বচ বাংলাদেশের জলাভূমিতে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বিরুৎ

বচ

বৈজ্ঞানিক নাম: Acorus calamus L., Sp. IPL.: 324 (1753), সমনাম: Acorus calamus var. vulnaris L. (1753), Acorus calamus var, verus L. (1753). ইংরেজি নাম: সুইট ফ্লাগ। স্থানীয় নাম: বচ, ঘরব, মিঠাব।

ভূমিকা: বচ (বৈজ্ঞানিক নাম: Acorus calamus)জলাভূমির পাশে জন্মানো অতি গুরুত্বপুর্ণ প্রজাতি। বাংলাদেশে এটি সঙ্কটাপন্ন বিরুৎ। শ্লেমা, ছত্রাকজনিত রোগ সারাতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখে।

বচ-এর বর্ণনা:

বহুবর্ষজীবী বীরৎ। উচ্চতা ৮০ সেমি, মূলাকার কান্ড ১-২ সেমি প্রশস্ত, ঋজু, মসৃণ, পাতা অসিফলাকৃতি বা রৈখিক, উর্ধ্বাগ্র শাখায় স্তবকে সজ্জিত, মসৃণ, ৫৫-৮০ x ১২ সেমি, মধ্যশিরা সুস্পষ্ট। পুষ্পবিন্যাস স্পেডিক্স, ৫-৬.৫ x ১.০-১.৫ সেমি, হালকা হলুদ। পুষ্পদন্ড পত্রবৎ, ২৫-৩০ x ১ সেমি, চমসা পত্রবৎ, ৩৫-৪০ সেমি পুষ্প অসংখ্য, ঘন সন্নিবেশিত, এ্যংশক। পুষ্পপুট ৩+৩, সংকীর্ণ দীর্ঘায়ত।

পুংকেশর ৬ টি, পুংদন্ড দীর্ঘ, ১.২-২.৪ x ০.৩-০.৫ মিমি, পরাগধানী ০.৫ মিমি, গৌর বর্ণ। গর্ভাশয় পুষ্পপুট সমান লম্বা, ১.৫-৩.৫ x ০.৮-২.৩ মিমি, ষটকোনী, বেলনাকার, শীর্ষস্পঞ্জী, ২-৩ প্রকোষ্ঠী, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ৭-১০, গর্ভমুণ্ড প্রায় অবৃন্তক, সছিদ্র। ফল বেরি । বীজ কোণাকৃতি, ২ মিমি।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৬ (Petersen, 1989).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার: উঁচু স্থানের উন্মুক্ত জলাভূমিতে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল-আগস্ট। বীজ ও কন্দের সাহায্যে বংশ বিস্তার ঘটে।

বিস্তৃতি: উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া । বাংলাদেশের রাজশাহী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন বাগানে চাষ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

কন্দের স্বাদ কটু, তিতা ও উত্তেজক। বমনোদ্রেককারী, রেচক, মূত্রবর্ধক, বায়ুরোগ, কাশি দ্বারা ফুসফুস পরিষ্কার, স্মৃতিশক্তি রক্ষা, ক্ষুধা বৃদ্ধি, কণ্ঠস্বরের উন্নতি ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক এবং গলা ও মুখের বিভিন্ন অসুখেও এর ব্যবহার আছে।

উদরের ব্যথা, ফোলা, জ্বর, মৃগী রোগ, শ্বাসনালীর প্রদাহ, বিকার, হাঁপানী, টিউমার, ইদুরের কামড়, বুক ও যকৃতের ব্যথা, বৃক্কের সমস্যা, শ্বেতীরোগ, সাধারণ দূর্বলতা, দন্তশুল এবং বাচ্চাদের পুরনো উদরাময় প্রভৃতি সমস্যায় উপকারী।

আরো পড়ুন:  জগতমদন দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ গুল্ম

আরো পড়ুন: বচ বিরুৎ-এর নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: উদ্ভিদের কন্দ কাশি দ্বারা গলা পরিষ্কারের জন্য চিবানো হয়। চীনাদের মতে এর মূল ক্যান্সার রোগে উপকারী।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১১ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বচ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, অরণ্যহীন অবস্থা ও বাসস্থানের বিপর্যয়ের জন্য সংকটের কারণ দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বচ কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যানে চাষাবাদ চলছে। উল্লেখ্য মিরপুরের জাতীয় হার্বেরিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিএসআইআর গবেষণাগারের উদ্যানসমূহে যত্নসহকারে জন্মানো হয়। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে বাসস্থানের বাইরে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. হোসনে আরা (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২১-২২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Michael Rivera

Leave a Comment

error: Content is protected !!