কলাবতী জলাশয়ের পাশে জন্মানো কন্দজাতীয় বিরুৎ

ভূমিকা: সর্বজয়া, কলাবতী (বৈজ্ঞানিক নাম: Canna indica, ইংরেজি নাম: ইন্ডিয়ান শট, ক্যানা লিলি, আফ্রিকান এ্যারারুট) হচ্ছে ক্যানাসি পরিবারের ক্যানা  গণের গুল্ম। এই উদ্ভিদটি যেনো কলাগাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ। তবে এদের কান্ড কলাগাছের মতো ততোটা রসালো না। অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।  

বৈজ্ঞানিক নাম: Canna indica L., Sp. Pl. 1: (1753). সমনাম : Canna orientalis Rosc. (1824), Canna indica L. var. orientalis Baker (1892). ইংরেজি নাম: ইন্ডিয়ান শট, ক্যানা লিলি, আফ্রিকান এ্যারারুট। স্থানীয় নাম: সর্বজয়া, কলাবতী। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Zingiberales. পরিবার: Cannaceae. গণ: Canna. প্রজাতি: Canna indica

বর্ণনা:

কলাবতী বহুবর্ষজীবী গ্রন্থি কন্দাল যুক্ত বীরুৎ। এর কান্ড মসৃণ বায়বীয় ও হালকা সবুজ থেকে গাঢ় পিঙ্গল। কান্ডের দৈর্ঘ্য ১২০ ও প্রস্থ ৩ সেমি। পাতা সরল, সর্পিলাকারে সজ্জ্বিত। প্রশস্তের দ্বিগুণ বা ততোধিক লম্বা, প্রায় ৪০ × ১৫ সেমি, পত্রাবরণ খাটো, ক্রমান্বয়ে বৃন্তে রূপান্তরিত, মধ্যশিরা সুস্পষ্ট, ফল বল্লমাকার, বা দীর্ঘায়ত থেকে উপবৃত্তাকার, অখন্ড।

পুষ্পবিন্যাস অয়িনত, সরল, ভৌম মঞ্জরীদন্ডে আলগা সন্নিবেশিত। ফুল মঞ্জরীপত্রী এবং উপমঞ্জরীপত্রী, উভলিঙ্গ, একপ্রতিসম, অধোগৰ্ভ, মূলত: আংশিক। বৃতি ৩ টি বৃত্যংশের সমন্বয়, সবুজ বা গাঢ় তাম্রবর্ণ, পাপড়িবৎ নয়, অসম, সব বাহিরেরটি বৃহত্তম, মসৃণ, ফলে স্থায়ী। দল ৩ টি পাপড়ি নিয়ে গঠিত, যুক্ত, নিম্নাংশ নলাকার, উপরের অংশ বল্লমাকার, লাল বা বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত, মসৃণ, সমাঙ্গ, ৬ × ১ সেমি।

পুংকেশর ৫টি, ১ টি কার্যকর বাকী সব বন্ধ্যা, পাপড়িবৎ, লাল, হলুদ, বা বিভিন্ন রঙের, পরাগধানী দীর্ঘ, ২-রেনু আধার বিশিষ্ট, বন্ধ্যা পুংকেশর বৃহৎ, অসম । গর্ভপত্র ৩ টি, যুক্ত, গর্ভাশয় ৩ কোষী, অধোগৰ্ভ, প্রতি কোষে ডিম্বক ২ টি, অমরা বিন্যাস অক্ষীয়, গর্ভদন্ড পাপড়িবৎ, পুংকেশর নালি লগ্ন, উপরের অংশ মুক্ত, প্রায় ৬ সেমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড দীর্ঘ, চ্যাপটা, ফল ক্যাপসুল, বহির্ভাগ আঁচিল যুক্ত। বীজ গোলাকার, কালো।[১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ১৮[২] (Kumar and Subramaniam, 1986)

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

কলাবতী ক্রান্তীয় আমেরিকা ও এশিয়ার প্রজাতি। এটি কন্দজ উদ্ভিদ হওয়ায় বংশ বিস্তার হয় মূলাকার কান্ড ও বীজের মাধ্যমে। বীজ থেকে জন্মানো গাছে ৩ বছর পর ফুল ধরে। কান্ডের আগায় লম্বা ডাঁটায় ফুল ফোটে। ফুল বেশ বড় হয়। ফুলের রং হলুদ, লাল, গোলাপী, কমলা, পাটকিলে, দাগযুক্ত ইত্যাদি হয়ে থাকে। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল-নভেম্বর মাস পর্যন্ত। বুনো গাছ জলাভূমিতে ভাল জন্মে। জুন মাসে কান্দগুলি তুলে জুলাই মাসে লাগানোর আগে কিছুদিন ফেলে রাখা ভালো। গাছে বেশি সার প্রয়োগ করা ক্ষতি।[৩]

বিস্তৃতি:

বিশ্বের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে এবং অধিকাংশ উদ্যানে চাষাবাদ হয়।

কলাবতী উদ্ভিদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

বাহারি বীরুঞ্জপে বাগানে রোপন করা হয়। এদের অধিকাংশই Canna indica এর সংকরজাত (Cronquist, 1981)। মূলাকার কান্ডে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তু যথা ট্রায়নটেনল, স্টিগম্যাষ্টেরল, বিটাসিটোস্টেরল, ক্যাম্পেন্ট্রেরল ইত্যাদি ও উৎসেচক বিদ্যমান। কলাবতীর কান্ড মূত্রবর্ধক (Ghani, 2003)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

বীজ তসবি ও হার তৈরিতে ব্যবহার হয়। পাতা বিভিন্ন বস্তু আচ্ছাদনে প্রয়োজনীয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  কলাবতী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কলাবতী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৪৫-১৪৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.  

৩. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৯২, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭  

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Alejandro Bayer Tamayo

আরো পড়ুন:  বিলাতি জারুল বাংলাদেশের দুর্লভ পথতরু

Leave a Comment

error: Content is protected !!