ভূমিকা: বুইশাকফুল গুলো (বৈজ্ঞানিক নাম: Aeginetia indica) প্রজাতিটি বাংলাদেশে তেমন পরিচিত নাম না। তবে এটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
বুইশাকফুল গুলো-এর বর্ণনা:
পত্রশুণ্য বীরুৎ। ভৌম পুষ্পদন্ড বেগুনি লাল বর্ণের, সরু, এককভাবে অথবা পাদদেশ থেকে ২-৩টি একসাথে উত্থিত হয়, ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পাদদেশের কাছাকাছি ১টি থেকে কয়েকটি বাদামী বর্ণের শল্কপত্র বিদ্যমান। পুষ্প একক, সহপত্রী। বৃতি চমসাবৎ, পাদদেশে যমক কিন্তু অগ্রভাগ খন্ডিত, বৃত্যংশ ৩.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, তীক্ষাগ্রবিশিষ্ট, পাদদেশ প্রশস্ত, দলনল বেষ্টন করে বিদ্যমান, মসৃণ, অনুদৈর্ঘ্য বরাবর শিরিত, হালকা হলুদাভ থেকে গোলাপী। দলমন্ডল প্রায় সমাকৃতিতে ৫-খন্ডিত, প্রতিটি খন্ডক ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা, দলনল ৩ সেমি পর্যন্ত লম্বা, নিম্নমুখী বক্র, মসৃণ, বেগুনি বর্ণের, কালচে সুক্ষ্ম শিরাবিশিষ্ট।
পুংকেশর ৪টি, দললগ্ন, দীর্ঘদ্বয়ী, লম্বা পুংদন্ডগুলো ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং খাটোগুলো ০.৬ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পরাগধানী দ্বি-খন্ডিত, খন্ডকগুলো অসমান, নিচের বন্ধ্যা পুংকেশরটি একটি স্থলাগ্র দলপুটবিশিষ্ট, অনুদৈর্ঘ্য বরাবর বিদারতি হয়। গর্ভাশয় ১-প্রকোষ্ঠীয় এবং বহুখন্ডিত অমরা ও অসংখ্য ডিম্বকবিশিষ্ট, গর্ভদন্ড একক, ১.২-১.৮ সেমি লম্বা, অগ্রভাগ বক্র, প্রায় মসৃণ এবং ছত্রাকার গর্ভমুণ্ডবিশিষ্ট।
ফল আংশিকভাবে ২টি ভাল্ববিশিষ্ট ক্যাপসিউল, ১.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মোটামুটি স্থায়ী বৃতি এবং স্থায়ী গর্ভদন্ডের পাদদেশ কর্তৃক বেষ্টিত, পৃষ্ঠদেশ অনুদৈর্ঘ্য বরাবর সভঙ্গ। বীজ অসংখ্য, অতি ক্ষুদ্র, মোটামুটি দীর্ঘায়ত, হলুদাভ সাদা, জালিকাময় থেকে কূপযুক্ত।
বুইশাকফুল গুলো-এর আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
শালবনে আন্ডারগ্রোথ হিসেবে এবং অরণ্যে লম্বা ঘাসের সহিত জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ জুলাই-ডিসেম্বর। বংশ বিস্তার হয় বীজের মাধ্যমে। বিস্তৃতি: ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন, জাপান এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ জেলায় পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
ফিলিপাইনে Aeginetia indica এর ক্বাথ অভ্যন্তরীণভাবে ডায়াবেটিসে এবং মূত্রগ্রন্থির তীব্র প্রদাহজনিত তরল সঞ্চয়নের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। তাইওয়ানে ইহা হেপাটাইটিস এবং যকৃতের অন্যান্য রোগে ব্যবহৃত হয় (Lemmens and Bunyapraphatsara, 2003).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বুইশাকফুল গুলো প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণ বাংলাদেশে এটি হুমকিরসম্মুখীন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশে বুইশাকফুল গুলো সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির জন্য স্ব -স্থানে সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. মমতাজ বেগম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ৩৬৫-৩৬৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।