বৈদিক তথ্যে পাওয়া যাচ্ছে এক শ্রেণীর মশুক বা মুথার কথা; আর সপ্তদশ শতকে এসে সেটির চার প্রকারের উল্লেখ; অবশ্য তাদের প্রত্যেকের গুণ ও উপযোগিতাও পৃথক পৃথক বলা হয়েছে। আলাচ্য বিষয় ভদ্রমুথা সম্পর্কে। এটি এক জাতীয় ঘাস, ঔষধার্থে এর মূল ব্যবহার করা হয়, মূলটি গ্রন্থি আকারের (Tuberous root)। এটি জন্মে বালি প্রধান স্যাঁতসেতে জমিতে, সাধারণ বলে মুথা ঘাস, এর মূলগুলিই ভ্যাদলা মুথা। এই নামটি ভদ্রমস্তকের বিবর্তিত চলতি নাম। এই ঘাসটির বোটানিক্যাল নাম Cyperus rotundus Linn. ফ্যামিলি Cyperaceae। আর একই প্রজাতির আর একটি ঘাস জন্মে জলাসন্ন ভূমিতে। তার পাতা চওড়া, সে ঘাসগুলি এক থেকে দেড় ফুট উচু হয়, তার বোটানিক্যাল নাম Cyperus Scariosus cyperaceae। এছাড়া কৈবর্ত মস্তকের নামোল্লেখ আছে, সেটি আজও সন্দিগ্ধ ওষধি বলে চিহ্নিত। কিন্তু কৈবর্ত মস্তক এই শব্দটি জলজ মস্তকেরই ইঙ্গিত বহন করে।
ব্যবহারিক প্রক্রিয়া:
এদিকে বর্ষাকালেই জলদোষে ও কালধর্মে মানুষের যখন অগ্নিমান্দ্য হয়, তখন সে বিষমতা দূর করতে পারবে এই মস্তক। এইটাই তাঁদের অনুশীলন।
১. অজির্ণ বা পেট ফাপা: দমকা পাতলা দাস্ত হয় সেক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ গ্রাম কাঁচা মুথা একটু, থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ৪ থেকে ৫ বারে একটু একটু করে খেতে হয়; এটাতে ২ থেকে ১ দিনেই বিশেষ উপকার হয়।
২. আমাশায় : এ রোগে অনেকের পেট কুনকুন করে, ব্যথা করে, সেক্ষেত্রে এই মুথার ক্বাথ খেলে আম ও ব্যথা দুই কমে যায়।
৩. হজমে সমস্যা: যাঁদের পাতলা দাস্ত হয় না, অথচ হজমও হয় না এক্ষেত্রে কাঁচা মুথা ৩ থেকে ৪ গ্রাম, যোয়ান আধ চা-চামচ একসঙ্গে থেতো করে এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে সেটা ছেঁকে সকালে-বিকালে দুই বারে খাওয়া; এর দ্বারা অগ্নিবল ফিরে আসবে।
৪. জ্বরের পিপাসায়: মুথা সিদ্ধ জল (উপরিউক্ত মাত্রায়) একটু একটু করে খেলে জ্বর ও পিপাসা দুই-ই যায়।
৫. জ্বালায়: পিত্তবিকৃতি জনিত গায়ে বা হাত-পায়ের জ্বালায় মুথার রস করে লাগালে উপশম হবে।
৬. মৃগী বা অপষ্মার (এপিলেপসিতে): মুথার রস ১ চা চামচ ৪ থেকে ৫ চা চামচ দুধে মিশিয়ে সেই সময় খাওয়াতে পারলে ওটার তীব্রতা কমে যায়। একটা কথা বলে রাখি যাঁদের এ রোগ আছে, তাঁরা এটা নিয়মিত ব্যবহার করবেন।
৭. মাতাল হলে: মদের নেশা বেশি হলে মুথাসিদ্ধ জল খাওয়ালে ওটা কেটে যায়।
৮. ক্ষত: কোনো কিছুর খোঁচা লেগে ঘা হলে মুথার রসে পাক করা ঘি লাগালে অদ্ভুত ফল পাওয়া যায়।
৯. ঠুনকো হলো: মায়ের স্তনে ঠুনকো হলে এই মুথা বাটা লাগালে ২ থেকে ১ দিনেই যন্ত্রণার উপশম হয়।
১০. পায়োরিয়ার: মুথার রস করে অল্প জল মিশিয়ে খানিকক্ষণ করে মুখে রেখে দিলে ওটা সেরে যায়।
১১. বোলতার কামড়ে: বোলতা কিংবা বিছে হুল বসালে মুথা বেটে ওখানে লাগিয়ে দিয়ে থাকে গাঁয়ের লোকেরা, ওটাতে যন্ত্রণার উপশম হয়।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Unstable alkaloids. (b) Acids viz., linolenic, linote, oleic, myristic & stearic acid. (c) Other compounds viz, pinene, cineole, sesquiterpenes iso-cyperol & glycerol. (d) Essential oil. (e) Fatty oil.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৪৪-১৪৬।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Javier martin
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।