ভূমিকা: দোলন চাঁপা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hedychium coronarium, ইংরেজী নাম: White Ginge) হচ্ছে আদা পরিবারের হেডিচিয়াম গণের একটি সপুষ্পক বীরুৎ। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয়। বাড়ির টবে বা বাগানের শোভাবর্ধন করে। এটি আকারে বেশি বড় হয় না কিন্তু এর ফুল সুগন্ধযুক্ত।
বর্ণনা: দোলন চাঁপা লম্বা রাইজোমসমৃদ্ধ শোভাবর্ধক বীরুৎ। পত্রলকান্ড, ১.০-১.৫ মিটার লম্বা, গোড়া গোলাপী। দোলন চাঁপার পাতা অবৃন্তক, ল্যান্সাকার, দীর্ঘাগ্র, ২০-৪০ x ৫.৬-৯.০ সেমি, গোড়ার দিকে গোলাকার, কচি পাতার নিচ তল চাপা লোমশ, পরিপক্ক অবস্থায় প্রায় মসৃণ, লিগিউল ২.০-৩.৫ সেমি লম্বা, ঝিল্লিবৎ, রোমশ, অখন্ড। স্পাইক উপবৃত্তাকার, ১০-১২ x ৪-৬ সেমি। মঞ্জরীপত্র ঘনভাবে প্রান্ত আচ্ছাদী, সর্বাহিরের মঞ্জরীপত্র খালি, প্রায় গোলাকার, সূক্ষাগ্র, ৫.০৫.৫ x ৪.৫-৫.০ সেমি, মসৃণ, ভিতরের মঞ্জরীপত্র আয়তাকার, সূক্ষাগ্র, ৫-৬ x ২.২-৩.০ সেমি, মসৃণ, প্রতিটি ৩-৪ টি সাদা সুগন্ধী ফুল ধারন করে, উপ-মঞ্জরীপত্র চিকনভাবে ত্রিকোনাকৃতি, ২.৬ X ১.৬ সেমি, পেঁচানো, হাল্কা সবুজ, ঝিল্লিবৎ, মাথার দিকে রোমশ।
বৃতি সাদা, নলাকার, ৩-৪ সেমি লম্বা, একপাশ বিদীর্ণ, মসৃণ, নিচের অংশ চিকন, উপরের অর্ধেক হঠাৎ প্রশস্ত, ২-খন্ড, মাথা সিলিয়াযুক্ত। দলনল ৬.০-৮.২ সেমি লম্বা, সাদা, পাপড়ি ৩টি, রেখাকার, পেঁচানো, ৩.৬-৩.৮ X ০.৮-০.৯ সেমি, সাদা। ষ্টেমিনোড ২টি, পাপড়ি সাদৃশ, ল্যান্সাকার, ৪-৫ x ১.৮-২.৬ সেমি, অল্প খাতাগ্র, সাদা। লেবেলাম প্রায় গোলাকার, ৫-৬ x ৪.৩-৫.৬ সেমি দ্বিখন্ড, সাইনাস ১.৮-২.৫ সেমি, গভীর, খাট ক্ল-যুক্ত, প্রায়ই পাশে খাঁজকাটা।
পুংকেশর লেবেলামের চেয়ে খাট, পুংদন্ড সাদা, প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, পরাগধানী ল্যান্সকার, সাদা, ছোট-খাঁজকাটা। গর্ভাশয় প্রায় ৩ X ৩ মিমি, সাদা, মসৃণ, গর্ভমুন্ড উল্টা, মোচাকার, লোমশ, সবুজ, মাথায় সিলিয়াযুক্ত, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি ৩ মিমি লম্বা, হলুদ, মুক্ত। ক্যাপসিউল ডিম্বাকার, ১.৬-২.০ X ১.০-১.৫ সেমি, ৩-ভাল্ব, ভাল্বের ভিতর কমলা-হলুদ।
বীজ বিডিম্বাকার, প্রায় ৫ × ৪ মিমি, কোনাচে, রক্ত-লাল, গোড়ায় উজ্জ্বল লাল সুতার মতো এরিল যুক্ত।
ফুল ও ফল ধারণ: দোলন চাঁপার ফুল বর্ষাকালে বেশি ফুটে। তাছাড়া এই ফুল ফোটার সময় আগস্ট-জানুয়ারী ।[১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৪ [২]
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: হাল্কা ছায়াযুক্ত স্থানে ভালো জন্মে। উদ্ভিদটির পাতা হলুদ হয়ে মরে যাওয়ার পরে গোঁড়া থেকে আবার নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি: সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে চাষ করা হয়। বাংলাদেশে গাছটি সারাদেশে শোভাবর্ধক হিসাবে লাগানো হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: রাইজোম পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, বায়ু নিরোধক, টনিক, উত্তেজক, রস জ্বর এবং দূর্বলতায়, মন্ড বাতে বাহ্নিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। ক্কাথ খুধামন্দা এবং ডায়রিয়ায় উপকারী। এরারুটের বিকল্প হিসাবে রাইজোম ব্যবহার হয়। কান্ড থেকে কাগজ তৈরী হয়। ফুল থেকে ভাল সুগন্ধী তৈরি হয়। গাছটিকে সারাদেশে এর সুগন্ধ যুক্ত সুন্দর ফুলের জন্য চাষ করা হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দোলন চাঁপা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দোলন চাঁপা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ ইউসুফ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৩-৪৭৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৩. মোহাম্মদ ইউসুফ প্রাগুক্ত, প. ৪৭৩-৪৭৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।