ভূমিকা: বড় মদনটাক বা হাড়গিলা হচ্ছে কিকোনিডি পরিবারের Leptoptilos গণের একটি পাখি। বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Leptoptilos গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে, ১. বড় মদনটাক এবং ২. ছোট মদনটাক। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে বড় মদনটাক বা হাড়গিলা। এছাড়াও আফ্রিকায় প্রাপ্ত অন্য মদনটাকটির নাম হচ্ছে মারাবৌ মদনটাক।
দ্বিপদ নাম: Leptoptilos dubius (Gmelin, 1789) সমনাম: Ardea dubia, Gmelinm, 1789 বাংলা নাম: বড় মদনটাক, হাড়গিলা ইংরেজি নাম/Common Name: Greater Adjutant. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যঃ Animalia বিভাগঃ Chordata শ্রেণীঃ Aves পরিবার/ Family: Ciconiidae গণ/Genus: Leptoptilos, Lesson, 1831; প্রজাতি/Species: Leptoptilos dubius (Gmelin, 1789)
বর্ণনা: বড় মদনটাক ঝোলানো গলথলি ও টাক মাথাওয়ালা বিশাল জলচর পাখি। দৈর্ঘ্য ১৩০ সেমি, ডানা ৮১ সেমি, ঠোঁট ৩৩.২ সেমি,পা ৩২ সেমি, লেজ ৩২.২ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ে পালক থাকে না, ঘাড়ের তলায় সাদা গলাবন্ধ; মাথার পালকহীন চামড়া লালচে-বাদামি।
স্বভাব: বড় মদনটাক হ্রদ, বহমান নদী, জলাধার, নরদমা, খাল, প্যারাবন, খোলা বন ও বাদাজমিতে বিচরণ করে; সচরসচর ছোট ছোট দলে থাকে। চিল, মানিকজোড় ও শকুনের মিশ্র দলে আকাশে উড়ে আহার খোঁজে এবং পানির ধারে আস্তে আস্তে হেঁটে খাবার খায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাংস ও পশুর মৃত দেহ, মাছ, ব্যাঙ, সাপ, টিকটিকি ও কাঁকড়া। মাটি থেকে উড়ে উঠার আগে লম্বা দৌড় দেয় এবং গাছগাছালির ওপর ২-৩টি চক্র দিয়ে আকাশে উঠে। সেপ্টেম্বর-জানুয়ারিমাসে প্রজননকালে ভারতের আসাম রাজ্যের বড় গাছের মগডালে ভূমি থেকে ১২-৩০ মিটার উচুতে ডালপালা দিয়ে ১-২ মিটার ব্যাসের বড়বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ৩-৪ টি, মাপ ৭.৭×৫.৮ সেমি।
বিস্তৃতি: বড় মদনটাক বাংলাদেশে আবাসিক এবং বাংলাদেশের বিলুপ্ত পাখি। উনিশ শতকে ঢাকা বিভাগে ছিল । পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, থাইল্যাণ্ড ও কম্বোডিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি ছিল। বর্তমানে ভারতের আসামও বিহারে এবং কম্বোডিয়ায় মাত্র ৫০০ বা তার কম পাখি টিকে আছে।
অবস্থা: ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে অনিয়মিত পাখি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিধ: দ্য হিন্দু পত্রিকার খবর অনুসারে আসামের কামরূপ জেলার দাদারিয়া এবং পাছারিয়া নামের দুটি গ্রামে বড় মদনটাকের কলোনি হচ্ছে ২০০৮-২০১২ সাল পর্যন্ত। এই গ্রাম দুটিতে প্রচারণা ও কার্যক্রম জোরদার করার ফলে সেখানে বড় মদনটাকের সংখ্যা বাড়ছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।