আনারসের পাতাগুলি ২/৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা ও ২।৩ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হতে দেখা যায়, দু’দিকের কিনারা করাতের দাঁতের মত কাঁটা যুক্ত, দেখতে অনেকটা তলোয়ারের মত।
পত্রময় কাণ্ডের অগ্রভাগ থেকেই পুষ্পদণ্ড বের হয় এবং ঐ দণ্ডেই একটি মাত্র ফল হয়। ফলের গায়ে চোখের আকারে বহু চিহ্ন থাকে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের এবং পাকলে ঐ ফলটি গাঢ় হলদে রং-এর ও সুগন্ধময় হয়। কাঁচা ফল স্বাদে অম্ল, পাকলে অম্ন-মধুর হয়। এর মাথায় একটি এবং বোঁটার চারধারে অনেকগুলি চারা গাছ বেরোয়, এগুলি লাগালে আবার নতুন গাছ হয় ও তাতেই ফল হয়। আনারসে যে বীজ হয় না তা নয়, অল্প পরিমাণে হয়, এরা আকারে ছোট, ডিম্বাকৃতি ও চেপ্টা; তবে এই বীজ থেকে নতুন গাছ হয় না। গ্রীষ্মের শেষে ও বর্ষাকালে ফুল, তৎপরে ফল হয়।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের সর্বত্র অল্প-বিস্তর আনারসের গাছ দেখা গেলেও এটি বহিরাগত গাছ। আধুনিক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে এর আদি জন্মথান আমেরিকা এবং ১৫১৩, খষ্টাব্দে ইউরোপে ও ১৫৯৪ খৃষ্টাব্দে ভারতে আসে। এই গণের ৬টি প্রজাতি আছে, এর বাংলা নাম আনারস ও হিন্দীতে আনানাস নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Ananas comosus Merr., ফ্যামিলি Bromeliaceae. ঔষধাথে ব্যবহার্য অংশ— পাতা ও ফল।
আনারস-এর উপকারিতা:
১. মূত্রকৃচ্ছ্র সমস্যায়: ওই রকম হ’লে আনারসের গাছের মূল থেতো করে রস ১ চা-চামচ তার সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে খেতে হবে। মূল না হলেও চলবে যদি পাতার সাদা অংশটা থেতো ক’রে রস নেওয়া যায়। এটাতে প্রস্রাবটাও সরল হবে। অবশ্য ২। ৪ দিন খাওয়ার দরকার হয়।
২. ক্রিমি রোগে: যেসব ক্রিমি মলাশয়ে জন্মে শুধু তাই নয়, মলদ্বারে এসে সুড়সুড় করে এবং পিত্তশ্লেষ্মা জমে গিয়ে আমাশায়র মত দস্তি হতে থাকে, এই ক্ষেত্রে আনারস পাতার নীচের সাদা অংশ থেতো করে সেই রস এক বা দু-চা-চামচ করে কয়েকদিন খেতে হয়, এর দ্বারা ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
৩. অপুষ্টিজনিত কৃশতায়: যে কটাদিন পাওয়া যায় এবং পাকা খাওয়া সম্ভব হয় ততদিন খেতে পারলে শরীর ভালই হবে। রস অন্ততঃ সিকি কাপ করে সকালে ও বৈকালে দু’বার খাওয়া উচিত। যাঁদের এলার্জি আছে, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সহ্য হয় না। এটা দু-একবার খেয়ে পরীক্ষা ক’রে নিতে হবে।
৪. কাসিতে: সর্দিগর্মিতে (প্রতিশ্যায়জনিত) যেসব কাসি হয়, সেক্ষেত্রে উপকারী। কথাটার সরলার্থ এই যে, যখন প্রচণ্ড রৌদ্র লেগে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তারপরই খুব ঠাণ্ডা জল, ঠাণ্ডা হাওয়া লাগিয়ে একটু আরাম করার ব্যবস্থায় শরীরস্থ উদান বায়ুটি অর্থাৎ কণ্ঠগত বায়ু, নাভিগত বায়ুর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং মূত্র রুদ্ধ হ’য়ে আরও পিপাসা বাড়ায়। সেই পিপাসা নিবৃত্তির জন্য আরও জল খেয়ে নাভি ও কণ্ঠগত বায়ু আরও ব্যাকুলিত হয়, তখনই এক ধরনের কাসি হয়, সে কাসির ফলে কিন্তু হৃদয়ের সমস্ত পেশীমণ্ডলীই আহত হতে থাকে। ওই ধরনের কাসির কারণ ঘটলে পাকা আনারসের রস কয়েক চামচ (৭। ৮ চা-চামচ) একট চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই অসুবিধেটা চলে যাবে, প্রস্রাবও সরল হয়ে গেলেই সত্য হবেন।
৫. পেট ফাঁপায়: যে যে কারণে পেট ফাঁপে থাকতে। এই ধরনের অবস্থা এলে পাকা আনারসের রস একটু লবণ ও গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে খেলে অল্পক্ষণের মধ্যেই প্রস্রাবটা হয়ে যাবে এবং পেট ফাঁপাও কমে যাবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Ananas comosus Merr.
Moisture 86.5%; acid 0.3-0.9%; carbohydrates 12%; protein 0.6%; fat 0.1%; mineral matter 0.5%; vitamins viz., vitamin-A and vitamin-C; inorganic matter, viz., calcium 0.02%; phosphorus 0.01%; iron; an enzyme, bromelin.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৭৫-১৭৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।