বর্ণনা: দেহ শক্তিশালী এবং চাপা; উদর গভীরভাবে চাপা; গলা থেকে পায়ু পর্যন্ত তীক্ষ্ণ খাঁজযুক্ত। মাথা তুলনামূলক ছোট, পশ্চাৎ কানকো বিক্ষিপ্ত সূতাযুক্ত; তুন্ড ভোতা, সম্মুখে স্থলভাবে গোলাকার। মুখ প্রান্তীয়, নিম্নচোয়াল উর্ধ্বচোয়াল অপেক্ষা সামান্য লম্বা। ফুলকা দন্তিকা নিরবিচ্ছিন্ন যা একটি প্রশস্ত ও অর্ধচন্দ্রাকৃতির শক্ত পর্দা তৈরি করে। এই পর্দার গোড়ার অংশ ছিদ্রযুক্ত। পৃষ্ঠপাখনা ছোট ও শ্রোণীপাখনার কিছুটা পিছনে অবস্থিত। দেহের আঁইশ ছোট; পার্শ্বরেখায় ১১০ থেকে ১১৫টি আঁইশ থাকে। দেহ রুপালি সাদা বর্ণের যা রক্তের ন্যায় লাল ফোটাযুক্ত থাকে, বিশেষত পুচ্ছপাখনাতেই বেশি দেখা যায় (Talwar and jhingran, 1991)। এদের সর্বোচ্চ মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৫ সেন্টিমিটার হয়।
স্বভাব ও আবাসস্থল: এরা পানির উপরিস্তরে বাস করে এবং উদ্ভিজ প্লাঙ্কটোন ও প্রাণীজ প্লাঙ্কটোন খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে । এই মাছ বাংলাদেশে মিশ্রভাবে চাষ করলে প্রথম বছরে প্রায় ১ থেকে ১.৫কেজি, দ্বিতীয় বছরে ২ থেকে ২.৫কেজি এবং তৃতীয় বছরে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজন প্রাপ্ত হয়। প্রজনন ঋতুতে এই প্রজাতি দেশি প্রজাতির তুলনায় দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে (সাধারনত মার্চ মাসেই এরা পরিপক্কতা লাভ করে)। পরিণত মাছ হাইপোফাইজেশনে ভাল সাড়া দেয়। এটি মূলত প্লাঙ্কটনভূক মাছ যা খাদ্যের জন্য কাতলা মাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। নদীতে এদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশেই পাওয়া যায়।
বিস্তৃতি: বাসস্থান চীন দেশ, তবে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য অনেক দেশেই এই মাছের চাষ হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: সিলভার কার্প মাছ ১৯৬৯ সালে হংকং থেকে প্রথম বাংলাদেশে আমদানি করা হয় যা চাঁদপুরে অবস্থিত ‘মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রে’র পুকুরে ছাড়া হয়েছিল। আমদানিকৃত সিলভার কার্প মাছের সফল প্রজনন ১৯৭৬ সালে সম্ভব হয় যেটা তখন চাষাবাদ বা বংশবৃদ্ধির জন্য সমগ্র দেশের খামারে অবস্থিত পোনা উৎপাদন কেন্দ্রে বিতরন করা হয়। এই মাছের বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় এবং পুকুরে জন্ম নেওয়া শৈবাল নিয়ন্ত্রন করে বলে পরবর্তিতে অনেক দেশই এটি আমদানি করে। বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমারে এই মাছের চাষ হয়। এই প্রজাতির মাছ অধিক উৎপাদনশীল হওয়ায় বাংলাদেশে অন্যান্য দেশীয় কার্প মাছের সাথে সনাতন পদ্ধতিতে এটি চাষ করা হয়। প্লাবন ভূমির মৎস্য চাষ থেকে উৎপাদিত মোট মৎস্য সম্পদে বিগহেড সহ এই প্রজাতির মাছের অবদান শতকরা ৬০ ভাগ। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মৎস্য খামারে সনাতন পদ্ধতিতে এই মাছের প্রজনন ঘটিয়ে পোনা উৎপাদন করা হয়। এটির দাম দেশীয় কার্প মাছের তুলনায় কম।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এই মাছ দেশী কাতলা ও রুই মাছের সাথে খাদ্য ও আবাসস্থল নিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। । তবে এই প্রজাতির আগমনের পর চাষকৃত জলাধারে দেশ কাতলার উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এদের সূক্ষ ছাঁকনীর। ন্যায় ফুলকা দন্তিকা থাকে বলে অতি সহজেই পানির উপরিতল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব, বিশেষ করে উদ্ভিজ প্লাঙ্কটন খায়। এরা শৈবাল ব্লুম নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এই প্রজাতিটি IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় অন্তভূক্ত নয় । বর্তমানে এই মাছ বাংলাদেশের মৎস্য চাষে প্রাধান্য বিস্তার করছে।
মন্তব্য: প্রজনন ঋতুতে দেশীয় কার্পের তুলনায় এই মাছ। দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে। পুরুষ মাছ এক বছরে কিন্তু স্ত্রী মাছ দুই বছরের মধ্যে পরিপক্কতা লাভ করে। ভারত এবং চীনে এই প্রজাতির ডিপ্লয়েড ক্রোমোজম সংখ্যা ৪৮ পাওয়া গেছে।
তথ্যসূত্র:
১. এ কে আতাউর রহমান, ফারহানা রুমা (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৭৬–৭৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।