ফলি মাছ হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিকারি মাছ

মাছ

ফলি মাছ

বৈজ্ঞানিক নাম: Notopterus notopterus (Pallas, 1769) সমনাম: Gymnotus notopterus Palla, 1769, Spieilegia Zoologica 7:40; Mystus kapirat Hamilton, 1822, Fishes of the Garges, p.235; Notopterus kapirat Day, 1878, Fishes of India, p.653; Notopterus notopterus Shaw and Shebbeare, 1937, fishes of Northern Bengal, p.7. ইংরেজি নাম: Grey Featherback. স্থানীয় নাম: ফলি মাছ, ফলুই, হাইলা, কানলা 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস 
জগৎ: Animalia পর্ব: Chordata উপপর্ব: Vertebrata মহাশ্রেণী: Osteichthyes শ্রেণী: Actinopterygii বর্গ: Osteoglossiformes পরিবার: Notopteridae গণ: Chitala প্রজাতি: Chitala chitala

বর্ণনা: ফলি মাছের দেহ দৃঢ়ভাবে চাপা। এদের চোয়াল প্রায় সমান। নাকের সামনে নালীযুক্ত, চোখের উপরে কিনারার সামনে গর্তের মতো। জিহ্বাটি দৃঢ়ভাবে বাঁকা ও আংটার মতো সারি সারি দাঁত আছে। মাথা চাপা। পায়ু পাখনা খুব লম্বা এবং ফিতার মতো, একত্রে প্রসারিত হয়ে পুচ্ছ পাখনা সাথে যুক্ত। গাল ও পায়ু পাখনা ঘন আঁইশযুক্ত। দেহের উপরের আঁইশ থেকে মাথার উপরের আঁইশ বেশি বড়। দেহ ও মাথা দেখতে রূপালী সাদা, অসংখ্যা ধূসর দাগযুক্ত। এটি প্রায় ৬১ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয় কিন্তু সাধারণ দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি।

বসবাস: ফলি মাছ শিকারী স্বভাবের একটি মাংসাসী মাছ। এরা মে থেকে জুন মাসের মধ্যে স্থির বা স্রোতযুক্ত পানিতে প্রজনন ঘটায়। এছাড়াও বন্যার সময় প্রজননে সক্ষম এই মাছগুলি তখন তারা প্লাবনভূমিতে যায় এবং সেখানে তারা জলজ উদ্ভিদের অর্ধনিমজ্জিত শিকড়ে ডিম পাড়ে। সমগ্র বাংলাদেশেই নদী, নালা, প্লাবনভূমি, বিল এবং পুকুরে এদের পাওয়া যায়।

বিস্তৃতি: এই মাছ সমগ্র বাংলাদেশেই ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এছাড়া পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, মায়ামনার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে ও এদের পাওয়া যায়।

চাষাবাদ: ফলি মাছ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজাতি। তারপরও এদের কৃত্রিম প্রজনন এবং চাষ পদ্ধতি নিয়ে এখনও কার্যকর কোন উদ্যেগ নেওয়া হয়নি। এই মাছ খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুক্ষ কাটা আছে। দেখতে সুন্দর বলে এই প্রজাতিটি অ্যাকুরিয়ামেও পালন করা যায়। এই শিকারী মাছ পুকুরের অনাবশ্যক মাছগুলি খায় বলে কিছু মাছ চাষী তাদের মাছ চাষের পুকুর থেকে অনাবশ্যক মাছ দূর করতে এদের ব্যবহার করে।

আরো পড়ুন:  সুবর্ণা কাচকি দক্ষিণ এশিয়ার সুস্বাদু স্বাদুপানির মাছ

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: এটি IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকায় সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসাবে অন্তভূক্ত। মাছের আবাস্থল কমে যাওয়া, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, পানি দূষণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণই এই প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মন্তব্য: এই মাছ খেতে সুস্বাদু কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাটায় পূর্ণ। হাম রোগীর পথ্য হিসাবে এই মাছের স্যুপ ব্যবহৃত হয়। এই মাছ খামারের অনাবশ্যক মাছ শিকার করে বলে একে ডাইনি মাছ বলে।

তথ্যসূত্র:

১. আলম, গাজী নুরুল (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ এবং অন্যান্য। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃ: ৪–৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!