ভূমিকা: বিদ্যাপাতা বা কালীঝাঁট (বৈজ্ঞানিক নাম: Adiantum philippense ) হচ্ছে এডিয়ামটাম গণের টেরিডাসি পরিবারের অপুষ্পক ফার্ন। শোভাবর্ধনের জন্য টবে লাগানো হয়। এছাড়া এই ফার্নের নানা ভেষজ গুণাগুণ আছে।
বিদ্যাপাতা বা কালীঝাঁট-এর বর্ণনা:
একটি ছোট, গুচ্ছিত স্থলজ ফার্ন। গ্রন্থিক খাটো, উপ-খাড়া, শীর্ষে শল্কযুক্ত, শল্ক উপ-রেখাকার, ৩ মিমি পর্যন্ত লম্বা, বল্লমাকার, বাদামী-কালো, অখন্ড, অস্বচ্ছ, পাতা সরলপক্ষল, ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, শীর্ষ প্রায়শঃ লম্বাটে, পত্রদন্ড ৮-৩০ সেমি লম্বা, গাঢ় বাদামী হতে কালো, উজ্জ্বল, মসৃণ, পত্রফলক ১২-২৭ সেমি লম্বা, পত্রক বৃন্তযুক্ত, বৃন্ত ২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ, নিচের পত্রকের বৃন্ত উপরের পত্রকের বৃন্তের চাইতে বড়, শিরা সুস্পষ্ট এবং সামান্য উত্তোলিত, অনেকবার দ্বি-বিভক্ত সোরাসগুলি উপরের প্রান্ত বরাবর অবিচ্ছিন্ন অথবা বিচ্ছিন্ন, রেণুস্থলী ছোট, অ্যানুলাস প্রায় ১৮টি পুরু কোষ যুক্ত। রেণু চতু:স্তলকীয়।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৬০, ১২০ (de Winter and AmorOSO, 2003)।
আবাসস্থল ও বংশবিস্তার:
এই ফার্ন বাহারি পাতা হিসাবে অনেকে টবে লাগিয়ে থাকে। বারান্দায় ঝুলন্ত টবে শোভাবর্ধন করে। স্থলজ আবাস, অধিকাংশই স্যাঁতসেঁতে দেয়াল এবং ভেজা, ছায়াযুক্ত স্থান। বংশবিস্তার হয় গ্রন্থিক এবং রেণু দ্বারা।
বিদ্যাপাতা বা কালীঝাঁট-এর বিস্তৃতি:
ভারত, মায়ানমার, ইন্দো-চীন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলা থেকে এই প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে (Pasha and Chakraborty, 1984)।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: সুন্দর পাতার জন্য এই উদ্ভিদ গৃহাভ্যন্তরে টবে লাগানো বাহারী উদ্ভিদ হিসারে ব্যবহৃত হয়।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:
জ্বরসহ গ্রন্থিল স্ফীতি সারারোর জন্য গ্রন্থিক ব্যবহৃত হয়। আমাশয়, রক্তের অসুখ, ক্ষত (আলসার), বাতবিসর্প (erysipelas) এবং জ্বালাভাব রোগের চিকিৎসায় পাতার রস ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদে এই উদ্ভিদকে মৃগী রোগের আরোগ্যের ঔষধ হিসাবে সুপারিশ করা হয়। কুষ্ঠ এবং অন্যান্য চর্মরোগের চিকিৎসায় রেণু কার্যকর বলে ধরা হয়। গুজরাটে শিশুদের জ্বর সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
পাতা পানির সাথে ঘষে চিনি দিয়ে দেয়া হয়। বীরুৎ সদৃশ অংশ গিরিমাটির সাথে পিষে erysipelatous প্রদাহে প্রয়োগ করা হয়। পূর্বেরটিতে পাতার নির্যাস মুখে খাওয়া হয় এবং প্রস্রাব পরিষ্কার এবং তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য পাতার লেই পাকস্থলীর নিচের অংশে লাগানো হয়। এটির জীবাণুনাশক গুণও আছে (Uddin et al., 1998)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৫ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বিদ্যাপাতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বিদ্যাপাতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ নূর-ই-আলম সিদ্দিকী (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৫ম, পৃষ্ঠা ২৮৮-২৮৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
ছবিটি বৃক্ষকথা গ্রুপ থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Md Ashrafuzzaman
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।