সাদাঠোটি সবুজ বোরা সাপ এশিয়ার পাহাড়ি বিষধর সাপ

সাপের প্রজাতি

সাদাঠোটি সবুজ বোরা

বৈজ্ঞানিক নাম: Trimeresurus albolabris Gray, 1842 প্রতিনাম: অজানা ইংরেজি নাম: White-lipped Tree Viper স্থানীয় নাম: সবুজ বোরা সাপ, সাদাঠোটি সবুজ বোরা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Animalia বিভাগ: Chordata অবিন্যাসিত: Reptilia বর্গ: Squamata পরিবার: Viperidae গণ: Trimeresurus প্রজাতি: Trimeresurus albolabris

ভুমিকা: সাদাঠোটি সবুজ বোরা সাপ Viperidae  পরিবারের Trimeresurus গণের সবুজ বর্ণের আঁইশযুক্ত সরীসৃপ প্রাণী। বাংলাদেশের সাপের তালিকায় এটি পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাপ। 

বর্ণনা: সাদাঠোটি সবুজ বোরা সাপের  দেহ মোটাসোটা, মাথার উপরিভাগে ত্রিকোণাকৃতির চ্যাপ্টা আঁইশ থাকে; তুন্ড। গোলাকার লেজ ছোট, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। এদের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মিটার; প্রসবের সময় দৈর্ঘ্য ১২-১৮ সেমি। মাথার শীর্ষ ও দেহ সবুজ রঙের ।

পৃষ্ঠীয়  আঁইশের নিচের সারির কিনারায় সরু ও সাদা ব্যান্ড থাকে, এই দাগ স্ত্রী সাপে অনুপস্থিত বা অস্পষ্ট। পুরুষ সাপে চোখের নিচে একটি সাদা রেখা থাকে। চোখের নিচের আঁইশ হলুদ, সাদাটে বা ঈষৎ সবুজ রঙের । চোখ হলদে বাদামী, ঈষৎ লাল, কমলা বা রক্ত লাল। লেজের প্রান্ত দাগযুক্ত বা লালচে-বাদামী রঙের ফেঁটা থাকে। দেহের নিম্নভাগ ঈষৎ সবুজ হলদে বা সাদা।

আঁইশের বিন্যাস: আঁইশ মসৃণ বা অস্পষ্ট শিরযুক্ত, গ্রীবাতে ২১ বা ২৩ সারি; দেহের মধ্যভাগে ২১ সারি (কখনো ১৯ সারি) এবং পায়ুর সামনে ১৫ বা ১৭ সারি আঁইশ থাকে; অঙ্কীয় আঁইশের সংখ্যা ১৪৯-১৭৩; পায়ুর আঁইশ অবিভক্ত; নিম-পুচ্ছের আঁইশের সংখ্যা ৪৮-৭৮, জোড়ায় থাকে । সুপ্রাল্যাবিয়ালের সংখ্যা ৭-১৩টি, প্রথমটি আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে নাসিকার সাথে যুক্ত; সুপ্রাল্যাবিয়ালের মাঝে ১-২ সারি ছোট আঁইশ থাকে এবং সাব-অকুলার লম্বাটে (Smith, 1943; Das, 2002; Leviton et al., 2003; Whitaker and Captain, 2004)

স্বভাব ও আবাসস্থল: T. albolabris নিচু বনাঞ্চল, কৃষিজ জমি, প্রাইমারী ফরেস্ট; এদের সাধারণত বাশ, ঝোপজঙ্গলে এবং ভূমি থেকে গাছের ২-৩ মিটার উঁচু শাখাপ্রশাখাতে এদের দেখা যায় । এরা নিশাচর এবং গেছো স্বভাবের, তবে মাটিতে ঝরাপাতার মধ্যে এরা বাস করে। এরা খাদ্য হিসেবে ব্যাঙ, টিকটিকি ও অন্যান্য ছোট প্রাণী গ্রহণ করে। এরা ধীরগতি সম্পন্ন ও শান্ত প্রকৃতির এবং ধারে কাছে সাধারণত দেখা যায় তবে এরা দ্রুত ছোবল মারতে পারে। স্ত্রী সাপ একই সময়ে ৭-১৬টি প্রাপ্তবয়স্কের মতো বাচ্চা প্রসব করে, দৈর্ঘ্য ১২-১৮ সেমি (Das, 2002)।

আরো পড়ুন:  অসমীয়া সরু সাপ দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশের তথ্য-অপ্রতুল সাপ

বিস্তার: বাংলাদেশ, ভারতে দক্ষিণ-পূর্ব অংশ, নেপাল, চীনের দক্ষিণ অংশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম এ পাওয়া যায় ।

অবস্থান: এই প্রজাতির সাপ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত অন্যান্য সাপের তুলনায় সচরচার ।

মন্তব্য: এই সাপের বিষক্রিয়া যন্ত্রণাদায়ক এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় তবে সাধারণত মানুষের মৃত্যু হয় না।

তথ্যসূত্র:

১. সুপ্রিয় চাকমা (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ, খণ্ড: ২৫ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৯১-১৯২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!