লাক্ষা-এর নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

লাক্ষা সরাসরি চূর্ণ করে অথবা ফুটিয়ে ক্বাথ তৈরী করে খাওয়া উচিত নয়। তাতে লাক্ষার মধ্যস্থিত মোম জাতীয় অংশ বিশেষ বা গালা শরীরের ভেতরে গিয়ে অন্য উপদ্রব সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। সেজন্য লাক্ষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক নির্দেশ ভালভাবে মেনে চলা প্রয়োজন।

লাক্ষা-এর গুণাগুণ

১. রক্তপিত্ত: এক্ষেত্রে ১ গ্রাম লাক্ষা ছোট ছোট টুকরো করে একটা পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো পুঁটলির মতো বাঁধতে হবে এবং এক কাপ দুধ ও এক কাপ জল একত্রে মিশিয়ে তাতে ঐ পুঁটলিটা ডুবিয়ে ফোটাতে হবে। অবশ্য যে পাত্রটিতে ফোটানো হবে, তার মাঝখানে লাঠিমত কিছু একটা রেখে সেটাতে ঐ পুঁটলিটা এমনভাবে বেঁধে ঝোলাতে হবে, যাতে দুধ-মিশ্রিত জলে ঐটি ডুবে থাকতে পারে। ফোটাতে ফোটাতে যখন মাত্র দুধ অবশিষ্ট (১ কাপ) থাকবে, তখন পাত্রটি নামিয়ে পুঁটলিটা বাদ দিয়ে ঐ লাক্ষা-ফোটানো দুধ ঠাণ্ডা হলে সেটিকে সকালের দিকে অর্ধেকটা ও বৈকালের দিকে অর্ধেকটা খেতে হবে।

এই পদ্ধতি ছাড়াও অন্যভাবেও করা যায়, লাক্ষার পুঁটলিটা যদি ঐভাবে ঝোলানো সম্ভব না হয়, তাহলে সেটাকে জলমিশ্রিত দুধের মধ্যে ফেলে দিয়ে ফোটালেও চলবে। তবে আগের মতো করতে পারলে ভাল। এভাবে কিছুদিন খেলে এ রোগটা চলে যায়। এ সময় সহজ পাচ্য, স্নিগ্ধ ও শীতল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত।

২. রক্তপ্রদরে: ঋতুস্রাব অল্প বা বেশি পরিমাণে অধিক দিন হতে থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কুটজছাল চূর্ণ ১ গ্রাম, মঞ্জিষ্ঠা চূর্ণ ১ গ্রাম ও লাক্ষা ২ গ্রাম একত্রে ১ কাপ ফুটন্ত গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ওটিকে ভালভাবে ছেকে খেতে হবে। আবার সকালে ঐ পরিমাণ চূর্ণ ঐভাবে ভিজিয়ে রেখে বৈকালের দিকে আর একবার খাওয়া প্রয়োজন। মাসখানিকের মধ্যে সাধারণতঃ এটি চলে যায়, আর কোন অসুবিধা থাকে না। তবে এটি যদি কাজ না করে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চলাই শ্রেয়।

আরো পড়ুন:  এশিয়ার মানুষের উপকারি উদ্ভিদ কাঁটা বাঁশের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

৩. আমাশয় ক্ষত ও গ্রহণী ক্ষতে: নানা কারণে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, এখানে তার কারণ অনুসন্ধান না করে কেবল চিকিৎসার বিধানই দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপরিউক্ত  মুষ্টিযোগটি (রক্তপ্রদরে ব্যবহারের জন্য যেটা লিখিত) ঐভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং সেইসঙ্গে অম্লনাশক ঔষধও খাওয়া প্রয়োজন। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব ছাড়াও দূর্বার রস/গাঁদাফুলের রস প্রভৃতিও খেতে দেওয়া হয়। সহজপাচ্য, সুসিদ্ধ, শীতল ও স্নিগ্ধ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ প্রয়োজন। অত্যধিক মিষ্টি ও টকজাতীয় খাদ্য, গুরুপাক ও উষ্ণ দ্রব্য হিতকর নয়।

৪: দাহে: পিত্ত বৃদ্ধির জন্য সর্বাঙ্গে দাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে, গরমের দিনে তা বিশেষভাবে উপলব্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে দুধ মিশ্রিত জলে লাক্ষা ফুটিয়ে (রক্তপিত্তের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি লেখা হয়েছে) কয়েকদিন ব্যবহার করলে ওটা আর থাকে না। তবে অন্য কোন রোগের অনুষঙ্গ হিসেবে এলে সেক্ষেত্রে মূল রোগের চিকিৎসার সঙ্গে এটি ব্যবহার করতে হবে।

৫. শিশুর অপুষ্টিতে: লাক্ষাদি তৈল দিনে ২ বার করে হালকাভাবে মালিশ করতে হবে। এতে শিশুর বল ও বর্ণ বাড়ে। এ তৈলটি বাজারেও পাওয়া যেতে পারে, তবে সর্বদা জেনে নিতে হবে সেটা বাচ্চাদের জন্য তৈরী কিনা, কারণ অন্য প্রকার লাক্ষাদি তৈলও আছে। সবচেয়ে ভাল কোন চিকিৎসকের পরামর্শানুসারে/তত্ত্বাবধানে তৈলটি তৈরী করিয়ে নেওয়া।

CHEMICAL COMPOSITION

Lac Sticklac contains:- resin 70-80%; Wax 4-6%; sugars, proteins and soluble salts 2-4%; colouring matter 1-2% (laccaic acid and erythrolaccin) and a volatile oil. Lac resin contains:- aleuritic acid and its several isorners; shellolic acid 10% and its two isomers; two isomers of dihydro-shellolic acid and its next higher homologues; kerrolic acid and butolic acid; mono-and dihydroxy palmitic acid; a monobasic inter ‘ester; lecollic lactone; a lactonic acid and two solid acids. Shellac wax contains:— esters 80-82% (ceryl-lignocerate, ceryl cerotate, lacceryl lacceroate and ceryl aleuritate); acids 10-14% (laccersic and cerolic); alcohols 1% (neoceryl and lacceryl); hydrocarbons 2-6% (pentacosane and heptacosane) and resin 2-4%.

আরো পড়ুন:  লাল পাথরকুচি গাছের বহুবিধ ভেষজ ব্যবহার, গুণাগুণ ও উপকারিতা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৫১-৫২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Shyamal

Leave a Comment

error: Content is protected !!