ভূমিকা: বিলাতী তুলসি বা তোকমা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hyptis suaveolens) প্রজাতিটির গ্রীষ্মমন্ডলী অঞ্চলে জন্মে। বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।
বিলাতী তুলসি-এর বর্ণনা:
সুগন্ধী খাঁজযুক্ত বর্ষজীবী বীরুৎ। এটি ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ড চতুষ্কোণাকার, কণ্টক রোমাবৃত, অধিক শাখান্বিত, খাঁজযুক্ত। পত্র বৃন্তক, পত্রবৃন্ত ২-৮ সেমি লম্বা, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, ফলক ৪.০-৭.৫ x ৩.৫-৫.৫ সেমি, আকার ও আকৃতিতে অধিক বৈচিত্র্যময়, অধিকাংশই প্রশস্ত ডিম্বাকার, গোড়া হৃদপিণ্ডাকার বা কীলকাকার, দন্তর, সূক্ষ্মাগ্র, পৃষ্ঠীয়দেশ রোমাবৃত।
পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক, কখনও গুচ্ছাকার বা একল। মঞ্জরীপত্র প্রায় ০.২ সেমি লম্বা, দৃঢ় রোমাবৃতি, মসৃণ, পত্রবৃন্ত প্রায় ১ সেমি লম্বা, সিলিন্ডাকার, রোমাবৃত। বৃতি ৫টি, ০.৬ × ০.৩ সেমি, ফলে ১.০ ০ ০.৭ সেমি পর্যন্ত বর্ধিত, বাইরে কণ্টকরোমী, মুখে অণুরোমশ, সরেখ ১০টি, দস্তুর ৫টি, খাড়া। দল ৫টি, ০.৬-০.৮ সেমি লম্বা, উপরের ওষ্ঠ খাঁজাগ্র।
পুংকেশর ৪টি, ০.৩-০.৪ সেমি লম্বা, পুংকেশর গাঢ় গোলাপি। গর্ভদণ্ড ২টি, গর্ভাশয় ৪- প্রকোষ্ঠী, গর্ভদণ্ড কিছুটা দ্বি-খণ্ডিত। নাটলেট প্রায় ০.৩ × ০.২ সেমি, সাধারণত ২টি, কালচে বাদামি, সমতল, ডিম্বাকার, শীর্ষে খাঁজযুক্ত, তীক্ষ্ণ গোড়ার প্রত্যেক পাশে সাদা ছাপযুক্ত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : ২০ = ২৮, ৩২ (Kumar and Subramaniam, 1986) ।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
শুষ্ক নরম মাটি, কখনও আর্দ্র ও ছায়াময় স্থান। ফুল ও ফল ধারণ: সারা বর্ষব্যাপী। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি:
এই বীরুৎটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আমেরিকায় উদ্ভূত, কিন্তু এখন আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া সাথে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ফরমোসায় প্রবর্তিত। বাংলাদেশে এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ উদ্ভিদ যা মূলতঃ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকা ও দেশের অন্যান্য অংশে বিস্তৃত।
বিলাতী তুলসি-এর ভেষজ গুণাগুণ:
এই উদ্ভিদটি উদ্দীপক, ঘর্ম নিঃসারক এবং শ্লেষ্মা প্রতিরোধক। ইহা মায়ের দুগ্ধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর পাতা থেকে আহরিত উদ্বায়ী তেল প্যাছৌলির (patchouli) ভেজালকারক। মালয়েশিয়ায় এর বিটপের শীর্ষ সুস্বাদু উপাদান হিসেবে খাদ্যে ব্যবহার করে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সুগন্ধিযুক্ত উদ্বায়ী তেল এই উদ্ভিদ থেকে আহরণ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
স্থানীয় বাজারে এর বীজ Hyptis suaveolens (L.) Poit এর বিকল্প হিসেবে বিক্রি করা হয়। নাটলেট ভেষজ চা তৈরীতে ব্যবহৃত হয় যা টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বিলাতি তুলসী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বিলাতি তুলসী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতির আপাতত সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ নিষ্প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৮৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।