কালা হলদি পাহাড়িঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বিরুৎ

কালা হলদি

বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma caesia Roxb., Asiat. Res. 11: 33 (1810). সমনাম: Curcuma kuchoor Royle. ইংরেজী নাম: Black Zedoary. স্থানীয় নাম: কালা হলদি, কালা ফইল্লা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Zingiberales পরিবার: Zingiberaceae. গণ: Curcuma. প্রজাতি: Curcuma caesia.

ভূমিকা: কালা হলদি (বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma caesia) প্রজাতিটির আদিনিবাস ভারত। বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

কালা হলদি-এর বর্ণনা:

পত্রল, রাইজোম সমৃদ্ধ বীরুৎ, রাইজোম ভিতরে নীল, কেন্দ্রে হলুদাভ, তীব্র কঞ্জুরের গন্ধযুক্ত। পত্রগুচ্ছ ১ মিটারের কাছাকাছি। পাতা ৫-৭টি, পাতার সীথ গোড়ার দিকে বেগুনী;

বৃন্ত সবুজ, ১০-২২ সেমি লম্বা, পত্রফলক চওড়া-ল্যান্সাকার, ৩০-৫৮ X ১২-২০ সেমি, দীর্ঘাগ্র বা পুচ্ছ সদৃশ, উভতল মসৃণ, মধ্যশিরার দৈর্ঘ্য বরাবর একটি গাঢ় বেগুনী চওড়া ব্যান্ড থাকে যা পাতার নীচ থেকে দেখা যায়।

স্পাইক মূলজ, ১০-১৪ x ৫.৫-৭.৮ সেমি এবং একই সমান লম্বা মঞ্জরীদন্ড সম্পন্ন, ৩ টি বেগুনী সীথ দ্বারা আবৃত থাকে, পাতার পূর্বে উদ্গত হয়।

উর্বর-মঞ্জরীপত্র ৯-১৫টি, সবুজাভ আভা সহ লালচে বেগুনী বেগুনী, ডিম্বাকার থেকে আয়তাকার, গোলাকার, ৩.৫-৪.২ x ৩.২৩.৭ সেমি, মসৃণ, মাথার দিকে কয়েকটি রোম আছে, অর্ধেকের কম অংশ পাশাপাশি সংযুক্ত;

প্রতিটিতে ৩-৪ টি পুষ্প কুঁড়ি থাকে, কমা- মঞ্জরীপত্র ৭-৮টি, গাঢ় বেগুনী, ৬ X ৩ সেমি পর্যন্ত, আয়ত-বিডিম্বাকার, মিউক্রোনেট, খাট, সাদা রোমে পাতলাভাবে আবৃত।

সুপ নিচেরদিকে কিছুটা বহির্গামী এবং উপরের দিকে মঞ্জরীপত্রের ভিতরে, উপমঞ্জরীপত্র সাদা, মাথা বেগুনী, বিডিম্বাকার, প্রায় ২.৬ X ১.৪-১.৮ সেমি, ভাজকরা, মসৃণ।

বৃতি প্রায় ১২ মিমি, লম্বা, গোলাপি, ৩-খন্ড, মাথা গোলাপি, পিঠেরদিকে কিছুটা বিদীর্ণ, শিরা লোমশ। দলনল প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, লাল, নিচের অংশ সাদা, পাপড়ি ৩, উপরেরটি ডিম্বাকার, ১২ x ১২ মিমি, ঢাকনাবৎ, মিউক্রোনেট, বেগুনী, অন্য দুই খন্ড ডিম্বাকার, প্রায় ১৪ x ৯ মিমি, লালচে-বেগুনী।

আরো পড়ুন:  রসুন সারা দুনিয়ায় ব্যবহৃত জনপ্রিয় সবজি মসলা

স্টেমিনোড ২টি, বিডিম্ব-জিহ্বাকার, প্রায় ১৩ x ৯ মিমি, হাল্কা হলুদ। লেবেলাম চওড়া-বিডিম্বাকার, ১৭ X ১৭ মিমি, অস্পষ্টভাবে ৩-খন্ড, মধ্যখন্ড খাতা, গাঢ় হলুদ মধ্য ব্যান্ড সহ হলুদ।

পুংদন্ড প্রায় ৩.৫ x ৩.৫ মিমি, পরাগধানী ৪ মিমি লম্বা, দুইটি ৩ মিমি লম্বা ভিতরের দিকে বাঁকা স্পার আছে। গর্ভাশয় হাল্কা বেগুনী, প্রায় ৩.৫ x ৩.০ মিমি, লোমশ, গর্ভমুন্ড ২-খন্ড, প্রায় ১.৫ মিমি প্রশস্ত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: জানা নাই ।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

খোলা পতিত জায়গা জায়গায় জন্মে। ফুল ধরে মে মাসে; তবে ফল সাধারণত ধরে না। রাইজোম দ্বারা সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়।

বিস্তৃতি:

প্রজাতিটি ভারতের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও সিলেট জেলায় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

রাইজোম উত্তেজক, বায়ু নিরোধক, বাহ্যিকভাবে আঘাত, মচকানোতে এবং বাতের ব্যথায় ব্যবহার হয়। মাথাব্যথা এবং ক্ষতেও উপকারী, তাছাড়া প্রসাধনী তৈরীতেও ব্যবহার হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কালা হলদি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে কালা হলদি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. মোহাম্মদ ইউসুফ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৬০-৪৬১ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: B. Ramesh Raju (User:Redaloes)

Leave a Comment

error: Content is protected !!