ভূমিকা: ছোলা বা চানা বা বুট কলই (বৈজ্ঞানিক নাম: Cicer arietinum) ডালজাতীয় শস্য এবং এই ডাল এবং ডালের তৈরি খাবার বাঙালির কাছে খুব জনপ্রিয়। ছোলা প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি খাদ্যশস্য।
বর্ণনা: খাড়া বা ছড়ানো, অধিক শাখান্বিত বর্ষজীবী বীরুৎ, ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা, সমস্ত অংশ মুষলাকার গ্রন্থিল রোমাবৃত, প্রধান মূল সুপ্রতিষ্ঠিত, পার্শ্বীয় মূল বৃহৎ নডিউলযুক্ত অসংখ্য। এদের পাতা সচূড় পক্ষল, প্রায় ৫ সেমি লম্বা, গভীর শিরাযুক্ত এবং দপ্তর, অক্ষ কন্টক বা একটি শীর্ষক পত্রকে সমাপ্ত, উপপত্র ডিম্বাকার, পত্রক ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার, করাত দস্তুর, উপপত্রিকা অনুপস্থিত।
পুষ্প একল, কাক্ষিক, মঞ্জরীপত্র ছোট, মঞ্জরীপত্রিকা অনুপস্থিত, সাদা, সবুজাভ, গোলাপী বা নীল। বৃত্যংশ তির্যক নলে যুক্ত, ফলক ৫টি বল্লমাকার, অসমান দন্তকযুক্ত। পাপড়ি বহির্মূখী, ধ্বজক প্রশস্ত, বৃন্তক, পক্ষ মুক্ত, তরীদল অভ্যন্তরে বক্র। পুংকেশর ৯+১টি, ধ্বজকীয় পুংকেশর মুক্ত, পরাগধানী যুক্ত, সমরূপ। গর্ভাশয় বৃন্তহীন, ২-স্বল্প ডিম্বকযুক্ত, গর্ভদণ্ড অভ্যন্তরে বক্র, সূত্রাকার, কন্টকহীন, গর্ভমুন্ড শীর্ষক, মুন্ডাকার।
ফল পড, স্ফীত, আয়তাকার, ১-৪ বীজী, বৃন্তহীন, স্থিতিস্থাপক। বীজ কোণাকার, সূক্ষ্ম চঞ্চু এবং ছোট ডিম্বকনাভীযুক্ত, বহিত্বক মসৃণ, কুঞ্চিত বা অমসৃণ, সাদা, হলুদ তেকে কালো। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৪, ১৬, ২৪, ৩২, ৩৩ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: আর্দ্র দো-আঁশ মৃত্তিকায় চাষ করা হয়। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ছোলা তুর্কিতে উৎপন্ন হয়েছিল এবং ২০০ খ্রিষ্টপূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে নেয়া হয়। বর্তমানে গ্রীষ্মমন্ডলের অনেক অংশে আবাদী। বাংলাদেশে সমগ্র জেলায় আবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ছোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ ডালজাতীয় শস্য। সমস্ত শুষ্ক বীজ পানিতে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে বা রান্না করে খাওয়া হয়, বিশেষত মুসলমান অধিবাসীরা রোজা ভাঙার পর। সবুজ পড় এবং কচি বিটপ সবজিরূপে ব্যবহৃত। শুষ্ক ফাটা বীজ (ডাল) স্যুপ রান্না করে খাওয়া হয়, এবং বীজ ও খোসা প্রানীর খাদ্যরূপে ব্যবহৃত। শুষ্ক বীজ থেকে উৎপন্ন পাউডার (বেসন) কনফেকশনারী এবং সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান তৈরীতে ব্যবহৃত।
বায়বীয় অংশ জ্বর, ব্যাথাযুক্ত রজস্রাব, গনোরিয়া, রজস্রাব এবং মূত্রসংক্রান্ত সমস্যায় ব্যবহৃত। বীজ সঙ্কোচক এবং আমাশয়ে ব্যবহৃত। সিদ্ধ পাতা কোন অঙ্গের মচকানি এবং স্থানচ্যুত অবস্থায় ব্যবহৃত। আরো পড়ুন
খাদ্য গুণ: একশত ভক্ষণীয় বীজ বহন করে ১২-৩১% প্রোটিন এবং ৫৮-৬৮% শর্করা (van der Maesen and Somaatmadja, 1992)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: আয়ুর্বেদিক ঔষধে বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পোড়া জায়গায় ব্যবহৃত হয়। পানিতে ভিজানো বীজ দুর্বল স্বাস্থ এবং দুর্বলতায় ব্যবহৃত হয়। সিদ্ধ বীজ শ্বসন সংক্রান্ত সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। সবুজ পাতার । কৃাথ বদহজমে ব্যবহৃত হয় (Ghani, 2003)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ছোলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ছোলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এ. টি. এম নাদেরুজ্জামান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৪-২৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Biswarup Ganguly
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।