মাকড়শা হুড়হুড়ি উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে আলংকারিক বিরুৎ

ভূমিকা: মাকড়শা হুড়হুড়ি (বৈজ্ঞানিক নামCleome hassleriana ইংরেজি: Pink Queen) ক্লিওমাসি পরিবার , ক্লিওম গণের একটি এক প্রকারের বর্ষজীবী বিরুৎ। এটি আমেরিকান প্রজাতি। বাহারি রঙের বিভিন্ন প্রজাতি আছে।

বৈজ্ঞানিক নাম: Cleome hassleriana ইংরেজি নাম: Pink Queen. স্থানীয় নাম: মাকড়শা হুড়হুড়ি, ঝরনা ফুল, সুইস ফুল। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Brassicales. পরিবার: Cleomaceae. গণ: Cleome প্রজাতির নাম: Cleome hassleriana

বর্ণনা:

মাকড়শা হুড়হুড়ি সরল, সোজা বহুবর্ষজীবী বীরুৎ। এদের কান্ড দেড় মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এই প্রজাতি রোমশযুক্ত বহু গ্রন্থিবিশিষ্ট, শীর্ষের দিকে কন্টক রোমী, কখনও পত্র কন্টকিত, অনুদৈর্ঘ্য খাঁজ যুক্ত। পাতা ৫-৭ ফলক যুক্ত, শীর্ষীয় ৩-৫ পত্রক সাধারণত বৃহত্তর। পাতার দৈর্ঘ্য ৭ সেমি ও প্রস্থ ২ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পার্শ্বীয় ২ টি ক্ষুদ্রতর ও আকারে ২.৫ × ১.০ সেমি ও দেখতে ভল্লাকার থেকে উপবৃত্তাকার ভল্লাকার, দীর্ঘাগ্র, অখন্ড, প্রায়শ সিলিয়াযুক্ত, গ্রন্থিল রোমশ। প্রায়শ অঙ্কীয় পৃষ্ঠের মধ্যশিরা কন্টকাবৃত, বৃন্ত প্রায় ৬ সেমি লম্বা, মূলীয় অংশ ১ জোড়া পত্রকন্টক সদৃশ উপপত্র বিদ্যমান। রেসিম ৩০-৪০ সেমি লম্বা, সহপত্রী, মঞ্জরীপত্র ১০-২০ × ৬-১২ মিমি, সরল, ডিম্বাকার, দীর্ঘারী থেকে সূক্ষ্মাগ্র, রোমশ, বৃন্ত ২-৫ সেমি লম্বা, গ্রন্থিল রোমশ। বৃত্যংশ ৪ টি, ৮-১০ × ১-২ মিমি, রৈখিক, সম্মুখ বা পশ্চাত্মখী বক্র, গ্রন্থিল রোমশ, প্রান্ত স্পর্শী, মূলীয় অংশ যুক্ত, সবুজ।

হুড়হুড়ির পাপড়ি ৪ টি মুক্ত, দলবৃন্ত সরু, ৮-১২ মিমি লম্বা, দলফলক ডিম্বাকার ১.২ × ১.৮ সেমি লম্বা এবং রঙ গোলাপী লাল, ক্রমশ সাদায় পরিবর্তিত। অ্যান্ড্রোগাইনোফোর ৩ মিমি লম্বা। পুংকেশর ৬ টি, সমান। পুংদন্ড ৪.০-৪.৫ সেমি লম্বা, পরাগধানী দীর্ঘায়ত, ৬-৯ মিমি লম্বা। গর্ভাশয় ৫-১০ মিমি লম্বা, গাইনোফোর প্রথমে ৩ সেমি, পরবর্তীতে ৫.০-৭.৫ সেমি লম্বা, ডিম্বক বহু, অমরাবিন্যাস গাত্রীয়, গর্ভদন্ড অনুপস্থিত, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার। ফল ক্যাপসিউল আকারের। ফলের দৈর্ঘ্য সাড়ে চার থেকে নয় ও প্রস্থ ০.২-০.৩ সেমি। ফল দীর্ঘায়িত বেলনাকার, গ্রন্থিল রোমশ, পরিপক্ক অবস্থায় ধূসর। বীজ অনেক হয়। বীজের আকার ২.০ × ১.২ মিমি, বৃক্কাকার ও হলুদ রঙের।

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

হুড়হুড়ি গাছ বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে। জনবসতির কাছাকাছি পতিত জমি, নদী-জলাশয়ের পাশে, পথিপার্শ্ব, নিচু অঞ্চল অযত্নে জন্মে থাকে। উদ্যান বা বাগানে চাষ করতে চাইলেও বিশেষ যত্ন ছাড়াই বেড়ে উঠে শোভাবর্ধন করে। মাকড়শা হুড়হুড়ি ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারি থেকে মে।

বিস্তৃতি:

আদিনিবাস পশ্চিম আমেরিকার উষ্ণাঞ্চল, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে। বাহারি উদ্ভিদরূপে উষ্ণমন্ডলীয় দেশ সমূহে চাষাবাদ করা হয় (Khan and Hassan, 1978)। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

সুদর্শন পুষ্পের জন্য বাহারি উদ্ভিদরূপে সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মাকড়শা হুড়হুড়ি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসভূমি ধ্বংসের কারণে দেখা যায় সংকটের মুখে আছে এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মাকড়শা হুড়হুড়ি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে অবস্থা বিবেচনায় উদ্যানে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ প্রয়োজন।[১]

তথ্যসূত্র:

১. হোসনে আরা ও বুশরা খান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৭৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

  • বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: NotAnonymous
আরো পড়ুন:  নীলমনিলতা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের জন্মানো শোভাবর্ধনকারী আরোহী লতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!