বন ধনে বা বন ধুনিয়া বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বন ধনে বা বন ধুনিয়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Croton bonplandianus Baill., Adansonia 4: 339 (1863-64). সমনাম: Croton sparsiflorus Morong (1832). ইংরেজি নাম: Bonpiant’s Croton. স্থানীয় নাম: বন ধনে।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Malpighiales পরিবার:  Euphorbiaceae. গণ: Croton. প্রজাতি: Croton bonplandianus.

ভূমিকা: বন ধনে বা বন ধুনিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Croton bonplandianus) বাংলাদেশের সব জেলাতেই জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

বন ধনে বা বন ধুনিয়ার বর্ণনা:

বহুশাখান্বিত কাষ্ঠল বীরুৎ, ২০-৫০ সেমি লম্বা, শাখা মধ্যম আকারের তারকাকার রোমশ থেকে রোমশ বিহীন। পত্র একান্তর বা অর্ধপ্রতিমুখ, সবৃন্তক, বৃন্ত ২-৬ মিমি লম্বা, সরু, স্বল্প থেকে ঘন তারকাকার রোমযুক্ত;

পত্রফলক ডিম্বাকৃতি ভল্লাকার, ১.২-৪.০ x ০.৩-১.৫ সেমি, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, মূলীয় অংশ কীলকাকার, সামান্য কচ, উপরের পৃষ্ঠ অর্ধরোমশ;

নিচের পৃষ্ঠ তারকাকার রোমাবৃত মূলীয় অংশ ৩ শিরাল, উপরের অংশ ২-৪টি পার্শ্বীয় শিরা যুক্ত, ফলক নিম্নাংশে ২ টি গ্রন্থিযুক্ত, গ্রন্থি ০.৪ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট।

পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয়, ৫-৯ সেমি লম্বা, রোমশ। পুষ্প শিথিল বিন্যস্ত। পুংপুষ্প: সবৃন্তক, বৃন্ত ০.৫-১.৫ মিমি লম্বা, সরু, বৃত্যংশ ১.২-০.৫ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার রোমশ বিহীন, পাপড়ি বৃত্যংশ অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, সাদা, মূলীয় অংশের অভ্যন্তর রোমশ, পুংকেশর ১২টি।

স্ত্রীপুষ্প: মঞ্জরীর পাদদেশে স্ত্রীপুষ্প বিদ্যমান, বৃন্ত ১ মিমি লম্বা, শক্ত, ঘন তারকাকার রোমযুক্ত, বৃত্যংশ ১.৫ x ০.৫ মিমি, ভল্লাকার, সূক্ষ্মা রোমশ, বিহীন, গর্ভাশয় ১ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, প্রশস্ত উপবৃত্তাকার, ঘন রোমশ, গর্ভদন্ড ১.০-১.৩ মিমি।

ফল ক্যাপসিউল, ০.৫ x ০.৪ সেমি, দীর্ঘায়ত, উপবৃত্তাকার, ৩ খন্ডিত, বাদামী, স্বল্প তারকারার রোমযুক্ত, বীজ ৩.৫ x ২.০ মিমি, উপবৃত্তাকার, ধূসর।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২০ (Bir and Sidhu, 1980).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

শুষ্ক ও বালুকাময় উন্মুক্ত ভূখন্ড। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।

আরো পড়ুন:  জাতেরি বড়মালা ভেষজ বিরুৎ

বন ধনে বা বন ধুনিয়ার বিস্তৃতি:

বিশ্বের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বন ধনে জন্মে। এই প্রজাতির আদিনিবাস আমেরিকা। তবে বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।

ভেষজ গুণ: উদ্ভিদটিকে অ্যান্টিবায়োটিক রূপে ব্যবহার করা হয়। পাতা, কান্ড ও বীজে অ্যালকালয়েড বিদ্যমান।

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:

ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় মূলের লেই অর্জুন গাছের কান্ডের বাকলের কৃাথের সাথে একত্র করে কলেবার ভেষজ ওষুধরূপে গ্রহণ করে।

মুন্ডা আদিবাসী গাছের তরুক্ষীর যৌনক্ষত ও খোস পাচড়া নিরাময় ব্যবহার করে। সাঁওতাল আদিবাসীরা তুষের সাথে গাছের লেই একত্রে মিশিয়ে রিকেট আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা করে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বন ধনে বা বন ধুনিয়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে বন ধনে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪১৯-৪২০ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg

Leave a Comment

error: Content is protected !!