ভূমিকা: তারাগাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Alpinia nigra) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ বিরুৎ। এটি বাগান বা টবে লাগানো যায়। তবে বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।
তারা-এর বর্ণনা:
পত্রল-কান্ড ২-৫ মিটার উচু। পাতা অবৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক, পত্রফলক আয়ত-ল্যান্সাকার, ৩৫-৭৭ X ৯-১৭ সেমি, দীঘাগ্র, উভতল মসৃণ ও চকচকে শুধুমাত্র নীচতলের মধ্যশিড়ার দুইপাশের সামান্য লোম ছাড়া, লিগিউল ৪-৫ মিমি লম্বা, চর্মবৎ, গোলাকার, অখন্ড, রোমশ।
পুষ্পবিন্যাস অগ্র, প্যানিক্যাল, আলগা, মঞ্জরীঅক্ষ লোমশ, ২টি লম্বা রেখাকার ইভলিউকার অপরিণত পুষ্পমঞ্জরীকে আবৃত করে রাখে যা পরবর্তিতে শুকিয়ে পুষ্পমঞ্জরীর নিচের ২ টি শাখার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
উপ-মঞ্জরীপত্র নলাকার, চোঙাকার, ঝিল্লিবৎ, ১০-১৫ মিমি লম্বা, লোমশ, স্থায়ী, সূক্ষ্মাগ্র। বৃতি নলাকার, ১.০-১.৪ সেমি লম্বা, ২-৩ খন্ড, লোমশ, একপাশ বিদীর্ণ। দল বৃতিকে অতিক্রম করে না, পাপড়ী ৩টি প্রায় সমান, আয়ত-ডিম্বাকার, ১.৩-২.০ সেমি লম্বা, গোলাপী মাথা সহ সবুজ-সাদা, বাহিরের রোমশ, পৃষ্ঠদেশীয় খন্ড প্রশস্থ, ঢাকনাবৎ, মাথা স্পার্ড।
লেবেলাম চাপা উল্টা- ত্রিকোণ, গোড়া সরু, ২.৫-২.৭ x ১.৮ সেমি, গভীরভাবে দ্বিখন্ড, প্রতিটি আবার সামান্য দ্বিখন্ড, হাল্কা গোলাপী, মধ্যরেখা বরাবর ২টি গাঢ় গোলাপী রেখা আছে। স্টেমিনোড লেবেলামের গোড়ার উভয় পার্শ্বে অবস্থিত এক জোড়া সুচালো অঙ্গ।
পরাগধানী গোলাপী, ০.৮-১.০ সেমি লম্বা, কোষ অপসারী, শীর্ষ কোণাকৃতি, পরাগদণ্ড ১০-১২ মিমি লম্বা, গর্ভাশয় ৪-৫ x ২.৩ মিমি, ত্রিপ্রকোষ্ঠ, ঘন লোমশ, গভদন্ড গোলাপী, গর্ভমুন্ড প্রসারিত, বক্র, মোটামুটি ত্রিকোণাকৃতি, সিলিয়েট, হাল্কা-সবুজ।
ক্যাপসিউল গোলাকার, ১.৫-২.০ সেমি ব্যাস, কাল বা বাদামী কাল, অতি ভঙ্গুর প্রায় মসৃণ। বীজ কোণাকার, কাল।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪৮ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
জলা ও নিচু ভূমি, খাল ও নালার পাড়। ফুল ও ফল ধারণ মে-ডিসেম্বর। রাইজোম ও বীজ দ্বারা সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়। বিস্তৃতি: ভারত থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত সমগ্র এলাকায়। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
তারা-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
এর রাইজোম টনিক, যৌনশক্তি বর্ধক, পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, মূত্র বর্ধক, কফ নির্গমক, বায়ু নাশক ও উত্তেজক। জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যাথা, বাতের ব্যাথা, বহুমূত্র এবং যকৃতের জ্বালায় ব্যবহার করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: চট্টগ্রাম অঞ্চলে গাছের কান্ডের মাঝের অংশ রান্নায় সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তারাগাছ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে তারাগাছ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ ইউসুফ (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ৪৪৭-৪৪৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Nidhan Singh
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।