ভুমিকা: পাহাড়ি কলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Musa acuminata, ইংরেজি নাম: ডোয়ার্ফ ক্যাভেন্ডিস) হচ্ছে মুসাসি পরিবারের মুসা গণের একটি সপুষ্পক বিরুৎ। এই প্রজাতিটি সবজি ও ফল হিসাবে খাওয়ার জন্য লাগানো হয়ে থাকে।
বর্ণনা: পাহাড়ি কলা গুচ্ছাকার গ্রন্থিকাল বীরুৎ, ছদ্ম কান্ড সরু, ৩-৫ মিটার লম্বা। পত্র ফলক ২.০-২.৫ মিটার x ৪০-৬০ সেমি, দীর্ঘায়ত, শীর্ষ কর্তিতা, নিম্নাংশ গোলাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা স্থূলা, সবুজ, নিম্নাংশ লালাভ, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সমতুল্য, মধ্যশিরা সবুজাভ-হলুদ বা অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সুস্পষ্ট লাল, বৃন্ত ৬০-৯০ সেমি।
পুষ্পবিন্যাস রেসিম, মঞ্জরীদন্ড। রোমশ, মঞ্জরীপত্র গাঢ় লাল, স্ত্রীকাদি ৪-১০, প্রতিটি কাঁদি ১২-২৬ টি পুষ্প বিশিষ্ট, পুংকাদি ১২-১২৩ টি পুষ্প যুক্ত, যৌগিক পুষ্পপুটাংশ প্রায় ৪.০-১.২ সেমি., গৌর বর্ণের সাদা, মুক্ত পুষ্পপুটাংশ যৌগিক পুষ্পপুটাংশের অর্ধেক, পুংদন্ড প্রায় ১ সেমি লম্বা, পরাগধানী ১.৫ সেমি।
ফল বেরি, প্রায় ১৩ সেমি লম্বা, ৩ সেমি প্রশস্ত, সাধারণত বক্র, রোমশ বিহীন বা নরম রোম যুক্ত, হলুদ, লাল দাগ। যুক্ত, শাস হলদেটে সাদা। বীজ কোণাকার, সম্মুখ ভাগ চ্যাপটা, ৬-৭ মিমি, গাঢ় বাদামী। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। [১]
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২২, ৩৩ [২]
চাষাবাদ: অগভীর অরণ্য ও অরণ্যের নিকটবর্তী অঞ্চল। সাধারণত উর্ধ্বধাবকের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয় তবে বীজের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার ঘটে।
বিস্তৃতি: আদি নিবাস দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বর্তমানে ভারত থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ গেইম রিসার্ভে এটি দেখা যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: পত্র ফলকের অঙ্কীয় পৃষ্ঠ থেকে সাদা মোমের পুরুস্তর চেঁচে সংগ্রহ করে পানির সাথে মিশ্রিত করে উত্তাপ দেয়ার পর ঠান্ডা করা হলে তা কঠিন মোমের স্তরে পরিণত হয় (গলনাঙ্ক প্রায় ৮০° সে)। বাটিক শিল্পে এই মোম ব্যবহার করা হয়। গ্রন্থিক খাদ্যরূপে এবং পাতা জিনিসপত্র মোড়ানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্পমঞ্জরী সবজিরূপে খাওয়া হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে দেখা যায় এই কলা বন্য হাতির খাদ্য (Khan et al., 1994)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পাহাড়ি কলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ দেখা হয়েছে আবাস ভূমি নষ্ট, বন্য হাতির অতিরিক্ত চারণ এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত না হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে পাহাড়ি কলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে। স্বস্থানে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।[৩]
তথ্যসূত্র:
১. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ খন্ড (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮১-৩৮২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.
৩. এম আমান উল্লাহ এবং এম মতিয়ুর রহমান, প্রাগুক্ত, প. ৩৮১-৩৮২।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Raul654
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।