[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-outer” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Hierococcyx varius সমনাম: Cuculus varius Vahl, 1797 বাংলা নাম: পাতি চোখগ্যালো ইংরেজি নাম: Common Hawk-Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Hierococcyx, Muller, 1845; প্রজাতি/Species: Hierococcyx varius (Vahl, 1797)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Hierococcyx গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৮টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. হজসনি চোখগ্যালো, ২. বড় চোখগ্যালো, ও ৩. পাতি চোখগ্যালো। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে পাতি চোখগ্যালো।
বর্ণনা: পাতি চোখগ্যালো লম্বা ডোরা ওয়ালা লেজের মসৃণ ধূসর পাখি (দৈর্ঘ্য ৩৪ সেমি., ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ২০ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৭ সেমি.)। পিঠ ধূসর ও দেহতল লালচে-সাদা। গলা সাদা ও বুক লালচে এবং সাদা পেট ও বগলে আবছা বাদামি ডোরা রয়েছে। ডানার নিচের কোর্ভাটে লালচে আমেজ ও ধূসর লেজে ৪-৫টি কালো ডোরাসহ আগা লালচে রঙের হয়। চোখ ধূসরাভ-হলুদ থেকে হলদে-পীতাভ ও চোখের পাতা লেবুর মত হলুদ বর্ণের। মুখ, পা, পায়ের পাতা ও নখর উজ্জ্বল হলুদ। ছেলে ও মেয়েপাখি একই রকম দেখায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে অনুজ্জ্বল লালচে ডোরা, লেজে লালচে ডোরা ও সাদা দেহতলে কালচে বাদামি ফুটকি থাকে। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে H. v. varius বাংলাদেশে রয়েছে।
স্বভাব: পাতি চোখগ্যালো সকল বন, কুঞ্জবন, বাগান ও গ্রামে বিচরণ করে। একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। কোন জায়গা থেকে পল্লবগুচ্ছ ও ঘাসে শিকার খোঁজে ও নিচে নেমে হঠাৎ শিকারকে ধরে ফেলে। খাদ্যতালিকায় শুঁয়োপোকা, চারাগাছখেকো পোকা, ফড়িং, পঙ্গপাল, উড়ন্ত উই ও মাকড়সা রয়েছে। কখনও ছোট টিকটিকি ও ফল খায়। দ্রুত ও ধীরে পর্যায়ক্রমিক ডানা চালিয়ে শিকরের মত উড়ে। মার্চ-জুন মাস প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি গোপন আস্তানা থেকে অবিরাম ডাকতে থাকে। উচ্চ মনোহর সুরে দু’বার ডাকে: টুট টুটু। ডাকের সুরের জনশ্রুতি এরূপ- চোখ গেলো, পিউ কাহা বা ব্রেইন ফিভার। বাসা তৈরি করে না। মেয়েপাখি দামা, ছাতারে, বেনেবৌ-এর বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম চকচকে নীলকান্তমণি-নীল, মাপ। ২.৬ × ২.০ সেমি.।
বিস্তৃতি: পাতি চোখগ্যালো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সব বিভাগের বনে, বাগানে ও লোকালয়ে বিচরণ করে। মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ও মিয়ানমারে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ।
অবস্থা: পাতি চোখগ্যালো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই পাকরা পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]
বিবিধ: পাতি চোখগ্যালো বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বৈচিত্র্যময় চোখগেলো (গ্রীক: hierax = শিকরে, kokkux = কোকিল; ল্যাটিন: varius = বৈচিত্র্যময়)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Hierococcyx varius“, http://www.iucnredlist.org/details/22683846/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।