ভূমিকা: লাল চিটচিটা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cyathula prostrata) প্রজাতিটির গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এবং পূর্বাঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
লাল চিটচিটা-এর বর্ণনা:
সরু একবর্ষজীবী বীরুৎ, প্রায়শ সংঘিত, ভূশায়ী হতে ঊর্ধ্বগ বা ঋজু এবং নিম্নাংশে মূলযুক্ত, ২০-৪৫ সেমি দীর্ঘ, কাণ্ড এবং শাখা স্থূলাগ্রভাবে চতুর্ভূজাকার হতে প্রস্থচ্ছেদ উপ-গোলাকার, সরেখ বা দৈঘ্য বরাবর খাঁজকাটা, পর্বের উপরে পুরু, অর্ধ-মসৃণ হতে কম বেশি ঘনভাবে কোমল দীর্ঘ রোম যুক্ত, বিশেষতঃ নিম্নাংশের মধ্যপর্বে।
পত্র ১.৫-৫.৫ x ১.০-৩.৫ সেমি, বেশিরভাগ হীরকাকৃতি হতে হীরকাকৃতি-বিডিম্বাকার, ক্রমান্বয়ে সরু নিম্নাংশ থেকে হীরকাকৃতি-উপবৃত্তাকার হতে খর্বভাবে ডিম্বাকার এবং বেশিরভাগ ত্রিভূজাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা কিছুটা স্থুলাগ্র শীর্ষ, অখন্ড, সিলিয়াযুক্ত প্রান্ত সবুজ বা প্রধানত তরুণ অবস্থায় কম বা বেশি লাল আভাযুক্ত, কোমল, উভয় পৃষ্ঠে কম বা বেশি ঘনভাবে স্পষ্টতঃ রোমশ, অর্ধবৃন্তক বা স্বতন্ত্রভাবে সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত ১০ মিমি পর্যন্ত দীর্ঘ।
পুষ্পবিন্যাস স্পাইক, ৪- ১৫ X ৩-৬ মিমি, মঞ্জরী প্রান্তীয়, ঘন গুচ্ছিত, পূর্ণাঙ্গ, নিম্নাংশের বর্ধিষ্ণু দূরবর্তী পুষ্প দ্বারা বেশ কিছু দীর্ঘায়িত, ঋজু, সোজা বা তরঙ্গিত, মঞ্জরীদণ্ড ৩ সেমি পর্যন্ত দীর্ঘ, পুষ্পমঞ্জরী অক্ষ কিছুটা ঘনভাবে রোমশ। মঞ্জরীপত্র এবং মঞ্জরীপত্রিকা বল্লমাকার-ডিম্বাকার, দীর্ঘাগ্র বা খুব সূক্ষ্মাগ্র, ১.২-১.৬ মিমি দীর্ঘ ।
পুংষ্পপুটাংশ ডিম্বাকার-আয়তাকার, দৃঢ়ভাবে উদগ্রশিখর, অস্বচ্ছ ফ্যাকাশে সবুজ, ভেতরে মসৃণ, বহিঃর্ভাগে ঘন সন্নিবেশিত বা ছড়ানো কিছুটা দীর্ঘ সাদা রোম দ্বারা আবৃত, ৩-শিরাবিশিষ্ট, শীর্ষের ঠিক নিচে অধিকতর পৃথক ও বহিঃধাবন্ত মধ্য-শিরায় খর্বভাবে সংযুক্ত, পার্শ্বীয় শিরা দ্বারা বহিঃর্ভাগ দৃঢ়তর, পুংদণ্ডের মুক্ত অংশ অতি সরু, অপ্রকৃত বন্ধ্যা পুংকেশর কর্তিতগ্র, খর্বভাবে দপ্তর বা এক্সকাভেট শীর্ষ বিশিষ্ট আয়তাকৃতি-কীলকাকার, পরাগধানী ফুল।
গর্ভাশয় ডিম্বাকার, ডিম্বক একল, গর্ভদণ্ড সরু, প্রায় ০.৫ মিমি দীর্ঘ, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার। ফল ডিম্বাকার, বিনিময় অ্যাকিন জাতীয়, গর্ভদণ্ডের অবশিষ্টাংশ দ্বারা শীর্ষে অবস্থানরত পুষ্পপুটে আবদ্ধ, মসৃণ, প্রায় ১.৫ মিমি দীঘা, অবিদারী। বীজ ডিম্বাকার-আয়তাকার, উজ্জ্বল বাদামি, মসৃণ ১.০-১.৫ x ০.৭-১.০ মিমি ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৪৮ (Fedoroy, 1969)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
সুস্থিত অঞ্চল, ছায়াযুক্ত এলাকা, রাস্তার পার্থ, অরণ্য-সীমানা এবং শুষ্ক ঘাসযুক্ত স্থান। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল সেপ্টেম্বর-নভেম্বর।
লাল চিটচিটা-এর বিস্তৃতি:
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া, আফ্রিকা হতে চান এবং অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আমেরিকা এবং মালয়েশিয়ায় সুপরিচিত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এবং পূর্বাঞ্চলে ইহা পাওয়া যায়।
ভেষজ ব্যবহার: কাশি, আমাশয়, কলেরা ও আন্ত্রিক কৃমির ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Kirtikar et al., 1935)
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) লাল চিটচিটা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে লাল চিটচিটা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির এক্স-সিটু এবং ইন-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ উৎসাহিত করা উচিৎ।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম রবিউল ইসলাম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ষ্ঠ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭ আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Marco Schmidt; African plants – A Photo Guide
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।