ভূমিকা: কাউন বা কাওন বা কাঙ্গুই বা কাঙ্গু, কোরা, কান্তি, দানা, শ্যামধাত (বৈজ্ঞানিক নাম: Setaria italica, ইংরেজি নাম: Dwarf Setaria, Fox-tail, Italian Millet, Liberty Millet, Bristle Grass) পোয়াসি পরিবারের সেটারিয়া গণের তৃণ। এরা ক্ষুদ্র দানাদার দ্বিতীয় বিস্তৃত চাষাবাদকৃত খাদ্যশস্য এবং পূর্ব এশিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এরা সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে।
বর্ণনা: কাউন বা কাওন একবর্ষজীবী তৃণ, কাণ্ড গুচ্ছাকার, সাধারণত ৬০-১৫০ সেমি লম্বা, খাড়া বা গোড়া বক্র, পর্ব ও পর্বমধ্য রোমশবিহীন। পত্রফলক রৈখিক, দীর্ঘাগ্র, প্রায় ৫০.০ x ২.৫ সেমি, গোড়া সরু, প্রান্ত অমসৃণ, গোড়ার নিকটবর্তী অংশ তরঙ্গিত-কুঞ্চিত, রোমশবিহীন, সামান্য অমসৃণ, নিচের অংশ কদাচিৎ রোমশ, অনুফলক ১-৩ মিমি লম্বা,ঝিল্লি ০.৩-০.৫ মিমি লম্বা, সিলিয়া ০.৭-২.৫ মিমি লম্বা, সাদা, আবরণ প্রায় ১৫ সেমি লম্বা, শীর্ষ সামান্য কিলযুক্ত, রোমশবিহীন, অমসৃণ বা রোমশ, প্রান্ত সিলিয়াযুক্ত, পরিঘাতকলা চাপা, রোমশ বা সামান্য অনুরোমশ।
পুষ্পবিন্যাস ছদ্ম স্পাইক বা বহু পুষ্পবিশিষ্ট সংকুচিত রেসিম, প্রায় ৩০ x ৪ সেমি, খাড়া বা ঝুলন্ত, মঞ্জরী অক্ষ ঘন রোমশ, কুর্চ দৈর্ঘ্য ও সংখ্যায় পরিবর্তনশীল, প্রায় ১৫ মিমি লম্বা, উপর অমসৃণ। স্পাইকলেট উপবৃত্তাকার থেকে বিডিম্বাকার, ২.০-২.৭ মিমি লম্বা, রোমশবিহীন। নিচের গ্রুম ০.৬-১.০ মিমি লম্বা, স্বচ্ছ, সূক্ষ্ম, ১-৩ শিরাল, উপরের এ ঘুম নৌকাকৃতি, ১.৫-২.৫ মিমি লম্বা, ৫-৭ শিরাল । নিচের পুষ্পিকা বন্ধ্যা, উপরের পুষ্পিকা উভলিঙ্গ। নিচের লেমা প্রশস্ত উপবৃত্তাকার থেকে বিডিম্বাকার, ১.৪-১.৮ x ১.০১.৫ মিমি, স্বচ্ছ, ৫-শিরাল, উপরের লেমা নৌকাকৃতি, ১.৫-২.০x১.০-১.২ মিমি, ফ্যাকাশে হলুদ, ৫-৭ শিরাল। পেলিয়া স্বচ্ছ শল্কবৎ, ১.৫-২.২ মিমি লম্বা বা অনুপস্থিত। পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী ১.০-১.৩ মিমি লম্বা, হলুদ। গর্ভমুণ্ড ২টি সাদা। ফুল ও ফল ধারণ: ফেব্রুয়ারি-আগস্ট।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৮ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: ছায়াযুক্ত এবং স্যাতসেঁতে জায়গা, নিম্নভূমি ও পাহাড়ী অরণ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় জন্মে। বীজ থেকে ফসল হয়।
বিস্তৃতি: সম্ভবত ওল্ড ওয়ার্ল্ডে আদিনিবাস, বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর – পূর্বাঞ্চলে জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: শস্য ও পশুখাদ্যের জন্য চাষ করা হয়। শস্য খাচাবন্দি পাখিদের খাদ্যরূপে এবং মদ তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকায় এটি খড়ের জন্য চাষ করা হয় (Skerman and Riveros, 1990)।
জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় অজীর্ণ রোগে উদ্ভিদটির ক্বাথ ব্যবহার করে (Pal and Jain, 1998)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাউন প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ দেখা হয়েছে আবাস স্থান ধ্বংস এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত নয়। বাংলাদেশে কাউন সংরক্ষণের জন্য চাষাবাদের মাধ্যম বাড়াতে হবে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রজাতিটি সর্বপ্রকার উপজাতকে জীবিত জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৩০-৩৩১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Marknesbitt
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।