ভূমিকা: তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ (দ্বিপদ নাম: Coelognathus radiatus) হচ্ছে কলুব্রিডি পরিবারের কোয়েলগনাথুস গণের সাপের একটি প্রজাতি। এরা এশিয়ার আবাসিক এবং বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক সাপ। বাংলাদেশের সাপের তালিকায় এই গণে বাংলাদেশে রয়েছে ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতেও রয়েছে এই ৭টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এবং আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটি হচ্ছে তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ।
Kingdom: | Animalia |
Phylum: | Chordata |
Class: | Reptilia |
Order: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | Colubridae |
গণ: | Coelognathus |
প্রজাতি: | Coelognathus radiatus |
আকার ও বিবরণ: তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ ১৫২ সেন্টিমিটার থেকে ২২৮ সেন্টিমিটার প্রজন্ত হয়ে থাকে । এই সাপের দেহের বেশিরভাগ অংশ তামাটে বর্ণযুক্ত । মাথা ঘাড় জুড়ে কালো রেখা এবং চোখের পিছনে থেকে ইংরেজি V এর মতো কালো রেখা রয়েছে । চোখের উপরের কালো রেখাটি ঘাড়ের রেখা এর সাথে যুক্ত হয়েছে। দেহের পেছনের অংশ ধূসর-বাদামী, হলুদ-বাদামি ও কালো ডোরা কাটা দাগ সারাদেহে আছে । গাড় বাদামী বা কালো দাগ গুলা লেজ পর্যন্ত চলে গেছে।আঞ্চলিক নামঃ কথাউ কথাউ একে জাম্পিং সাপও বলে ।
আচরণ: তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ ৫ থেকে ১৫টি ডিম দেয়। এদের খাদ্যতালিকায় আছে টিকটিকি,ইদুর, ব্যাঙ, কাঠবিড়ালি ও ছোট পাখি । এদের স্বভাব নির্বিষ প্রজাতির এই সাপটি এর নামের সাথে দুধরাজ যুক্ত থাকলেও সাপটি কখনই দুধ খায় না। সাপটি নিযেকে আত্মরক্ষা করতে পছন্দ করে। কেউ তাকে উত্তেজিত করলে সে মাথা উঁচু করে ঘাড় উল্লম্ব ভাবে দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘S’ অক্ষরের মতো দেহ পেচিয়ে গলা ফুলিয়ে মুখ হা করে তেড়ে আসে কামড়াতে । এরা যখন উত্তেজিত হয় তখন মাটি থেকে ১ মিটার প্রজন্ত মাথা দেহের উপর ভর করে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে । এক সময় উত্তেজনা কমিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ।এরা অতান্তত দ্রুত গতির সাপ।
আবাস: তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ স্থলে বসবাসকারী সাপ । বন জঙ্গল ছাড়াও গোলাঘর, ক্ষেত খামার যেইখানে ইঁদুর বেশী থাকে ঐ জায়গা গুলাতে বেশী দেখা যায়।
বর্তমান অবস্থা: তামাটে মাথা দুধরাজ সাপ তথা দুধরাজ সাপের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের দেশের সব অঞ্চলেই কম বেশি দেখা যায়। এদের বৈশ্বিক অবস্থান হচ্ছে এরা বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, দক্ষিণ চীন, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই , সিঙ্গাপুর, হংকং, বার্মা (মিয়ানমার) ও নেপাল এ দেখতে পাওয়া যায়.
লোক গল্প: মানুষের ধারণা এ সাপ গরুর দুধ খায় । হয়তো কখন সাপটি গোয়াল ঘরে গরুর দুধের বাটে ইঁদুর মনে করে মুখ দেয়া অবস্থায় গোয়ালা দেখে মনে করেছে সাপটি দুধ খাইতেছে , সেই থেকে প্রচলন হয়ে আসছে যে এই প্রজাতির সাপ দুধ খায়।
প্রকৃতিতে দুধরাজ সাপের ভূমিকা:
এতামাটে মাথা দুধরাজ সাপের খাদ্যাভ্যাস উপকৃত করছে আমাদের কৃষিকে এবং ভারসাম্য রক্ষা করছে আমাদের প্রকৃতির । প্রতিবছর বীজতলা থেকে শুরু করে খাদ্যগুদাম পর্যন্ত ইঁদুরে বিনষ্ট করে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৩০ শতাংশ।তাছারা ইঁদুর নিধনে যেই বিষ প্রয়োগ করা হয় সেই বিষের প্রভাবে অন্যান্য প্রাণীও আক্রান্তত হয়ে থাকে।এতে পরিবেশের মারাত্মক ভারসাম্য হানি হয়। এই বিষ খাদ্য বস্তুর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা বিধ মারাত্মক রোগের প্রভাব বিস্ততার করে , যা আর্থিক ও মানুষিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করে আমদেরকে । তাই আমরা কীটনাশক ও বিষ প্রয়গ থেকে সরে এসে যদি পরিবেশবান্ধব সাপ সংরক্ষণ করি তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হবো। এতে প্রতিবছর ইঁদুর দমন অভিযানের মাধ্যমে অর্থ ব্যয় এর পরিমাণও কমে যাবে। ইঁদুরের কবল থেকে এদেশকে মুক্ত করতে চাইলে, সাপ উৎপাদন, সংরক্ষন ও প্রকৃতি থেকে সাপের বংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের দেশের সকল মানুষকে দুধরাজ সাপ সহ সকল সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারনা প্রদান করে সাপ সংরক্ষণ করতে হবে যা কৃষি ও কৃষকের জন্য উপকারী।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তথ্যসূত্র: ১. তফসিল -১ ( রক্ষিত বন্যপ্রাণী ) সরীসৃপ , বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০,২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ক্রমিক নং – ৬০, পৃষ্ঠা- ১১৮৪৪৫। ২. THAILAND SNAKES ( www.thailandsnakes.com ) ৩। এলামায় ডট কম, www.alamy.com ৪. উইকিপিডিয়া
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।