এন্টিরিনাম বহুবর্ষজীবী হলেও শীতকালীন মৌসুমী ফুল হিসেবে চাষ করা হয়। সমতল অঞ্চলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এবং পাহাড়ী অঞ্চলে ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে চাষ করা হয়। উচু দো-আঁশ উর্বর মাটি যেখানে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা নেই এমন জায়গা এফুল চাষের উপযোগী।
এন্টিরিনামের জাত:
এর দুটি জাত— একটি লম্বা জাতটি ৭৫-১০০ সেঃ মিঃ ও বেটে জাতটি ২০-৪৫ সেঃ উচ্চতা সম্পন্ন হতে দেখা যায়। সাদা, লাল, ঘোর লাল, হলদে, কমলা, বেগুন ইত্যাদি নানা রঙ এর ফুল হয়, আবার একই ফুলে নানা বর্ণ দেখা যায়। ফুলের দুপাশ টিপলে ড্রাগন রাক্ষসের মতো হ্যা করা দেখায় ফলে অনেকে একে স্ন্যাপড্রাগনও বলে।
এন্টিরিনাম জমি প্রস্তুত:
১. বীজতলা প্রস্তুত: চন্দ্রমল্লিকার ক্ষেত্রে যেভাবে বীজতলা প্রস্তুত করা হয় প্রায় একইভাবে এন্টিরিনাম ফুলের চারা তৈরীর বীজতলাও প্রস্তুত করতে হবে।
২. চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত: চন্দ্রমল্লিকার ক্ষেত্রে যেভাবে চারা লাগানোর জন্য বীজতলা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে প্রায় সেভাবেই এন্টিরিনাম ফুলের চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত করতে হবে।
চারা তৈরী ও লাগানোর নিয়ম:
এন্টিরিনাম গাছের বীজ থেকেই চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এ ফুলের বীজ খুব সূক্ষ্ম ও ৩/৪ দিনের মধ্যে গজাতে শুরু করে।
ক. বীজতলা ভালো ভাবে প্রস্তুত হলে শুকানো ছাঁই এর সাথে বীজ মিশিয়ে ছিটিয়ে বপন করতে হবে।
খ. বীজ বপন করার পর হালকা ভাবে মাটি চাপিয়ে সমান করে হালকা পরিমাণ পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
গ. চারা বড় হতে বেশ সময় নেবে এবং এ সময় যাতে পশুপাখি মাটি নাড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঘ. প্রতিটি চারার ৪/৫টি করে পাতা গজালেই সাবধানে তুলে স্থায়ী বাগানে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঙ. বেটে জাতের গাছ বর্ডারে এবং লম্বা জাতের গাছ কেয়ারীতে লাগাতে হবে। গাছের দূরত্ব লম্বা জাতের ক্ষেত্রে ৩০-৪০ সেঃ মিঃ ও বেটে জাতের বেলায় ১৫-২০ সেঃ মিঃ রাখতে হবে । কেয়ারীর ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০-৭৫ সেঃ মিঃ রাখা যেতে পারে।
এন্টিরিনাম পরিচর্যা ও যত্ন:
এন্টিরিনাম গাছের বেলায়ও কতিপয় পরিচর্যা ও যত্ন নেয়ার প্রয়োজন পড়বে।
ক. গাছের উচ্চতা ১৫-২০ সেঃ মিঃ হলেই ডগা কাটিয়া দিতে হবে যাতে গাছ বেশ ঝাড়ালো ও মঞ্জুরীদণ্ড বহুল হয়।
খ. গাছে সাবধানে পানি দিতে হবে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে গাছের গোড়ায় পচন লাগে।
গ. লম্বা মঞ্জুরীর ফুল পেতে হলে একটি মাত্র ডাল রেখে বাকী ডালগুলি কেটে দিতে হবে।
ঘ. প্রথমবার ফুল দেওয়া শেষ হলে মাটির উপর ৭-৮ সেঃ মিঃ রেখে উপরের অংশ কেটে ফেলতে হবে।
ঙ. এ সময় গাছের গোড়ার মাটি সাবধানে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করে হালকা ভাবে জলসেচের ব্যবস্থা করলে পরবর্তীতে ফুল ভালো হবে।
এন্টিরিনাম ফুল সংগ্রহ:
এন্টিরিনামের লম্বা মঞ্জুরীদণ্ডে ইষৎ সুগন্ধযুক্ত অনেকগুলি ফুল ফোটে। অনেকদিন ধরে নানা রঙ এর ফুল আহরণ করা যায়। ফুলদানীতে সাজাবার জন্যে এ ফুল অত্যন্ত উপযোগী। মঞ্জুরীদণ্ডসহ ফুল আহরণ করে বাজারে পূর্বে চুক্তি করা কোন ফুলের দোকানে পাঠাতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮। আইএসবিএন 984-461-128-7
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।