বর্ণনা: কালিবাউশ বা কালবাউশের পৃষ্ঠদেশ উদরীয় অংশের তুলনায় অধিক উত্তল। তুন্ড ভোতা তবে কোনো পার্শ্বলাব থাকে না। অক্ষিকোটরের মধ্যবর্তী স্থান উত্তল । ঠোট পুরু এবং ঝালরযুক্ত। পশ্চাৎ ওষ্ঠীয় খাজ নিরবিচ্ছিন্ন । উভয় ঠোটের মাঝখানে একটা তরুণাস্থির অবলম্বন বিদ্যমান । ২ জোড়া স্পর্শী থাকে যার মধ্যে চঞ্চতে অবস্থিত স্পর্শী জোড়া ম্যাকিলার জোড়া থেকে দীর্ঘতর হয় । তবে তুন্ডে কোনো প্রকার ছিদ্র থাকে না । পার্শ্বরেখায় ৪০ থেকে ৪২ টি আঁইশ বিদ্যমান ; শ্রেণী থেকে পার্শ্বরেখা পর্যন্ত ৬ বা ৬.৫ সারি আঁইশ , আবার পার্শ্বরেখা এবং পৃষ্ঠপাখনার সম্মুখ গোড়ার মধ্যবর্তী স্থানে ৭ থেকে ৭.৫ সারি আঁইশ বিদ্যমান কিন্তু পৃষ্ঠপাখনার পূর্বে ১৬ থেকে ১৮ সারি আঁইশ থাকে। পৃষ্ঠপাখনা তুন্ডশীর্ষ থেকে পায়ুপাখনার পিছনের গোড়ার মাঝামাঝি অবস্থান থেকে শুরু হয়। তবে শ্রোণীপাখনা পুচ্ছপাখনার গোড়া থেকে তুন্ডশীর্ষের মধ্যবর্তী স্থানে উৎপন্ন। এদের দেহের উপরিভাগ কালো বা ধূসর , কিন্তু নিচের অংশ কিছুটা হালকা বর্ণের হয়ে থাকে। সাধারণত দেহের পার্শ্ববরাবর মাঝখানের আঁইশগুলোতে উজ্জ্বল লাল বর্ণের দাগ দেখা যায়। কিছু কিছু আঁইশে কালো দাগ থাকতে পারে। মাথার অংকীয়তল দেখতে হলুদাভ বর্ণের তবে এক বছর বয়সী মাছে চোখের তারারন্ধ্রের চারিদিকে লাল হয়।
স্বভাব ও আবাসস্থল: সাধারণত নদী, বিল ও হাওড়ের অল্প স্রোতযুক্ত পানিতে বাস করে। L culbasu প্রজাতিটি তলদেশে বাস করে এবং জৈব উপাদান, মোলাস্ক, ডায়াটম, উদ্ভিজ উপাদান, সবুজ শৈবাল, ও জুপ্লাঙ্কটন খায়। এরা নির্দিষ্ট কিছু খাবার খায় । তরুণ মাছ খাদ্য হিসেবে জুপ্লঙ্কটন কিন্তু পরিণত মাছ জৈব উপাদান ও মোলাস্ক পছন্দ করে। ৩৯ থেকে ৪০ সেমি দৈর্ঘ্যের একটি মাছ গড়ে ১,৯৩০০০ থেকে ২,৮৮০০০ টি ডিম পাড়ে। বর্ষাকালে, বিশেষ করে জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এদের প্রজনন ঘটে ।
বিস্তৃতি: পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: কালিবাউশ প্রজাতিটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশে এটি অন্যতম প্রধান কার্প হিসেবে বিবেচিত যা পুকুরে কাতলা ও রুই মাছের সঙ্গে একত্রে চাষ করা হয়। পিটুইটারী হরমোন সমন্বয়ে প্রনোদিত প্রজননের মাধ্যমে খামারে কৃত্রিমভবে এই মাছের চাষ করা হয়। শীতকালে বাজারে টাটকা অবস্থায় এই মাছ পাওয়া যায়।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এই মাছ জলজ উদ্ভিদ, সাকার শৈবাল , ডায়াটম প্রভৃতি খেয়ে আবাসস্থল পরিস্কার করে।এবং একই সাথে পুকুরের আবর্জনা পরিশোধন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এটি IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। এই মাছ ১৯৬০ সালের দিকে ময়মনসিংহ এবং সিলেটের । হাওড় ও বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। বর্তমানে এদেরকে সহজেই পাওয়া যায় তবে খুব অল্প পরিমাণে।
মন্তব্য: বাংলাদেশে এই প্রজাতির সর্বোচ্চ ৭১ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৫.৫ কেজি ওজনবিশিষ্ট মাছ পাওয়া গিয়েছে (Rahman, 2005)। ভারতে এই মাছের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজম সংখ্যা ৫০ এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র:
১. এ কে আতাউর রহমান, ফারহানা রুমা (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৮১–৮২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।