এশিয়ার মানুষের উপকারি উদ্ভিদ কাঁটা বাঁশের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

কাঁটা বাঁশ বা বাঁশ (বৈজ্ঞানিক নাম Bambusa bambos) হচ্ছে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার বৃহৎ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। কাঁটা বাঁশের ভেষজ গুণাগুণ অনেক। এদের ইংরেজি নাম giant thorny bamboo, Indian thorny bamboo, spiny bamboo, thorny bamboo. কাঁটা বাঁশ সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন

কাঁটা বাঁশ পৃথিবীর উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের তৃণ

এখানে বাঁশ বা কাঁটা বাঁশের ভেষজ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

১. গাভীর প্রসব সংক্রান্ত সমস্যা: আপনারা অনেকে দেখে থাকবেন যে গরুর বাচ্চা হবার সময় তাড়াতাড়ি ফুল (অমরা- placenta) বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে দুই-এক মুঠো বাঁশপাতা এনে খাওয়ানো হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তার ফুলও পড়ে যায়। এখনও গ্রামাঞ্চলে গরুর অল্পদিনের গর্ভস্রাবের জন্য বাঁশের শীষের রস করে খাওয়ানো হয়ে থাকে, এ ভিন্ন প্রসবে দেরী হতে থাকলে বা প্রসবান্তিক স্রাব ভাল না হলেও অনুরূপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা যে ঋতুস্রাবকারক, একথা পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের সংগ্রহ গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।

এ তো গেল একটা দিক, অন্যটি হচ্ছে বেশি দুধ পাওয়ার জন্য আজও বহু লোক গরুকে একমুঠো বাঁশপাতা খাইয়ে থাকেন। গরুর পাতলা দাপ্ত হলে গরুর বৈদ্যরা এই পাতা খেতে দেন, এটি ধারক।

২. অর্শ:  যন্ত্রণায় কাতর রোগীকে গায়ে তেল মাখিয়ে বাঁশ পাতা সিদ্ধ জলে অবগাহন করতে বলেছেন আত্রেয় ঋষি (চরকে)। এ ভিন্ন নানা প্রকার রোগে এই বাঁশপাতার লৌকিক ব্যবহার হয়ে আসছে, তার মধ্যে কতকগুলি বনৌষধির গ্রন্থে উল্লেখ আছে। যেমন- গেটেবাতে (Gout) কচি পাতা বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফলা দুই-ই কমে যায়। এইভাবে ফোড়া ফাটিয়ে দেওয়ার জন্য অথবা ঘায়ে (ক্ষত) পোকা হলে বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৩. ইউনানি গ্রন্থে লেখা আছে পাতার রস মধু মিশিয়ে খেলে কাসি ভাল হয়।

৪. বাঁশের গোড়া (মূলের স্থুলাংশ):  পুড়িয়ে ছাই করে চামেলী বা তিল তৈলের সঙ্গে মিশিয়ে টাকে ব্যবহার হয় এবং এই কয়লা দিয়ে দাঁত মাজলে মাড়ি ভাল থাকে ও দাঁত চকচকে হয়। এটা ইউনানি সম্প্রদায়ের গ্রন্থে লেখা দেখি।

আরো পড়ুন:  চিতা লিলি উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ভেষজ বিরুৎ

৫. বাঁশের ত্বক, (সবুজাংশ): যাকে আমরা নীল বলি। এটায় পীড়কা আরোগ্য করে। (Watt.) বাঁশের নীলর ধোঁয়া খেলে হাঁপানির টান নষ্ট হয়।

৬. বাঁশের কাঁটা: বেউড় বাঁশের (Bambusa spinosa) কাঁটা বেটে ফোড়ার চারধারে লাগালে ফোড়া পেকে যায়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Terpenoids viz, lupeol, betaamyrin, alphaamyrin, friedelin, taraxerol, alphaamyrin methyl ether, ferneol. (b) Polysaccharides.

(c) Other constituents viz. 2-furaldehyde, lignins hemicellulose, holocellulose, miliacin, glutinone, glutinol, cylindrin, crusgallin, cholin, betain, cyanogenetic glycoside. (d) Sterols viz. betasitosterol, stigmasterol. (e) Acids viz. oxalic acid, benzoic acid.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৫৩-১৫৪।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

1 thought on “এশিয়ার মানুষের উপকারি উদ্ভিদ কাঁটা বাঁশের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ”

  1. আপনার লেখা ভালো লাগল
    অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
    ভালো থাকেন
    শুভকামনা

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!