ভূমিকা: সাদা শাপলা বা শাপলা বা শালুক (ইংরেজি: hairy water lily বা pink water-lily) হচ্ছে শাপলা পরিবারের নিমফাসি গণের একটি জলজ বীরুত জাতীয় উদ্ভিদ। [১] এটাই বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এর পুংকেশর লেমন হলুদ হয়, ফুলে গন্ধও নাই, বৃন্ত সবুজ বা হাল্কা সবুজাভ বাদামি। ফল হয়। গন্ধও নেই। রাতে ফোটে। দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে ফুল বুজে যেতে থাকে।
বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea pubescens Willd., Sp. Pl. 2: 1154 (1799). সমনাম: Nymphaea nouchali auct. non Burm. f. (1768), Nymphaea esculenta Roxb. (18.32), Nymphiaea lotus var. pubescens (Willd.) Hook. f. & Thoms. (I855).
ইংরেজি নাম: Water Lily, White Water Lily. স্থানীয় নাম: সাদা শাপলা, শালুক।
বর্ণনা: সাদা শাপলা বহুবর্ষজীবী জলজ বীরুৎ, রাইজোম সচরাচর বক্রধাবকবিশিষ্ট, কন্দাল মূল বর্তমান, খাড়া বা লতানো। পাতা স্থুল ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার, অথবা বৃক্কাকার থেকে বর্তুলাকার, ১৫-৫০ x ১২-৪২ সেমি, কিনারা তরঙ্গিত থেকে কন্টকিত-দন্তুর এবং কিছুটা কুঞ্চিত, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, মসৃণ এবং মখমলসম রােমশ।
সাদা শাপলার পুষ্প আড়াআড়িভাবে ৪-১৫ সেমি, কিছুটা সুগন্ধিযুক্ত। বৃত্যংশ ৪টি, সচরাচর ডিম্বাকার-ভল্লাকার, উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত, অগ্রভাগ প্রায় তীক্ষ্ণ অথবা স্থুলাগ্র, ২.৫-৮.০ x ১.০-৩.২ সেমি, বাইরের পৃষ্ঠ অণুরােমাবৃত, সবুজ এবং ৫-৯টি সুস্পষ্ট ও সাদা শিরাবিশিষ্ট, ভেতরের গাত্র সাদা। এদের পাপড়ি ১০-২৫টি, বাইরেরগুলাে ২-৭ X ১.০-২.৮ সেমি, রৈখিকাকার-উল্টাভল্লাকার, অগ্রভাগ প্রায় তীক্ষ্ণ থেকে স্থুলাগ্র। পুংকেশর ২৫-৭০টি, বাইরেরগুলাে ১.৫-৩.৫ সেমি লম্বা, হলুদ। গর্ভাশয় ১৩-২২ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, গর্ভমুণ্ডীয় উপাঙ্গ ০.৫-১.০ সেমি লম্বা, দীর্ঘায়ত, ভেতরের দিকে বাকা, হলুদ। ফল বেরী, আড়াআড়িভাবে ২.৫-৪.০ সেমি। বীজ ১.৫ x ১৪.০ মিমি (প্রায়), উপবৃত্তীয়। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সারা বৎসর, জুন-অক্টোবর মাসে প্রচুর পরিমানে।
ক্রোমােসােম সংখ্যা: 2n = ৮৪ (Fedorov, 1969).
বিস্তৃতি: সাদা শাপলা ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ক্যাম্বােডিয়া, ফিলিপাইন, নিউগিনি এবং ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং ইহার শুভ্র সাদা সতেজ পুষ্প মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারনা করে বিশেষ করে বর্ষাকালে। ইহা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: সাদা শাপলার শিকড় এবং রাইজোমে উপক্ষার, নুফেরিন এবং নিমফেইন বিদ্যমান। পাতায় ফ্ল্যাভােন, গ্লুকোসাইড, মাইরিসিট্রিন বিদ্যমান, আরও আছে ট্যানিক এসিড, ফাইটোষ্টেরিন, ষ্টেরয়েড এবং ফ্লাভােনয়েডস। ইহার পুষ্পে বিদ্যমান কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড এবং নিমফ্যালিন, ডিজটিালিন এর ন্যায় কার্যক্ষমতা সম্পন্ন। রাইজোম কোষ্ঠবদ্ধতাকারী, পচননিবারক, স্নিগ্ধকর এবং মূত্রবর্ধক, এবং ইহার গুঁড়া পাইলস্, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং অজীর্ণ রােগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পুষ্প শীতলকারক এবং কোষ্ঠবদ্ধতাকারী এবং হৃৎপিণ্ডের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে (Ghani, 2003). রাইজোম এবং পুষ্পবৃন্ত সজি হিসেবে খাওয়া হয়। বীজ কড়াইতে ভেজে খই হিসেবে খাওয়া হয়।
জাতিতাত্তিক ব্যবহার: শিশুরা সাদা শাপলার ফল কাঁচা খেয়ে থাকে। রাইজোম, পুষ্পবৃন্ত এবং ফল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ও বিশেষ করে খাদ্যাভাব দেখা দিলে।
আবাসস্থল, বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ: বদ্ধ এবং মিঠা পানির জলাধারে এটি ভালো জন্মে। বংশ বিস্তার হয় কন্দাল রাইজোমের মাধ্যমে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সাদা শাপলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আপাতত কোন হুমকি নেই, কিন্তু অনবরত আবাসস্থল ধ্বংস একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে এটির বর্তমান অবস্থায় যথেষ্ট বিরাজমান। বাংলাদেশে সাদা শাপলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়ােজন নেই।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: সাদা শাপলার ব্যবহৃত চিত্রটি 陶 澤中 -এর তোলা এবং ছবিটি cc-by-2.o এর আওতাভুক্ত।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩২৬-৩২৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।