কাঁচকলার গুণের কথা বাঙালি বাড়িতে কে না জানে। কাঁচ কলা রান্নাই বা কত রকমভাবে করা হয়ে থাকে। ভাতে, ঝোল, ভাজা, শুক্তো, ডালনা, কোফতা, বড়া, চপ, চিপস- এইভাবে তালিকা দীর্ঘ হয়ে যায়। কাঁচকলার খোসাও ফেলা যায়- ছেঁচকি, ঘণ্টো, বড়া, সেদ্ধ করে বেটে কালজিরে দিয়ে সাঁতলে নেওয়াতারই বা কত রকমফের। এ ছাড়া আছে থোড় ও মোচা। সত্যি কথা বলতে কি কলাগাছের সব অংশই কাজে লাগে– পাকা কলা, কাঁচকলা, গোড়, মোচা সব কিছুই খাওয়া হয়।
কলাপাতা খাওয়া না হলেও খাওয়া-দাওয়ার কাজে লাগে। কলাপাতাকে শ্রেষ্ঠ ভোজনপত্র বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। পংক্তি ভোজনে বা ভোজ বাড়িতে বলতে গেলে শালপাত ছাড়া কলা পাতার কোনো বিকল্প নেই। তাও শালপাতায় আবার সোজাসুজি গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া যায় না- কাটির সাহায্যে পাত প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু কলাপাতা গাছ থেকে কেটে ধুয়ে নিলেই পাত তৈরি হয়ে গেল। টাটকা কাটা কলাপাতার ওপর গরম ফ্যানসা ভাত আর গাওয়া ঘি- এ আহারের তুলনা নেই। এই আহারের কাছে কালিয়া-পোলাও-বিরিয়ানিও ম্লান হয়ে যায়।
কাঁচা ও পাকা কলা দুইটিই উৎকৃষ্ট আহার্য। আয়ুর্বেদ মতে কাঁচকলা শরীর ঠাণ্ডা ও স্নিগ্ধ করে, মল রোধ করে, শরীরের বল বৃদ্ধি করে, কফ নাশ করে, অম্ল, পিত্ত, দাহ, ক্ষয় ও বায়ু নাশ করে। কাঁচকলায় লোহা বেশি আছে তাই যাঁরা পেটের অসুখে ভুগছেন তাঁদের কাঁচকলা আদর্শ পথ্য।
সুস্থ থাকতে কাঁচকলা ও কলাগাছ:
১. পেটের অসুখে, আমাশায় ও রক্ত আমাশয় কাঁচকলা সেদ্ধ করে টাটকা টক দইয়ের সঙ্গে মেখে খেলে রোগ সারে।
২. কলা গাছের শুকনা শেকড় গুঁড়া করে অল্প পরিমাণে খেলে পিত্ত রোগ সারে। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগেরও এটি একটি মহৌষধ।
৩. অনেকের মতে কলা গাছের শেকড়ের রসের সঙ্গে ঘি ও চিনি মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবের অসুখ বা মেহ রোগ সারে।
৪. কাঁচকলা শুকিয়ে গুঁড়া করে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যৌন ব্যাধি সারে ও প্রস্রাবের অসুখ সারে।
৫. একেবারে কচি কলাপাতা মিহি করে বেটে দুধে মিশিয়ে ঘন ক্ষীরের মতো করে খাওয়ালে মেয়েদের প্রদর রোগে উপকার হয়।
আয়ুর্বেদ মতে : কদলী পুষ্প বা মোচা শীতল অথাৎ শরীর ঠাণ্ডা করে স্নিগ্ধ, মধুর, কষায়, হজমে গুরুপাক, ডায়বেটিস, বায়ু, পিত্তরোগ ও ক্ষত নাশ করে। রক্তপিত্তে ও (পিত্তের জন্যে নাক থেকে রক্ত পড়া ও রক্তবমন) উপকার দেয়।
আয়ুর্বেদ মতে : থোড় বা কদলী দন্ড শরীর ঠাণ্ডা করে, রুচি বাড়িয়ে তোলে, ধাতু ও খিদে বাড়িয়ে দেয়, বহুমূত্র (ডায়বেটিস), ও প্রদর (স্ত্রীরোগ) রোগে উপকারী। যোনির দোষ সারিয়ে দেয়। কলা গাছের মূল বা কদলী কন্দ শীতল, চুলের পক্ষে ভাল, বলকারক, অম্ন ও পিত্ত নাশ করে, খিদে বাড়ায়, শরীরের জ্বালা নাশ করে, মধুর রস ও মুখের রুচি বাড়িয়ে দেয় অথাৎ অরুচি দূর করে। এ মোচা সম্বন্ধে আয়ুর্বেদে আরও বলা হয়েছে এতে আছে বাত নাশক গুণ। কৃমি, ক্ষয় (টি. বি) ও কুষ্ঠ রোগেও উপকার দেয়।
রোগ সারাতে কলার থোড় :
১. থোড়ের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়। ৪ চা চামচ থোড়ের রসে ১ চা চামচ মধু এই পরিমাণে খেতে হবে।
২. থোড় শুকিয়ে গুড়া করে তার সঙ্গে অল্প চিনি ও অল্প জল (১ চা চামচ থোড় চূর্ণ, ১ চা চামচ চিনি ১ চা চামচ জল) মিশিয়ে খেলে শরীর গরম হওয়া সেরে যায়, যৌনব্যাধি ও প্রস্রাবের কষ্টও সারে।
৩. থোড়ের রস ৪ চা চামচ গরম করে তাতে অর্ধ চামচ ভাল ঘি মিশিয়ে খেলে তৎক্ষণাৎ প্রস্রাব হয়ে যায় অর্থাৎ কোনো কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে বা আটকে গেলে তা আবার নিঃসারিত হয়।
৪. থোড়ের রস খেলে কোনো কারণে যদি পেটের মধ্যে বিষ চলে গিয়ে থাকে তার দোষ নাশ হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,১০০-১০২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।