বিভিন্ন নটে শাক-এর দশটি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রযোগ

বিভিন্ন নটে শাক ( Amaranthus) হচ্ছে উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। এর পাতা, মূলে নানা ভেষজ গুণ আছে। এছাড়াও শাক হিসাবে খাওয়া হয়।

বিভিন্ন নটে শাক-এর উপকারিতা:

১. সর্দিতে: ঋতুগত কারণে নাক দিয়ে ঝরঝর করে পড়া, মাথা ভার হওয়া—এই উপসর্গ উপস্থিত হলে এই চাঁপা নটের মূল থেতো করে বা বেটে, নিংড়ে সেই রসটাকে অল্প গরম করে তার থেকে ২ চা-চামচ নিয়ে দিনে ২-৩ বার খেতে হবে। এটাতে এই উপকার পাওয়া যাবে যে, সর্দি যদি গাঢ় থাকে তো সেটা পাতলা হয়ে বেরিয়ে যাবে আর পাতলা থাকলে সেটাও বেরিয়ে যাবে।

২. অনিয়মিত ঋতুস্রাবে: যেসব রমণীর মাসিক ঋতুস্রাব ৪ দিনের পরেও চলতে থাকে–ঝির ঝির করে না, রীতিমত হচ্ছে; কারও কারও ২-৩ দিন পরে থেমে গেল আবার কয়েকদিন বাদে দেখা গেল। এইসব ক্ষেত্রে তাঁরা নটে শাকের মূল চাল ধোয়া জল দিয়ে বেটে সেটাকে ছে’কে ওই রসটা একটু গরম করে ৩-৪ চা-চামচ মাত্রায় দই-চার দিন খেলে এটার উপশম হবে এবং কিছুদিন খেলে ওটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

৩. অর্শরোগে: বয়ু-পিত্ত-শ্লেষ্মার যে দোষটিরই প্রাধান্য থাকুক না কেন, নটেশাকের তরকারী খেলে নতুবা শাকের রস ৩-৪ চা-চামচ অল্প গরম করে দু’বেলা খেলে দাস্ত তো পরিষ্কার হবেই, উপরন্তু অগ্নিবলটা বাড়বে।

৪. বাত-শ্লেষ্ম কাসিতে: এক্ষেত্রে সকালে ও সন্ধ্যায় কফ উঠে গেলেই শান্তি, সেক্ষেত্রে নটে শাকের রস ৩-৪ চা-চামচ অল্প গরম করে দু’বেলা খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই কফটা সরল হয়ে উঠে যাবে ও বাতশ্লেষ্ম কাসিটার উপশম হবে।

৫. রক্তপিত্তে: রক্তপিত্তের প্রথমাবস্থায় গলা সুড়সুড় করে, কাসির সঙ্গে অল্প অল্প রক্ত বেরোয়; যাঁরা আবার বেশী পান খেতে অভ্যস্ত তাঁরা এই রক্ত পড়াটা হঠাৎ ক’রে বুঝতে পারেন না, অনেক সময় ভ্রমের সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা রক্তবহ স্রোতটা দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রথমাবস্থায় নটের মূল ১০ গ্রাম ৪-৫ চা-চামচ চাল ধোয়া জলে বেটে ওটাকে ছেঁকে সেই রসটা সকালের দিকে খেতে হবে। হঠাৎ করে এটা সারতে চায় , সেজন্য দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়।

আরো পড়ুন:  কালিলতা বা পান লতা পার্বত্য অঞ্চলে জন্মানো ভেষজ লতা

৬. শ্বেত বা রক্তপ্রদরে: এ দুটোর যেকোন একটি উপস্থিত হলেই নটের মূলের রস ২ চা-চামচ মাত্রায় নিয়ে আতপ চাল ধোয়া জল ১ কাপের সঙ্গে সকালে ও বিকালে কয়েকদিন খেলে স্রাবটা নিয়ন্ত্রিত হবে, আঁশটে গন্ধটাও থাকবে না। কাঁটা নটের (Amarantus Spinosus) মূলের রসও এক্ষেত্রে ভাল কাজ করবে।

৭. অন্নদ্রবশূলে: আহার গ্রহণ, অনিয়মিত উপবাস, অন্নভোজনের সাধারণ নিয়ম-কানুন মেনে না চলার ফলে সাধারণতঃ এই শূলের কবলে পড়তে হয় এবং এটি আহার জীর্ণ হওয়ার কালেই আরম্ভ হয়। এক্ষেত্রে নটের মূল ৫ গ্রাম ৩-৪ চা-চামচ চাল ধোয়া জলে বেটে ওটাকে ছেকে সকালে ও বিকালে খেলে ৩-৪ দিনের মধ্যে উপশম হবে, বেশ কিছুদিন খেলে ওটা সেরে যাবে।

৮. দাহে: শরৎকাল পিত্তবৃদ্ধির সময়, এই শরৎকাল ছাড়াও অনেকে দেহে জ্বালা অনুভব করেন। এক্ষেত্রে আয়-বেদের চিন্তাধারা শরীরে পিত্তবৃদ্ধি হয়েছে এবং বায়ু এসে ওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কোন জায়গায় আগুন লাগলে দেখা যায়, সেখানে বায়ু, ছুটে আসে, সুতরাং আগুনের সঙ্গে বায়ুর খুবই নিকট সম্পর্ক; সেইরকম আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে পিত্তরুপী অগ্নি ও বায়ুর সম্পর্ক। এই অবস্থায় যাঁরা পড়েন, তাঁরা যদি নটে শাকের রস ৩-৪ চা-চমিচ অল্প একটু, গরম করে সকালে ও বিকালে দু’বেলা খান, তাহলে পিত্তবৃদ্ধিটা কমে গিয়ে দাহটার শান্তি হবে।

৯. শোষ রোগে: আমাশয়ে স্নেহদ্রব্য বেশী পড়লে শোষ উৎপন্ন হয়, যেমন তেল, ঘি, মাখন প্রভৃতি বেশী খেলে পিপাসার উদ্রেক হয় আর তা থেকেই মূত্রকৃচ্ছতাও আসে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে শেষে শোষ রোগ এসে জটে যায়। এক্ষেত্রে নটে শাকের রস ৩-৪ চা-চামচ অল্প একটু গরম করে দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে— এদিকে ঔষধ খাওয়াও হবে আর ওদিকে তেল-ঘি-মাখনও ছাড়া যাবে না, সেক্ষেত্রে কিন্তু যেই কে সেই থেকে যাবে।।

আরো পড়ুন:  চিত্রপত্রী বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বাহ্য-প্রয়োগ

১০. হঠাৎ কেটে গেলে: নটের মূল জলে বেটে কাটা স্থানে বেধে দিলে তৎক্ষণাৎ রক্তস্রতটা (রক্ত পড়া) কমে যাবে। তবে শিরা বা ধমনী কেটে রক্তস্রাব হতে থাকলে সেক্ষেত্রে কিন্তু অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Amaranthus spinosus Linn.

Plant contains :- 1. Moisture (85.0%) 2. Protein (3.0%) 3. Fat (0.3%) 4. Carbohydrates (8.1%) 5. Mineral matter (3.6%) 6. Calcium (0.8%) 7. Phosphorus (0.05%) ৪. Iron (22.9 mg/100g).

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৩৩-২৩৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!