বর্ণনা: টেরি পুঁটির দেহ গভীর এবং চাপা। পৃষ্ঠভাগ উদরীয় অংশের তুলনায় অধিক উত্তল। স্পর্শী অনুপস্থিত। মুখ মধ্যম আকৃতির। পৃষ্ঠপাখনা পুচ্ছপাখনার গোড়া ও তুন্ড শীর্ষের মধ্যবর্তী স্থানে উৎপন্ন হয় এবং শেষোক্ত পাখনাদন্ড অশাখান্বিত, অস্থিগঠিত ও মসৃণ যা দৈর্ঘ্যে মাথার সমান। শ্রোণীপাখনা পৃষ্ঠপাখনার নিচে থেকে শুরু হয়। পার্শ্বরেখা অসম্পূর্ণ যা ৪ থেকে ৭ টি আঁইশ পর্যন্ত বিস্তৃত; আবার লম্বালম্বি সারিতে ২২ বা ২৩টি আঁইশ থাকে। আঁইশগুলো মধ্যম আকৃতির।
দেহের উপরের অংশ হলুদাভ রুপালি বর্ণের । একটা বড় কালো ফোটা দেহের পার্শ্বদিকে পায়ুপাখনার উপরে ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। আবার ফুলকা পর্দার ঠিক পিছনে ও একটি কালো আড়াআড়ি চিহ্ন দেখা যায়। পাখনাগুলো হয় স্বচ্ছ বা হালকা হলুদাভ বর্ণের প্রতিটি আঁইশে সূক্ষ কালো বিন্দু থাকে। কানকোতে একটা লালচে কমলা বর্ণের দাগ এবং পুচ্ছপাখনার গোড়া ও দেহে বিদ্যমান দাহের মাঝে একটা সূক্ষ কালো রেখা থাকে। পুরুষ মাছ মোটামুটি হলুদাভ বর্ণের এবং এর শ্রোণী ও পায়ুপাখনা প্রায় কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু স্ত্রী মাছের দেহ রুপালি বর্ণের এবং পাখনাগুলো স্বচ্ছ হয় । প্রজনন ঋতুতে পুরুষ মাছটি কমলা বর্ণ ধারণ করে। এই মাছের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৯ সেমি পাওয়া গিয়েছে (Talwar and Jhingran, 1991)।
স্বভাব ও আবাসস্থল: টেরি পুঁটি পানির উপরিভাগ এবং তলদেশ উভয় স্তরেই বাস করে এবং পানির প্রধানত ডায়াটম, শৈবাল, ক্রাস্টেশিয়ান, পোকামাকড় এবং কাদা বা বালি খায়। সাধারণত নদী, ডোবা, মৃদু স্রোতযুক্ত জলাধার, খাল-বিল, পুকুর এবং প্লাবন ভূমিতে বাস করে। তবে কাদা এবং বালুময় তলাবিশিষ্ট স্থির পানিতেও এদের পাওয়া যায় ।
বিস্তৃতি: বাংলাদেশে অভ্যন্তরীন জলাশয়ের প্রায় সর্বত্রই এই প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, তবে মে থেকে অক্টোবর মাসেই সর্বাধিক পরিমাণে ধরা পড়ে। পাকিস্তান এবং ভারতে এই মাছের বিস্তৃতি থাকে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: টেরি পুঁটি মাছ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরা শান্ত প্রকৃতির এবং অ্যাকুরিয়ামে চাষের উপযুক্ত মাছ। বর্ষাকালে বার্বের অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে বাজারে অল্প পরিমাণে মিশ্র অবস্থায় বিক্রি হয়।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এরা শৈবাল এবং ডায়াটমের নিয়ন্ত্রনের। মাধ্যমে আবাসস্থল পরিস্কার রাখে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (2000) এর তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতির মাছ এখনও হুমকির সম্মুখীন নয়। তবে আবাসস্থল রক্ষা এবং অতিরিক্ত মৎস্য আহোরণ বন্ধের মাধ্যমে এদের সংরক্ষণ জরুরী।
মন্তব্য: এই প্রজাতিটি দেখতে P conchonius প্রজাতির মতই তবে এদের পুচ্ছপাখনার গোড়া ও লেজের দাগের মাঝে একটা হালকা কালো রেখা বিদ্যমান। পৃষ্ঠপাখনা অপেক্ষাকৃত সূচালো, ফুলকা পর্দার পিছনে আড়াআড়ি কালো চিহ্ন থাকে এবং পুরুষ মাছের দেহ হলুদাভ হয় যা দ্বারা সহজেই অপরটি থেকে পৃথক করা সম্ভব। Talwar and Jhingran (1991) এর মতে এই প্রজাতিতে যৌন দ্বিরুপতা বিদ্যমান । পুরুষ মাছ মোটামুটি হলুদাভ বর্ণের, তবে এর পায়ু এবং শ্রোণীপাখনা প্রায় কমলা রঙের হয়ে। থাকে। কিন্তু স্ত্রী মাছ রুপালি বর্ণের এবং স্বচ্ছ পাখনাযুক্ত। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ মাছ চমৎকার বর্ণ ধারণ করে ।
তথ্যসূত্র:
১. হক, ওয়াহিদা (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ এবং অন্যান্য। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃ: ১০১–১০২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।