মহিচরণ শাক দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ শাক

ভেষজ শাক

মহিচরণ শাক

বৈজ্ঞানিক নাম: Ampelygonum chinense (L.) Lindley, Bot. Reg. 24: 63 (1838). সমনাম: Polygomain chinense L. (1753), Persicaria chinensis (L.) H. Gross (1913). ইংরেজি নাম: Trailing Smartweed. স্থানীয় নাম: মহিচরণ শাক, কাকের পান্তাভাত। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Angiosperms.অবিন্যাসিত: Eudicots.বর্গ: Caryophyllales. পরিবার: Polygonaceae. গণ: Ampelygonum, প্রজাতি: Ampelygonum chinense.

ভূমিকা: মহিচরণ শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Ampelygonum chinense) হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও শাক হিসাবে খাওয়া হয়।

মহিচরণ শাক-এর বর্ণনা:

বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, প্রধান কান্ড শয়ান, এক বৎসরে ৩ মিটার বা ততোধিক বৃদ্ধি পায়, প্রায়শই সহায়কের উপর আরোহী প্রধান কান্ড ৬ মিমি (প্রায়) মোটা, সচরাচর মসৃণ।

এদের শাখা-প্রশাখা খাড়া বা উর্ধ্বগ, ৬০ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পাতা আকার-আকৃতিতে বিভিন্ন রকম, পত্রবৃন্ত ১ সেমি (প্রায়) লম্বা, সচরাচর মসৃণ বা নিম্নপৃষ্ঠ রোমশ, কখনও পাদদেশ ২টি সন্ধিবিশিষ্ট;

ফলক ১০ X ৫ সেমি পর্যন্ত, ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত বা ডিম্বাকার-ভল্লাকার, মসৃণ, সচরাচর গ্রন্থিল, কখনও মধ্যশিরা এবং প্রধান শিরাগুলোর তলদেশ রোমশ,

পাদদেশ সচরাচর খাতাগ্র, শীর্ষ তীক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, কিনারা অখন্ড, কখনও সুক্ষ্ম সভঙ্গ, উপরের পাতা প্রায়ক্ষেত্রেই কান্ডবেষ্টক।

নলাকার উপপত্র (oCrea) ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ঝিল্লিময়, একপার্শ্বীকভাবে বর্ধিত, মসৃণ, সিলিয়াবিহীন।

পুষ্পমঞ্জরী মুণ্ডাকার, মঞ্জরীদন্ড শাখান্বিত, দ্বগ্রশাখাবিশিষ্ট বা ছত্রমঞ্জরীবৎ, অধিকাংশক্ষেত্রে বৃন্তক গ্রন্থিবিশিষ্ট, কদাচিৎ গ্রন্থি বর্জিত, গ্রন্থির চূড়া ৩ মিমি থেকে ১ সেমি উঁচু।

মঞ্জরীদন্ডবেষ্টক (ocreolae) ডিম্বাকারভল্লাকার থেকে ভল্লাকার, মসৃণ, গ্রন্থিবর্জিত এবং সিলিয়াবর্জিত।

পুষ্প মুণ্ডাকার, ৩.০-৩.৫ সেমি লম্বা, পুষ্পবৃন্ত ১ মিমি বা ১ মিমি থেকে খাটো, পুষ্পপুট ৫টি, সাদা, ফলের সাথে যুক্ত অবস্থায় বর্ধনশীল, সরস এবং আলোকভেদী।

পুংকেশর ৮টি, ২.৪-২.৮ মিমি লম্বা এবং খাটো গভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে বহির্গামী, ১.২-১.৫ মিমি লম্বা এবং লম্বা গর্ভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে অন্তর্গত, পুংদন্ড সাদা, পরাগধানী কখনও কখনও গোলাপী।

আরো পড়ুন:  জয়ন্তী বৃক্ষের, ডাল, পাতা, ফলের তেরোটি ভেষজ গুণাগুণ

গর্ভাশয় ৩টি তলবিশিষ্ট, গর্ভকেশর ৩.০-৩.৫ মিমি লম্বা এবং বহির্গামী, ১.৮-২.০ মিমি লম্বা এবং খাটো গভদন্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদে অন্তর্গত।

ফল ব্যক্কেট, সরস, ফলের সাথে যুক্ত পুষ্পপুট ২ মিমি (প্রায়) পুরু, সাদা এবং বাইরের স্তরটি আলোকভেদী এবং ভেতরের স্তর কালচে, ফলের আকার (পুষ্পপুটসহ) ৫ X ৫ মিমি পর্যন্ত।

নাট ৩.০x ১.৫ মিমি পর্যন্ত, ৩টি তলবিশিষ্ট, জালিকাময়, কালো এবং সরস পুষ্পপুটের প্রতি। সংসক্ত অতি ক্ষীণ একটি স্তরবিশিষ্ট।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪, ২২ এবং ২৬ ও লিপিবদ্ধ হয়েছে.

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

সচরাচর জলমগ্ন এলাকা। ফুল ও ফল ধারণ অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী, কখনও মার্চ পর্যন্ত চলে। কর্তিত কান্ডের মাধ্যমে, বীজের মাধ্যমেও বংশবিস্তার করে থাকে।

মহিচরণ শাক-এর বিস্তৃতি:

মহিচরণ শাক এশিয়ার দেশ ভুটান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারত, মায়ানমার, ফিলিপাইন এবং শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি তেঁতুলিয়া, সিলেট, চট্টগ্রাম, মধুপুর, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, নারায়নগঞ্জ, রাঙ্গামাটি এবং সুনামগঞ্জ জেলার বনভূমিতে পাওয়া গেছে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ইহার জলীয় নির্যাস গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া Aeromonas hydrophilia এর বিরুদ্ধে কার্যকর। উদ্ভিদটি বলকারক, ক্ষত নিরাময়ক হিসাবে কাজ করে।

এছাড়াও, স্কার্ভি নিরাময়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে ইহার পাতা গরম করে লাগিয়ে দেয়া হয় (Sinha, 1996)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

সিলেটের আদিবাসীরা ইহার কচি কান্ড এবং পাতা সবুজ শাক হিসেবে খেয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে শিশুরা ইহার পাকা ফল খেয়ে থাকে, পাখিও ইহার ফল খায়।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মহিচরণ শাক প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে মহিচরণ শাক সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির জন্য আবাসস্থল রক্ষণাবেক্ষণের প্রযোজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ৪১৭-৪১৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  গোয়ালিয়া লতা বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের ভেষজ বিরুৎ

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!