যব বা যও (বৈজ্ঞানিক নাম: Hordeum vulgare, ইংরেজি: Barley) হচ্ছে পোয়াসি (ইংরেজি: Poaceae) পরিবারের Hordeum গণের অন্তর্ভুক্ত এবং এটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশের এর ব্যবহার বিশ শতকে যথেষ্ট থাকলেও এখন অনেক কমে গেছে। যব হচ্ছে একটি খাদ্যশস্য যা একদা গমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
যবের পুষ্টি
আদিকাল থেকেই যবের ব্যবহার হয়ে আসছে ভারতবর্ষে। প্রাচীন মুনি ঋষিদের প্রধান আহার যব ছিল। এই রকমই প্রচলিত ধারণা বেদে যজ্ঞের আহুতিরূপে যব দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে- যবের মণ্ড সহজে হজম হয়, মলরোধ করে, শূল নাশ করে ত্রিদোষ (কফ, বাত, পিত্ত) নাশ করে।
যবের রুটি : সহজে হজম হয়, শরীরের বল ও শুক্র বৃদ্ধি করে, কফ নাশ করে, বায়ু ও মল বৃদ্ধি করে।
যবের ছাতু : সহজে হজম হয়, শরীর ঠাণ্ডা করে, বল ও পুষ্টি বৃদ্ধি করে, শুক্র বৃদ্ধি করে, শ্রান্তি, দেহের ঘাম, শরীরের দাহ (জ্বালা) কফ ও পিত্ত নাশ করে, খিদে বাড়িয়ে দেয়, সারক অর্থাৎ মল ও প্রস্রাব নিঃসারুণ করে, বায়ু নিসারণ করে।
খাওয়ার নিয়ম : জলের সঙ্গে পাতলা করে গুলে খেতে হবে। শক্ত করে মেখে দলা পাকিয়ে খেলে অজীর্ণ হয়।
সাধারণত উত্তরপ্রদেশে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠাণ্ডা রাখবার জন্যে এবং তৃষ্ণা দূর করবার জন্যে ছাতু খাওয়া হয়। অনেকে নুনের বদলে গুড় দিয়ে মিষ্টি করেও ছাতু গুলে খান।
বার্লি : চালের চেয়ে তাড়াতাড়ি হজম হয় ; রোগীর পথ্য হিসেবে এর ব্যবহার। তবে যব শুধু পথ্য হিসেবেই নয় খাদ্য হিসেবেও এর অনেক গুণ আছে।
হাকিমি মতে বা ইউনানি মতে : যব ঠাণ্ডা আর রুক্ষ। যব স্বাদহীন, মলবন্ধ কারক, রক্তপিত্ত কমিয়ে দেয়। নাড়ির গতি ধীর করে, তৃষ্ণা কমায়। পিত্তবৃদ্ধি, কাশি, মাথাব্যথা, হার্টের অসুখ, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, জ্বর রোগে যব ব্যবহার করা হয়। বৈজ্ঞানিক মতে: যব অশক্ত আর অসুস্থ মানুষের দশ পথ্য।
সুস্থ থাকতে যবের ব্যবহার :
১. ডায়বেটিস রোগীদের পক্ষে যবের আটা বেশি উপকারী। যবের আটা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় না।’
২. যাঁরা মোটা হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা যদি চাল গমের বদলে যবের আটার রুটি খান মেদবৃদ্ধি কমবে। ওই রুটি খেতে হবে টক দইয়ের সঙ্গে কিংবা মেথির শাক বা নটেশাকের তরকারি দিয়ে। সঙ্গে মুগের ডালও খেতে পারেন।
৩. যব খেলে প্রস্রাব বেশি হয় অতএব যাঁরা মূত্রকৃচ্ছ্রতায় ভুগছেন তাঁদের পক্ষে ভালো।
৪. যবের আটা শুকনো তাওয়ায় সেঁকে ঠাণ্ডা জলে গুলে যদি অল্প ঘি মিশিয়ে খাওয়া যায় তৃষ্ণা, দাহ ও রক্তপিত্ত দূর হয়। তবে বেশি পাতলা বা ঘন হবে না।
৫. যব আর মুগের ডালের জুস তৈরি করে খেলে আন্ত্রিক উগ্রতা শান্ত হয় এবং পেটের অসুখে বা অতিসার উপকার হয়।
৬. যবের আটা আর চিনি সমান সমান পরিমাণে মিশিয়ে খেলে বার বার গর্ভপাত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
৭. যব, তিল আর চিনি সমান পরিমাণে নিয়ে গুঁড়া করে মধু মিশিয়ে খেলেও গর্ভপাতের ভয় থাকে না।
৮. অল্প পরিমাণে যবক্ষায় খেলে শুল, গুল্ম, লিভারের অসুখ, প্লীহার অসুখ আর অজীর্ণ দূর হয়।
৯. খুব অল্প যবক্ষার ঘি মিশিয়ে চাটলে এবং তার পাঁচ মিনিট পরে ঠাণ্ডা জল খেলে বা ঘোল খেলে মূত্রদাহ বা প্রস্রাব করতে গেলে জ্বালা করা, মূত্রকৃচ্ছ বা প্রস্রাব কম হওয়া এবং পাথরিতে বা কিডনি বা গলব্লাডারে পাথর উপকার হয়।
১০. তাওয়ায় সেঁকে যবের আটা, যষ্ঠিমধু বেটে নিয়ে জলে ধুয়ে নেওয়া ঘি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে রক্তবাত বা ত্বকের বা চর্মের জালা বা প্রদাহ রোগ সারে।
১১. যব পুড়িয়ে তিল তেলে ফুটিয়ে নিয়ে প্রলেপ দিলে অগ্নিদগ্ধ ব্রণ বা আগুনে পোড়া ঘা সারে।
১২. যবের ছাতু শরীরে শক্তি জোগাতে প্রায় অদ্বিতীয় বলা যায়। প্রায় শুধু ছাতু খেয়েই অনেক শ্রমিকেরা সারাদিন ধরে দুরূহ পরিশ্রম করেন। কাজে কাজেই যবের শুধু পথ্য হিসেবেই নয় ‘আহার’ হিসেবেও সমাদৃত হওয়া উচিত।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা, ২২-২৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Matt Lavin
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।