উভয় মিলে ছানা পাহারা দেয়।
বিস্তৃতি: দেশি মেটেহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি; দেশের সব বিভাগের সব ধরনের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এই প্রজাতির বিস্তৃতি কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ; বিশেষ করে সাইবেরিয়া, চীন, জাপান ও মিয়ানমার; এবং মালদ্বীপ ছাড়া ভারত উপমহাদেশের সব দেশে আছে।
অবস্থা: দেশি মেটেহাঁস বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিবিধ: দেশি মেটেহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দাগিঠোঁট হাঁস (ল্যাটিন: Anus = হাঁস; গ্রীক: poikilos = দাগ, rhunkhos = ঠোঁট)।
তথ্যসূত্র:
১. মনিরুল এইচ খান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ২৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Anas poecilorhyncha“, http://www.iucnredlist.org/details/22736541/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২৮ আগস্ট ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫০।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।