ভূমিকা: বন মটমটিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Chromolaena odorata) ক্রোমলেনা গণের অ্যাাস্টেরেসিয়া পরিবারের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এই প্রজাতি শোভাবর্ধন না। উন্মুক্ত, বালুময় স্থান, ঝোপে মধ্যে অযত্নেই জন্মে।
বন মটমটিয়া-এর বর্ণনা:
এই প্রজাতি সরল, সোজা ও সুপ্রসারী বীরুৎ। তবে এর আকার দেখতে ছোট গুল্মের মতো। এটি ২.১ মিটারের বেশি লম্বা হয় না। এদের শাখা সরেখ ও হালকা রোমশ। পত্র বৃন্তে লাগানো থাকে। পাতার বৃন্ত ২.৫ সেমি লম্বা হয়। পত্রফলক অনূর্ধ্ব ১২.০ X ৬.৫ সেমি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিম্বাকার প্রান্তীয় গুলি স্পষ্টতঃ বল্লমাকার, স্পষ্টভাবে ৩-শিরাবিন্যাসিত, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র বা সূক্ষ্মাগ্র, নিম্নাংশ কীলকাকার-কর্তিতা, স্বল্প সংখ্যক স্থূল দন্ত বিশিষ্ট দম্ভর, স্বল্প সংখ্যক প্রান্তীয় গুলি অর্ধ-অখন্ড, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ।
পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, প্রান্তীয় সমভূমঞ্জরীতে অবস্থিত, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, পুষ্পদন্ড অনূর্ধ্ব ১.৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্রযুক্ত, পত্রাবরণ নিম্নাংশে ৮ X ৩ মিমি। মঞ্জরীপত্র ১.৭-৭.৫ মিমি লম্বা, বহু-স্তরে সজ্জিত, স্পষ্টভাবে ৩ শিরাবিন্যাসিত, বহির্দেশীয় মঞ্জরীপত্র ডিম্বাকার, অধিকতর অন্তর্বর্তী গুলি রৈখিক, সূক্ষ্মাগ্র।
এদের ফুল নীলাভ-সাদা। দলমণ্ডল অনূর্ধ্ব ৫.৫ মিমি লম্বা। গর্ভদণ্ড স্থূলা, রোমশ বাহু বিশিষ্ট, অনূর্ধ্ব ৮ মিমি লম্বা। ফল সিপসেলা, অনূর্ধ্ব ৪ মিমি লম্বা, রোমশ, বৃতিরোম কেশযুক্ত সূক্ষ্মভাবে খর্ব, শক্ত রোমবিশিষ্ট, ৪.৫-৫.০ মিমি লম্বা। ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০, ৫৮ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ:
মুক্ত বালুকাময় স্থান, ঢালু উন্মুক্ত স্থান, পুকুরের পার্শ্ব এবং বেড়ার পাশে, ঝোপযুক্ত জায়গায়। ফুল ও ফল ধারণ নভেম্বর-মে। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
ওয়েষ্ট ইণ্ডিজে স্থানীয়ভাবে জন্মে, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
অন্যান্য ব্যবহার: উদ্ভিদটি মাছের বিষ হিসেবে বিবেচিত হয়। পাতার পেস্ট তৈরি করে কাটা ও ক্ষতে প্রয়োগ করা হয়।
বন মটমটিয়া-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বন মটমটিয়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বন মটমটিয়া সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র ও টীকা:
১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ৩১২-৩১৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Mullookkaaran
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।