ভারতের সর্বত্র বিশেষতঃ জলাসন্ন প্রদেশে টোকাপানা (Pistia stratiotes) পাওয়া যায়। পুকুর, জলাশয়, নালা, ঝিল প্রভৃতিতে জন্মে । জলে ভেসে থাকে। লোনা জলে হতে দেখা যায় না। অল্প লবণ-বিশিষ্ট জলে কদাচিৎ হতে দেখা যায়। শীতের সময় এর বাড়বাড়ন্ত হ্রাস হয়, বেশির ভাগ পাতা পচে যায়। শীতের পর নতুন পাতা গজায় ও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং বর্ষাকালে এর বৃদ্ধি দুরন্ত গতিতে হতে থাকে। এই পানা একটি উৎকৃষ্ট সার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পানা গায়ে লাগলে চুলকায়।
আরো পড়ুন: টোকাপানা বা টাকাপানা-এর নানাবিধ ভেষজ প্রয়োগ
টোকাপানার কোন কাণ্ড নেই। মূল থেকে পাতা বেরোয়, পাতা সম্বাটে গোলাকার, কোমল লোমযুক্ত, ৩/৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। মূল থেকে প্রচুর শেকড় বেরোয় এবং তা জলের মধ্যে থাকে, সেগুলো উপর থেকে দেখা যায় না। একটি পানা থেকে আর একটি পানা জন্মে। এটির পাতা ও শিকড় কোন কোন মাছের ও জলজ পোকামাকড়ের খাদ্য। আবার পুকুর পানায় ভরে গেলে সে জল যেমন অব্যবহার্য হয়ে পড়ে, তেমনি কোন কোন মাছও মরে যায়। গ্রীষ্মকালে এতে ফুল হয়, বর্ষাকালে ফল পাকে। ফলে কয়েকটি বীজ থাকে, বীজ লম্বাটে। এটি পৃথিবীর যেখানে-সেখানে পাওয়া যায়। এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা প্রভৃতি। মহাদেশে বিশেষভাবে জন্মে। এটিকে সংস্কৃতে কুম্ভিকা, বারিপণী, বাংলায় টাকাপানা, টোকাপানা, জলকুম্ভী এবং হিন্দীতে জলকুন্তী বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pistia stratiotes Linn., ফ্যামিলী-Araceae.
টাকাপানা বা টোকাপানা-এর ঔষধ হিসাবে ব্যবহার
পিচ্ছিল, স্নিগ্ধ, জ্বরঘ্ন, তৃষ্ণানাশক, দাহ-প্রশমক, রক্তস্তম্ভক। ছারপোকা নিধনে ব্যবহার করা হয়। পাতার রস নারকেল তেলে ফুটিয়ে লাগালে পুরাতন চর্মরোগ নষ্ট হয়। পাতা বেটে গরম করে অর্শে লাগালে কষ্টের লাঘব হয়ে থাকে। এটি একজিমা, কুষ্ঠ, ক্ষত, অর্শ ও গনোরিয়ায় ব্যবহার্য। পাতা বিশেষ গুণ-সমৃদ্ধ, এটি জীবাণুনাশক, যক্ষ্মা-প্রতিরোধক এবং অতিসার নিবারক। পাতার ক্বাথ প্রস্রাবকারক। মুত্রাঘাত ও মূত্রকৃচ্ছতায় এর ক্বাথ খাওয়ালে এবং সেইসঙ্গে পাতা বেটে পেটে নাভির চারধারে পুরু করে প্রলেপ দিলে প্রস্রাব সরল হয়ে যায় এবং দাহ, যন্ত্রণা প্রভৃতি কষ্ট দূর হয়। গোলাপজল ও চিনি সহযোগে এই ক্বাথ সর্দিকাসি ও হাঁপানিতে ব্যবহার্য। পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষতের পোকা মরে যায়। এই বাটা ফোঁড়ায় প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কুম্ভী তৈল কর্ণস্রাবে বিশেষ উপকারী। বহু প্রাচীন কাল থেকে চীন দেশে উপদংশ জনিত ফোড়ায় ও চর্মরোগে ব্যবহার হয়ে আসছে । গাম্বিয়ায় এটি চক্ষুর বেদনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মূল: মৃদু বিরেচক, প্রস্রাবকারক ও পুলটিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ছাই: পাতার ছাই থেকে প্রস্তুত ক্ষারে পটাশ ক্লোরাইড ও পটাশ সালফেট পাওয়া যায়, তা যবক্ষারের সমতুল্য। এটি দাদ, কণ্ডু, চুলকানি, বড় ক্রিমিনাশকনাশে ব্যবহৃত হয়।
ইউনানি মতে, কুম্ভিকা প্রস্রাবের জ্বালানাশক ও রক্তস্রাব বন্ধকারী। মূল তিক্ত, প্রস্রাবকারক, ক্ষতে উপকারী এবং অগ্নিদগ্ধ প্রদাহে হিতকর। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ :—সমগ্র উদ্ভিদ।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৩৯-৪০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।