সটি বা ফইল্লা দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বিরুৎ

সটি বা ফইল্লা

বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma zedoaria (Christm.) Rosc., Trans. Linn. Soc. Lond. ৪: 354 (1807). সমনাম: Amomum latifolia Lamk. (1692), Curcuma officinalis Salisb. (1747), Amomum zedoaria Christm. (1779), Amomum zerumbet Koen. (1783), Curcuma zerumbet Roxb. (1810). ইংরেজী নাম: Zedoary. স্থানীয় নাম: সটি, ফইল্লা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Zingiberales পরিবার: Zingiberaceae. গণ: Curcuma. প্রজাতি: Curcuma zedoaria.

ভূমিকা: সটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma zedoaria) প্রজাতিটির গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

সটি বা ফইল্লা-এর বর্ণনা:

পত্রল, রাইজোম সমৃদ্ধ বীরুৎ, রাইজোম ভিতরে হাল্কা-হলুদ, বয়সের সাথে সাথে কখনো কিছুটা বাদামী হয়, কপুরের মতো গন্ধ, কিছু শিকড়ের মাথায় উপবৃত্তাকার কন্দ থাকে।

পত্রগুচ্ছ ১.০-১.২ মি. লম্বা। পাতা ৪-৬ টি, বৃন্ত ১২-২৫ সেমি লম্বা, পত্রফলক আয়তাকার বা চিকনভাবে আয়ত-ল্যান্সাকার, ২০-৬০ X ৯-১৫ সেমি, মসৃণ, দীর্ঘা, গোড়ার দিকে কিউনিয়েট, উপরপৃষ্ঠে মধ্যশিরা বরাবর একটি চওড়া গাঢ় বেগুনী ব্যান্ড থাকে।

স্পাইক মূলজ, ১৪-১৯ x ৫.৫-৬.০ সেমি, পাতার পূর্বে উদ্গত হয়, মঞ্জরীদন্ড ১০-১৬ সেমি লম্বা, ৪ টি আয়তাকার সীথ দ্বারা আবৃত থাকে।

উর্বর-মঞ্জরীপত্র ১৫-৩৩ টি, ফিকে-সবুজ, ৩.৫-৫.০ x ৩.৫ সেমি, মসৃণ, অগ্র প্রায় গোলাকার বা স্থুলাগ্র, নিচের এক-তৃতীয়াংশে একে অপরের সংগে যুক্ত, অগ্র খাটো লোমে আবৃত, ৬-৭ টি ফুল বহন করে, কমা-মঞ্জরীপত্র ৭-১৪ টি, বেগুনী-গোলাপি, ৬.৫ X ৩.০ সেমি পর্যন্ত, সর্ববৃহৎ টি প্রায় উপবৃত্তাকার, সুলাগ্র, এপিকুলেট, উপ-মঞ্জরীপত্র বিডিম্বাকার, ভাজকরা, সবুজাভ-সাদা, মাথা সিলিয়াযুক্ত।

ফুল মঞ্জরীপত্র থেকে বহির্গামী। বৃতি প্রায় ৮ মিমি লম্বা, সাদা, ৩-দন্তুর বা কাটা, মাথা সিলিয়াযুক্ত। দলনল চোঙাকৃতি, প্রায় ২.৭ সেমি লম্বা, পাপড়ি ৩টি, সাদা, পার্শ্বগুলি আয়তাকার, প্রায় ১৬ X ১০ সেমি, উপরেরটি ঢাকনাবৎ, মাথা স্পারযুক্ত, প্রায় ১৬ X ১১ সেমি।

স্টেমিনোড ২টি, আয়তাকার, প্রায় ১৩ X ৭ মিমি, হলুদাভ। লেবেলাম প্রায় ১৫ x ১৬ মিমি, অস্পষ্টভাবে ৩-খন্ড, খাতা, গাঢ় হলুদ মধ্য ব্যান্ড সহ ফিকে হলুদ। পুংদন্ড খাটো, চওড়া, প্রায় ৪ X ৩ মিমি, মাথার দিকে সরু, পরাগধানী প্রায় ৪ মিমি লম্বা, গোড়ায় ২ টি স্পার আছে। গর্ভাশয় ৪.০ X ২.৫ মিমি, রোমশ, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি রেখাকার, প্রায় ৫ মিমি লম্বা, মুক্ত।

আরো পড়ুন:  চালমুগড়া বা ডালমুগরি পাহাড়িঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪০ (Kumar and Subramanium, 1986).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

রাস্তার ধারের পতিত জায়গা এবং পাহাড়ের ঢাল। ফুল ধারণ সময় এপ্রিল-মে। সাধারণত ফল ধরে না। রাইজোম দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি:

ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশে এ প্রজাতিটি সর্বত্র বেশ দেখা যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও ভেষজ গুণ:

রাইজোম কফ নির্গমক, পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, শীতলকারক, মূত্রবর্ধক এবং উত্তেজক, বায়ু নিরোধক। মন্ড সেতী এবং অর্শ্বে, ক্কাথ। কাল মরিচ, দারুচিনি এবং মধুর সাথে মিশিয়ে ঠান্ডা, ব্রংকাইটিস এবং হাঁপানিতে উপকারী, অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে মিশিয়ে প্রসুতির দুর্বলতা কাটাতে দেওয়া হয়। পাতার রস শৌথ রোগে দেওয়া হয়। রাইজোম থেকে তৈরি সটি স্টার্চ রুগীর পথ্য ও শিশুখাদ্য হিসাবে খুবই মূল্যবান। রাইজোম চুর্ণ সাপ্লান কাঠের সংগে মিশিয়ে লাল রঙের আবিড় তৈরী করা হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

রাইজোম থেকে তৈরী সটি স্টার্চ বার্লির পরিবর্তে শিশুদের দেওয়া হয়। পটুয়াখালি জেলায়। সটি স্টার্চ দিয়ে পিঠা তৈরী করা হয় ।

সটি বা ফইল্লা-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সটি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে সটি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. মোহাম্মদ ইউসুফ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৬৩-৪৬৪ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Michael Wolf

Leave a Comment

error: Content is protected !!