বনঢুলি বা দুপুরমনি ফুল ও মূলের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

অল্প শাখাবিশিষ্ট উদ্ভিদ। সাধারণতঃ ২-৫ ফুট উচু ও কাণ্ডের গায়ে নরম রোম আছে। পাতা ৩-৫ ইঞ্চি লম্বা ও কিনারা করাতের ন্যায় খাঁজকাটা। মুলকাণ্ড ও পাতার সংযোগস্থল থেকে একসঙ্গে ১-২টি ফুল বের হয়। এদের বর্ণ লাল, কিন্তু বহিশ্ছদ রোমশ। সাধারণতঃ দুপুর ১২টার সময় এরা ফুটে থাকে, তাই এদের আর এক নাম “দুপুরমণি”। বীজাধারে ৫টি প্রকোষ্ঠ আছে ও প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে ৮–১২টি বীজ থাকে।

আগষ্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফুল ও নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল হয়। সাধারণতঃ ভারতের উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে, বিশেষতঃ পাঞ্জাব ও বোম্বে প্রদেশে বেশী হয়, কিন্তু বাংলায় ও উড়িষ্যায় যে হয় না তা নয়। পতিত জমিতেও এর চাষ হয়, অনেকে বাগানেও এই গাছ লাগিয়ে থাকেন। এর সংস্কৃত নাম বন্ধক, বন্ধুজীব, বাংলায় প্রচলিত নাম বাঁধুলি। হিন্দীতে দুপুরিয়া নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Pentapetes phoenicea Linn. ও পরিবার Sterculiaceae.

গুণাগুণ:

উষ্ণ, গরপাক, ত্রিদোষের প্রশমক, জ্বরনাশক ও পিচ্ছিল। ফল গুরুপাক ও কোষ্ঠবদ্ধতাকারক। চরকের মতে এটা সাপের বিষে হিতকর। সাঁওতালরা এর মূল অনেকক্ষেত্রে ঔষধার্থ ব্যবহার করে থাকে। ব্যবহার্য অংশ হচ্ছে ফুল ও মূল।

বনঢুলি বা দুপুরমনি-এর ভেষজ ব্যবহার:

১. ত্রৈকালিক জনে (তিন দিন অন্তর জ্বর): কোন জ্বর ২ দিন অন্তর, কোন জ্বর দিনে দু’বার, কোন জ্বর দিনে ৩ বার ওঠা-নামা করে; আবার কোন জ্বর ৪ বা ৫ দিন অন্তরও আসে, এটাও দেখা যায় মাসে দু’বার জ্বর আসে।

এক্ষেত্রে যে কোন একটি ঘটলে বনঢুলি বা দুপুরমনি ফুল বেটে দিনে ৩ বার একটি করে খেতে হবে—এটা চিবিয়েও খাওয়া যায়। এইভাবে ৩ দিন খেলেই রক্তগত বা অন্য সংখ্যার ধাতুগত জ্বরও ছাড়বে; জ্বর ছেড়ে গেলেও আরও কয়েকটা দিন দু-এক বার করে খেতে হবে।

২. মূর্ছা রোগ (মাসিকের দোষে): এই ধরনের মাসিক হওয়ার বয়সের আগেও হয় না, মাসিক বন্ধ বয়সেও অর্থাৎ যথাসময়ে বন্ধ হওয়ার বয়সের পরেও হয় না। এটা সাধারণতঃ ৪৫/৪৬ পর্যন্ত থাকে, স্বাস্থ্য ভাল হ’লে আরও বেশীদিন থাকে। এই অবস্থা হ’লে দুপুরমনির শিকড় ৩ গ্রাম বেটে সরবত ক’রে খালি পেটে খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  বিদ্যাপাতা বা কালীঝাঁট অপুষ্পক ভেষজ ফার্ন

বাহ্য প্রয়োগ:

৩. কাটা ছেড়ায়: বাঁধুলী ফুলের পাতার রস লাগালে সেরে যায়।

৪. বিছের হুলের যন্ত্রণায়: বাঁধুলী ফুলের গাছের মূল এবং ফুল একসঙ্গে বেটে হুলে ফোটানো জায়গায় লাগালে কিছুক্ষণের মধ্যে যন্ত্রণার উপশম হয়।

৫. মচকে গেলে বা ভেঙ্গে গেলে: যে রকম যন্ত্রণা সেই রকম হতে থাকলেও এই গাছের পাতা ও মূল বেটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং যন্ত্রণা দুইই কমে যাবে, তবে অন্ততঃ ২৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখা চাই।

৬. দাগে: কোন কারণে গায়ে দাগ হয়ে আছে, যাচ্ছে না, (অবশ্য বেশী গভীরের দাগ হ’লে কাজ হবে না) সেক্ষেত্রে এই ফুল বেটে লাগালে দাগটা মিলিয়ে যায়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৫৯-১৬০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!