ভুমিকা: পাহাড়ি বোরা বা পাহাড়ী বোড়া Ovophis গণের অন্তর্ভুক্ত একটি সাপের প্রজাতি। বাংলাদেশের সাপের তালিকায় এটি অপ্রতুল এবং এশিয়ার বিপদমুক্ত প্রজাতি।
বর্ণনা: এই গণের সরীসৃপ দেখতে পিউপিল উলম্ব ও উপবৃত্তাকার, লোরিয়াল পিট উপস্থিত, মাথা ত্রিকোণাকার, প্রথম উপরের ল্যাবিয়াল সঁচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পৃথক থাকে। দেহের মধ্যভাগে আঁইশের সংখ্যা, অঙ্কীয় আঁইশের সংখ্যা ১৯০-এর চেয়ে কম (Leviton et al., 2003)।
পাহাড়ী বোড়ার দেহ মোটাসোটা; তুন্ড ছোট, মাথা ত্রিকোণাকৃতি এবং গ্রীবা থেকে সুস্পষ্ট পৃথক; লেজ ছোট ও চাপা। পুরুষ সাপের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৯ সেমি, ৫ লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ সেমি; স্ত্রী সাপের দৈর্ঘ্য ১২৫ সেমি, লেজের দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি; সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১২৫ সেমি, সদ্য পরিস্ফুটিত সাপের দৈর্ঘ্য ১৮-২০ সেমি।
দেহের উপরিভাগ হালকা গাঢ় বাদামী বা হলদে-গোলাপী থেকে বর্গাকৃতির ছোপ বিক্ষিপ্ত থাকে, পার্শ্বভাগের ছোপ ছোট। মাথা গাঢ় বাদামী এবং চোখ থেকে চোয়ালের কোণায় হালকা বাদামী স্টাইক থাকে । ঠোঁটে হালকা হলুদ বা বাদামী দাগ থাকে। দেহের অঙ্কীয়ভাগ ঈষৎ, মোটামুটি বাদামী রঙেরা দাগ থাকে।
আঁইশের বিন্যাস: আঁইশ মসৃণ বা অস্পষ্ট শিরযুক্ত, গ্রীবায় ২৩ বা ২৫ সারি, দেহের মধ্যভাগে ২৩ বা ২৫ সারি; কখনো ১৯ বা ২১ বা ২৭ সারি এবং পায়ুর সামনে ১৯ বা ১৫ আঁইশ থাকে । অঙ্কীয় আঁইশের সংখ্যা ১২৭-১৭৬টি; পায়ুর আঁইশ অবিভক্ত; নিম্ন-পুচ্ছের আঁইশের সংখ্যা ৩৫-৬২টি, জোড়া থাকে এবং ১টি বা সবকয়টি জোড়াবিহীন থাকে । সুপ্রাঅকুলার বড় এবং ছোট ছোট আঁইশে বিভক্ত, ৫-৯টি সারিতে সাজানো থাকে। আন্তঃনাসিকা দুইটি ছোট আঁইশ দ্বারা বিভক্ত। সুপ্রাল্যাবিয়াল ৭-১০টি, প্রথমটি নাসিকা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক, ২য়টি মুখের সংবেদী পিট থেকে পৃথক, ৩য়টি সবচেয়ে বড়, ৪র্থ ও ৫মটি চোখের নিচে অবস্থিত তবে ২-৪ সারি ছোট আঁইশ দ্বারা পৃথক (Günther, 1864; Smith, 1943; Leviton, et al., 2003; Das, 2002; Whitaker and Captain, 2004)।
স্বভাব ও আবাসস্থল : পাহাড়ী বোড়া পাহাড়ী বনজঙ্গলে পঁচা-পাতার নিচে, কাঠের গুড়ি শিলাপ, শিলাস্তুপের ফাটলে এবং কাঠের স্তুপে বাস করে । এরা স্থলজ এবং নিশাচর, এরা খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, অঞ্জন, টিকটিকি এবং ব্যাঙ গ্রহণ করে। এরা অন্যান্য pit vipers-এর মতো ডিম পাড়ে। স্ত্রী সাপ গর্তে বা পঁচা পাতার নিচে ৫-১৮টি ডিম পাড়ে, ডিমের পরিমাপ ১৮-২০ মিমি (Das, 2002) এবং দেহ প্রসারিত করে ডিম পাহাড়া দেয়। স্ত্রী সাপ বিপদের সম্মুখীন হলে দেহ কুন্ডলী পাকায়। এরা ধীরগতি সম্পন্ন তবে দ্রুত ছোবল মারে (Whitaker and Captain, 2004)
বিস্তার: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া।
অবস্থান: পাহাড়ী বোড়া বিশ্বে বিপদমুক্ত[২] তবে বাংলাদেশে এই প্রজাতির সাপ অপ্রতুল। এর সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত যথেষ্ট নয় (IUCN-Bangladesh, 2000)।
মন্তব্য: নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের। দক্ষিণ অংশে প্রাপ্ত এই প্রজাতির সাপকে 0. n. imonticola নামক উপপ্রজাতি হিসেবে ধরা হয় ।
তথ্যসূত্র:
১. এম আনোয়ারুল ইসলাম (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ, খণ্ড: ২৫ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৯০-১৯১।
২. “Ovophis monticola“, https://www.iucnredlist.org/species/178669/7592174, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।