জাফরান (বৈজ্ঞানিক নাম: crocus-sativus)-এর আর এক নাম কুঙ্কুম। সংস্কৃত ভাষায় জাফরান বা কেশরের অনেক নাম আছে। জাফরানকে কাশ্মীরক, কুঙ্কুম, বাহ্লিক, শোণিত, পীতক ও সুরভিও বলা হয়। দুমূর্ল্যতার জন্য জাফরানের ব্যবহার প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। ভারতে কাশ্মীরের জাফরান খুব বিখ্যাত, এছাড়াও বিখ্যাত স্পেন বা স্প্যানিশ জাফরান। ফ্রান্স, সিসিলি ও ইরানেও জাফরান চাষ হয়।
আয়ুর্বেদেড় মত
আয়ুর্বেদ মতে, জাফরান তিক্ত-কটু রস, স্নিগ্ধ ও বর্ণপ্রসাদক অর্থাৎ গায়ের রং খাসা বা পরিষ্কার করে । মাথার অসুখে, কৃমি, বমি, ব্রণ এবং ছুলিতে উপকার দেয়। কফ বাত ও পিত্ত অর্থাৎ ত্রিদোষ নাশ করে।
জাফরান পুষ্পের গর্ভকেশর বলে একে অবাঙালিরা কেশরও বলেন। চিকিৎসকদের মতে, জাফরান উষ্ণ, সুগন্ধি, বায়ুনাশক ও খিচুনি দূর করে। হাকিমি মতে, এটি সেবনে মন প্রফুল্ল থাকে, অন্ত্রমণ্ডলী, মূত্রাশয়, মূত্রকোষ ও যকৃৎ (লিভার) সরল হয়, জমে থাকা মল বেরিয়ে যাওয়ার ফলে যকৃৎ ও প্লীহা পরিষ্কার হয়ে যায়, ফুসফুস সবল হয়। এছাড়াও এটি সেবনে প্রস্রাব ও মেয়েদের ঋতু পরিষ্কার হয়।
সুস্থ থাকতে জাফরানের প্রয়োগ:
১. ঋতু সংক্রান্ত সমস্যা: ঋতুরোধে, শুক্র কমে গেলে, প্রদর ও ঋতু কম হলে, বায়ুর জন্যে শুল (তীব্র ব্যথা) হলে এবং শ্লেষ্মা রোগে নির্দিষ্ট পরিমাণে জাফরান খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২. আমবাতে: জাফরানের তেল আমবাত ও স্নায়বিক রোগের পক্ষে উপকারী।
৩. বাচ্চাদের পায়খানার সমস্যা উপশম পেতে: বলা হয়ে থাকে বাচ্চাদের বারবার পায়খানা হলে ভালো ঘিয়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে জাফরান পিষে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ।
৪. ঔষধের ক্রিয়া বাড়াতে: কোনো ওষুধের সঙ্গে এটি খেলে সেই ওষুধের ক্রিয়া খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায় এবং শরীরের সর্বত্র সেই ওষুধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।
৫. চোখের সমস্যা সারাতে: অল্প পরিমাণ জাফরান পিষে আঞ্জলীতে লাগালে উপকার হয়। হাকিমি মতে সুমা তৈরি করে চোখে লাগালে চোখের ক্ষত এবং বায়ুরোগ দূর হয়।
৬. মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ে: জাফরানের গুড়া মুখে মালিশ করলে রং উজ্জ্বল হয় ও এর গন্ধ শুকলে ঘুম আসে।
৭. প্রস্রাবের সমস্যায়: কিসমিসের ক্বাথের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে এক সঙ্গে পিষে খেলে সব রকমের মূত্রকৃচ্ছতা রোগে (প্রস্রাব কম হওয়া) উপকার পাওয়া যায়। এক চা চামচ মধুতে আট চা চামচ জল মিশিয়ে তার সঙ্গে ১ গ্রাম জাফরানের ঝুরি মিশিয়ে পিষে নিয়ে এক রাত পাথরবাটিতে বা কাচের পাত্রে রেখে দিয়ে সকালে খেলে সব রকমের প্রস্রাব সমস্যা বা আটকে যাওয়া বা মূত্রাবরোধে উপকার পাওয়া যায় ।
অন্যান্য
নাক দিয়ে টানলে মাথা ব্যথা সারে। মধুর সঙ্গে খেলে পাথর দূর হয়। জাফরানের মহার্ঘতার কথা সকলেরই জানা আছে। বলা হয়ে থাকে প্রায় ১৫০০ ফুল থেকে মাত্র এক ভরি বা এক টাকার মুদ্রার ওজনের সমান জাফরান তৈরি হয়। এর এই দুমূর্ল্যতার জন্যে খাবার-দাবারে আজকাল কৃত্রিম এসেন্স ও রং মেশানো হয় আসল জাফরানের পরিবর্তে। ওষুধ হিসেবেও আজকাল জাফরানের সেবন প্রায় সাধ্যাতীত বলা চলে।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, ২৫৫-২৫৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।