রজনীগন্ধা ফুলের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ ও পরিচর্যা পদ্ধতি

রজনীগন্ধা ফুলের প্রধানত সিঙ্গল ও ডাবল এ দুধরনের হয়। সিঙ্গল ফুলে ৬টি পাপড়ি এবং রঙ ধবধবে সাদা। ডবল ফুলে পাপড়ি অনেক হলেও ফুলের সংখ্যা কম এবং প্রায়ই পুরো ফুল ফোটে না। আরেক জাতের রজনীগন্ধা আছে যার পাপড়ির সংখ্যা সিঙ্গল আর ডবলের মাঝামাঝি, একে তাই ‘আধা ডবল’ বলা যায়।

কন্দ বা গেঁড়

পুরোনো রজনীগন্ধার ঝড় উঠালে গোড়ায় থোকা থোকা পেঁয়াজের মতো দেখতে পাওয়া যায় যাকে কন্দ বা গেঁড় বলা হয় এবং এগুলো থেকেই চারা তৈরি হয়। শীতকালে এ কন্দগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা লাগানোর মাসখানেক আগে তুলে ছায়ায় রেখে দিয়ে মোটা কন্দগুলো বেছে নিয়ে লাগাতে হয়।

রজনীগন্ধা ফুলের জাত

ব্যবসায়িক ভিত্তিতে রজনী গন্ধার চাষের জন্য জল জমে না এমন মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হয়। মাটি হতে হবে দো-আঁশ এঁটেল বা বেলে মাটি। জমিতে সারাদিন রৌদ্র থাকতে হবে, ধারে কাছে বড় গাছ থাকলে কেটে ফেলতে হবে ।

জমি প্রস্তুত

লাঙল ও মই দিয়ে চাষ করে মাটি গুঁড়ো করে দৈর্ঘ্যে ৪ মিটার ও প্রস্থে ৩ মিটার জমি কয়েকটি কেয়ারিতে ভাগ করে যাতে দু’সারির কেয়ারির মাঝে জল সেচ বা জল নিকাশের নালা থাকবে। প্রত্যেক কেয়ারিতে ২-৩ সেঃ মিঃ পুরু করে গোবর সার বা কম্পোষ্ট ছড়িয়ে দিয়ে কোদাল দিয়ে ভালো করে মাটির সঙ্গে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।

এবার কাঠা প্রতি ১ কেজি ইউরিয়া ও ১ কেজি মিউরেট অব পটাশ সার দিয়ে উপরের ১৫ সেঃ মিঃ মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ফেলতে হবে। এ সমস্ত কাজ চারা লাগাবার অন্তত ১৫ দিন আগে সেরে ফেলতে হবে।

রজনীগন্ধা ফুলের চারা রোপণ

রজনীগন্ধার চারা ফাল্গুন-চৈত্রের দিকে লাগানো ভালো। বাছাই করা কন্দগুলোকে সারি করে এমন ভাবে লাগাতে হবে যাতে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৩০ সেঃ মিঃ এবং এক কন্দ থেকে অন্য কন্দের দূরত্ব ২২ সেঃ মিঃ হয়। কন্দগুলোকে ৪-৫ সেঃ মিঃ গভীর করে লাগাতে হবে। লাগানোর পর কেয়ারি ভাসিয়ে সেচ দিতে হয়।

পরিচর্যা ও যত্ন

সময়মতো আগাছা পরিষ্কার করা দরকার। উপরের ৩ সেঃ মিঃ মাটি শুকিয়ে যেতে দেখলে কেয়ারিতে সেচ দিতে হয়।

১. কেয়ারিতে ফুল ফুটতে শুরু করলে ৬ কেজি খৈল, ২ কেজি ইউরিয়া, ২ কেজি সুপার ফসফেট এবং ১ কেজি মিউরেট অব পটাশ । পূর্বোক্ত মাপের ১০টি কেয়ারিতে দেয়া যাবে। সার প্রয়োগের সাথে সাথে জমিতে সেচ দিতে হয় এবং সার লাগা পাতা জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হয়। প্রতি ৩ মাস অন্তর এভাবে সার ও সেচ দিতে হয়।

২. ফুলের গাছ উচু হলে গোছাগুলিকে খুঁটিতে বেঁধে দিতে হয়।

৩. বিছাপোকা বা লেদা বা উড় চুংগা পোকার আক্রমণ হলে ডায়জিনন-৬০ তরল অথবা একালাক্স-২৫ তরল প্রতি ১০ লিটার জলের সাথে ১৬ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৪. পাতা-পচা রোগ দেখা দিলে ডায়থেন-এম ৪৫ ছত্রাকনাশক বা ইন্দোফিল ঔষধ। ৩৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হয়।

ফুল সংগ্রহ

ডাঁটার নিচের দিকে জোড়া ফুল ফুটতে শুরু করলে ডাঁটা গুলোকে বিকেলের দিকে গোড়া থেকে কেটে নিয়ে এক বালতি জলে ঘণ্টা খানেক দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। এরপর আলগাভাবে আঁটি বেঁধে ফুলগুলোকে কাগজ দিয়ে মুড়ে রাবার ব্যান্ড এঁটে বাজারে পাঠাতে হবে।

তথ্যসূত্র:

১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪। আইএসবিএন 984-461-128-7

আরো পড়ুন:  গন্ধরাজ মৌসুমি ঋতুর ফুলের মধ্যে জনপ্রিয়: এর চাষ, পরিচর্যা ও ফুল সংগ্রহ পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!