পদ্ম হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পরিচিত জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ

জলজ উদ্ভিদ

পদ্ম

বৈজ্ঞানিক নাম: Nelumbo nucifera Gaertn., Fruct. 1: 73. t. 19, f. 2 (1788). সমনাম: Nymphaea nelumbo L. (1753), Nelumbo indica Poir. (1798), Nelumbium speciosum Willd. (1799). ইংরেজি নাম: Lotus, The Sacred Lotus. বাংলা নাম: পদ্ম, কমল।

ভূমিকা: পদ্ম (বৈজ্ঞানিক নাম: Nelumbo nucifera, ইংরেজি নাম: Lotus, The Sacred Lotus.) হচ্ছে বাংলাদেশভারতের একটি পরিচিত জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। এতে রয়েছে নানা ভেষজ গুণ।

পদ্ম-এর বর্ণনা:

বহুবর্ষজীবী জলজ বীরুৎ, দুগ্ধবৎ তরুক্ষীর বর্তমান। মূলাকার কান্ড শক্ত এবং লতালো। তরুণ উদ্ভিদের পাতা ভাসমান, বয়স্ক উদ্ভিদের পাতা পানির সমতল থেকে উপরে বর্তমান, বর্তুলাকার, ছত্রাকার, নিম্নপৃষ্ঠে কেন্দ্র থেকে পরিধি বরাবর সুস্পষ্টভাবে শিরিত, পত্রবৃন্ত ৭৫-১৫০ সেমি লম্বা, মসৃণ অথবা ১ মিমি (প্রায়) লম্বা বিক্ষিপ্ত কিছু কন্টক বর্তমান, উপপত্র কান্ডবেষ্টক, ফলক ৪৫ x ৩৫ সেমি পর্যন্ত, উপরের পৃষ্ঠ মোমের আস্ত রণবিশিষ্ট এবং চকচকে, অখন্ড, অবতল হয়ে একটি অগভীর পেয়ালার আকার ধারণ করে।

পুষ্পবৃন্ত পত্রবৃন্তের সমান লম্বা, কখনও কন্টকিত। পুষ্প আড়াআড়িভাবে ১৫-২০ সেমি। বৃত্যংশ সংখ্যায় ৪টি, ১.৮-২.৫ সেমি লম্বা, ডিম্বাকার, অখন্ডক, তীক্ষা, গোলাপী বা সাদা বর্ণবিশিষ্ট। পাপড়ি ৯ সেমি (প্রায়) লম্বা, উপবৃত্তাকার, অবতল, শিরিত, গোলাপী বা সাদা, ভেতরের শ্রেণীটি কখনও কখনও সম্পূর্ণরুপে পুংকেশরে রুপান্তরিত হয়। পুংকেশর ২.৫ সেমি (প্রায়) লম্বা। পুষ্পধারী পুষ্পধার ২ সেমি (প্রায়) লম্বা এবং অগ্রভাগ ২.২ সেমি (প্রায়) চওড়া। গর্ভপত্র ১ সেমি (প্রায়) লম্বা। ফলধারী পুষ্পধার ৫ সেমি (প্রায়) লম্বা এবং অগ্রভাগ ৬ সেমি (প্রায়) চওড়া। পরিপক্ক গর্ভপত্র ২ x ১ সেমি (প্রায়)। বীজ ১৩ x ৭ মিমি (প্রায়)।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৬ (Fedorov, 1969).

পদ্ম-এর চাষাবাদ:

মিঠা পানির পুকুর, হ্রদ এবং বিল ইত্যাদি স্থানে জন্মে। তবে অনেকেই শখের বসে বাড়ির ছাদের পদ্ম চাষ করে থাকে। এছাড়া বাড়ির বাগানেও ছোট জলাশয়েও পদ্ম জন্মমে। ফুল ও ফল ধারণ এপ্রিল-অক্টোবর। পদ্মের বংশ বিস্তার হয় রাইজোম দ্বারা।

আরো পড়ুন:  পদ্ম ফুল এবং পাতার ১০টি উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ

বিস্তৃতি:

কাস্পিয়ান সাগর থেকে পূর্বদিকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে জাপান এবং উত্তর অষ্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত (Khan, 1979). বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই লোটাস পাওয়া যায় যেমন- ঢাকা, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এবং চাঁপাই ও নবাবগঞ্জ ইত্যাদি।

পদ্ম-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

পুষ্পবৃন্ত এবং পাপড়ি হৃৎপিণ্ডের টনিক, স্নায়ুর উত্তেজনা বা ব্যাথা। প্রশমনকারী, পিত্ত থলি থেকে পিত্ত্ব নি:সৃতকরণ বৃদ্ধিকারক, কোষ্ঠবদ্ধতাকারী, মূত্রবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করা এবং জ্বরে ব্যবহৃত হয়। চর্ম রোগে বীজ একটি শীতলীকারক সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজ কাঁচা অবস্থায়ও খাওয়া হয় এবং ডায়রিয়ায় সারাতে ব্যবহৃত হয়।

রাইজোম চূর্ণ পাইলস, ঘা, আমাশয় এবং অজীর্ণ-রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারের গ্রহ পরামর্শ দেয়া হয়, রাইজোম পেষ্ট পরজীবী ঘটিত চর্মরোগে স্থানিয় জনসাধারণ ব্যবহার করে থাকে। পাতা এবং পুষ্পবৃন্তে নিলাম্বাইন, নুফ্রেইন, নুসিফেরিন, রুমেরিন, মেরাটিন হাইপারোসাইড, কোয়ারসেটিন এবং আইসোকোয়ারসেটিন উপক্ষার বর্তমান। রাইজোম এবং বীজেও নিলাম্বাইন বিদ্যমান (Gliani, 2003).

আরো পড়ুন: পদ্ম ফুল এবং পাতার ১০টি উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: সুদৃশ্য পুষ্প সাজসজ্জায় এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়, এবং হিন্দুরা ইহাকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পদ্ম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে পদ্ম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prenn

আরো পড়ুন:  ভিক্টোরিয়া হচ্ছে নিমফাসি পরিবারের সপুষ্পক জলজ উদ্ভিদের গণ

Leave a Comment

error: Content is protected !!