ঘৃতকুমারী, ঘৃতকাঞ্চন, অ্যালোভেরা বা তরুণী ঔষধি গুণ সম্পন্ন বিরুৎ

পরিচিতি: ঘৃতকুমারী লিলিয়াসি পরিবারের অ্যালো গণের একটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera. সারা দুনিয়ায় অ্যালো ভেরা নামে পরিচিত এই উদ্ভিদটির বাংলা নাম ঘৃতকুমারী বা ঘৃতকাঞ্চন বা তরুণী। নিম্নে এই উদ্ভিদটির লোকায়াতিক ব্যবহার উল্লেখ করা হলো। এই উদ্ভিদটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুন

ঘৃতকুমারী একটি ঔষধি উদ্ভিদ

১. শুক্রমেহে: প্রধানতঃ যাঁরা শ্লেষ্মাপ্রধান রোগে ভোগেন, তাঁদেরই এই রোগ বেশি হয়; কোঁত দিলে অথবা প্রস্রাব করার সময় শুক্রস্খলন হয়, এই সব লোকের ঠান্ডা জিনিসে আকর্ষণ বেশী দেখা যায়-এই ক্ষেত্রেই কেবল ঘৃতকুমারীর শাঁস আনুমানিক ৫ গ্রাম একটু চিনি মিশিয়ে হয় সকালে নইলে বিকালের দিকে সরবত করে খাওয়া অথবা শুধু চিনি মিশিয়ে খাওয়া। এর দ্বারা ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই ঐ ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাবে।

২. গুল্ম রোগে: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’র প্রথম খন্ডে ৩৩৪ পৃষ্ঠায় এর বর্ণনা দেওয়া আছে। তাছাড়া গর্ভ হলে পেটে ব্যথা হয় না, আর গুল্ম প্রায়ই পেটে কুনকুনে ব্যথা হতে থাকে; তবে এটা যে গুল্ম সেটা চিকিৎসকের রায় পেলে এই ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ থেকে ৬ গ্রাম একটু চিনি দিয়ে দুই বেলা সরবত করে খেলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে ওটা কমে যাবে। তবে রক্তগুল্ম হলে এই পদ্ধতিতে কাজ হবে না।

৩. ঋতুবন্ধে: গর্ভও নয় আবার গুল্মও নয়, অথচ মাসিক বা ঋতু হয় না। আবার কারও কারও মাসের মধ্যে ২ থেকে ৩ দিন স্তনে ব্যথাও হয়। এমনকি কোমরেও ব্যথা হয়। এই অসুবিধের ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁসকে চটকে তরল করে আমসত্ত্ব যেমনভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে তৈরী করা হয়, সেইভাবে ৫ থেকে ৬টি স্তর দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে সেইটা আন্দাজ ২ থেকে ৩ গ্রাম গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ মাসিকের অসুবিধাটা স্বাভাবিক হবে।

আরো পড়ুন:  মুথা ঘাস বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

৪. অগ্নিমান্দ্যে: (পিত্তবিকৃতির জন্য) এর বিস্তৃত পরিচয় ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’র ৩৪৮ প্যষ্ঠায় দেওয়া হ’য়েছে। সকালে ও বিকালে ৩ গ্রাম বা সিকি তোলা আন্দাজ নিয়ে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে ঐ অগ্নিমান্দ্য চলে যাবে।

৫. ক্রিমি: এর বিবরণ উক্ত পুস্তকের প্রথম খন্ডের ৩১৯ পৃষ্ঠায় দেওয়া আছে, এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ গ্রাম করে দুই বেলা জল দিয়ে খেতে হবে।

৬. শিশুর মলরোধে: সদ্য প্রসূত শিশুর এক মাসের মধ্যে যদি দেখা যায় পেট ফাঁপা আছে, স্তন্যপানে অনিচ্ছা, তার সঙ্গে কান্না, এক্ষেত্রে তাকে কোনো প্রকার জোলাপ দেওয়া সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে ১ ফোঁটা ঘৃতকুমারীর পিচ্ছিলাংশের রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে জিভে লাগিয়ে দিলে মলত্যাগ করবে এবং পেটের বায়ুও কমে যাবে।

৭.অর্শরোগ: এ রোগের স্বভাবধর্ম কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, অবশ্য সেটা থাকুক আর নাই থাকুক, এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৫ থেকে ৭ গ্রাম মাত্রায় একটু ঘি মিশিয়ে সকালে ও বৈকালে ২ বার খেতে হয়; এর দ্বারা দাস্ত পরিষ্কার হবে এবং অর্শেরও উপকার হবে।

৮. একজিমায় বা চর্ম রোগ: দেশ-গাঁয়ে একে বলে আধাঁরযোনি রোগ। অনেকের এ রোগটা কৃষ্ণপক্ষে বাড়ে এবং শুক্লপক্ষে কমে আর বর্ষাকালে অথবা গ্রীষ্মকালেও এটা প্রায়ই বাড়ে; এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ওখানে রগড়ে দিয়ে, খানিক পরে শরীর ধুয়ে ফেললে, পরে একটু তিলের তেল লাগিয়ে দিতে হবে; অথবা সম্ভব হলে আয়ুর্বেদিক মরিচাদ্য তেল লাগালে ভাল কাজ হয়।

৯. ফিক ব্যথায়: ঘৃতকুমারী বা ঘৃতকাঞ্চন-এর শাঁস লাগিয়ে আস্তে আস্তে খানিকক্ষণ মালিশ করন, এটাতে কমে যাবে।

১০. গ্রহণী রোগ: এর বিস্তৃত পরিচয় ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’র প্রথম খন্ডের ৩১৭ পৃঠায় বলা হয়েছে; সংক্ষেপে বক্তব্য হলো; দিনের বেলায় ৩ থেকে ৪ বার একটু একটু দাস্ত হবে, রাত্রে কিছু নয়। এদের মানসিকতা দেখা যাবে সর্বদা মতের পরিবর্ত; কোনটায় সারবে; তার ফলে আরও বিপদ আসে হয় সংগ্রহগ্রহণী তার পরিণতিতে হয়তো উদরী রোগও হতে পারে। যা হোক, এক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর শাঁস ৪ থেকে ৫ গ্রাম খাওয়ার অভ্যাস করলে ওটা সেরে যাবে।

আরো পড়ুন:  মালাঙ্গাকুরি বা চাপরা ঘাস বাংলাদেশের ভেষজ তৃণ

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,৩২-৩৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!