জিনিয়া ফুল সকলের নিকটই পরিচিত। দো-আঁশ বা বেলে দোআঁশ উর্বর উচু ও রোদযুক্ত জমিতে বা টবে জিনিয়ার চাষ করা যায়। জিনিয়ারকে চাষ সুবিধা বিচারে শীতকালীন ফুল ধরা হলেও উভয় ঋতুতেই এর চাষ হয়ে থাকে। বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিতে পাতা কুকড়ে যায় এবং ফুল ছোট হয়। কিন্তু শীতকালে এ সমস্যা থাকেনা। কোনো জায়গায় একবার জিনিয়ার চাষ করা হলে এমনিতে সেখানে পরবর্তীতে বীজ পড়ে চারা উৎপন্ন হয়ে থাকে। সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলে জুন মাসের মাঝামাঝি এবং টবে বা গামলায় অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়।
জিনিয়া ফুলের জাত:
জিনিয়া ফুলের রঙ গাঢ় লাল, হলদে, সাদা, বেগুনি, ধূসর ইত্যাদি নানা প্রকার হতে দেখা যায়। প্রধান জাতের দিক থেকে আমাদের সিঙ্গল ও ডাবল জাতের জিনিয়া সচরাচর চাষ হয়ে থাকে। ডাবল জাতের ফুল ডালিয়ার মতো বড়ো হয় এবং স্তরে স্তরে পাপড়ি সাজানো থাকে।
জিনিয়া ফুল চাষের জমি প্রস্তুত:
জমিতে চারা উৎপাদনের বীজতলা এবং উৎপাদিত চারা লাগানোর স্থায়ী জমি দুপ্রকারে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। আবার টব বা গামলায় ও বীজতলা প্রস্তুত হতে পারে। এখানে প্রধানত: জমিতে বীজ তলার বিষয়টিই আলোচনা করা হবে ।
চারা উৎপাদানের বীজতলা প্রস্তুত:
জিনিয়ার চারা উৎপাদনের বীজতলা চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা যেতে পারে। টব বা গামলায় চারা রোপণ করা যাবে। তবে গোবরের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিলেই ভালো হবে।
চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত:
জিনিয়ার চারা লাগানোর জমি চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপভাবে প্রস্তুত করা যাবে, তবে গোবরের পরিমাণ অর্ধেক প্রয়োগ করলে ভালো হবে।
চারা তৈরি ও লাগানোর নিয়ম:
ক. প্রস্তুত করা বীজতলায় জুন মাসের মাঝামাঝি এবং টবে অক্টোবর মাসে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
খ. বীজ বপনের পর সামান্য পানির ছিটা দিয়ে মাটি হালকা ভাবে চাপিয়ে সমান করে দিতে হবে এবং পশুপাখি যাতে ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
গ. চারা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বা ৫ থেকে ৮ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রস্তুতকৃত জমিতে বা টবে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা বাগানের জমিতে ১-১.৫ ফুট বা ৩০-৪৫ সেঃ মিঃ দূরে দূরে রোপণ করতে হবে এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৪৫-৬০ সেঃ মিঃ রাখাই ভালো।
ঘ. চারা লাগানোর পর গোড়ার মাটি সামান্য উঁচু করে দিতে হবে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।
জিনিয়া ফুলের পরিচর্যা ও যত্ন:
গাছ লাগানোর সময় থেকে পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা ভালো ফুল পাওয়া যাবেনা।
ক. চারা লাগানোর সময়ই সামান্য ফসফেট সার দিতে হবে এবং সামান্য জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. পানি জমে যাওয়া বা পানি শূন্য হয়ে যাওয়া কোনটাই চন্দ্রমল্লিকা সহ্য করতে পারেনা বিধায় ফুল আহরণ পর্যন্ত প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে।
গ. গাছ সামান্য বড় হলেই ছোট ছোট চিকন খুটির সাথে গাছগুলিকে বেঁধে দিলে ভালো হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ডাল ছেটে দিতে হবে।
ঘ. গাছের চাহিদার অতিরিক্ত সার দেয়া হলে গাছ চেয়ে পাতা বড় হবে ও ডগা দুটি বেঁধে যাবে এবং ফুল ছোট হবে। এ অবস্থায় গাছের ডগা ছেটে দিতে হবে।
ঙ. চারা লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার পরিমাণ মতো তরল সার এবং মাসে একবার মাছের গুড়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে।
চ. গাছে কুড়ি আসার সময় একবার বা দুইবার অ্যামোনিয়াম সালফেট বা ইউরিয়া বা অন্য কোন নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে।
ছ. নাইট্রোজেন সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা। কেননা তাতে ফুলের আকার ছোট ও বড় ফ্যাকাসে হবে।
জ. অতিরিক্ত পর্যাপ্ত পটাশ সার দিলে ফুলের রঙ ভালো হয় এবং অতিরিক্ত ফসফরাস সার দিতে ফুলের রঙ খারাপ হয়। তাই ফসফরাস সার বেশি মাত্রায় দেয়া যাবেনা।
ঝ. গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মাটি সাবধানে খুড়তে হবে যাতে গাছের শেকড় না কাটে।
ঞ. গাছ বড় হলে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪টি বড় শাখা রেখে বাকীগুলি ছেটে দিলে ফুল বড় হবে।
ট. প্রদর্শনীর জন্যে বড় ফুল পেতে পাশের কুড়ি ছেটে দিয়ে নিয়মিত সার প্রয়োগ, জলসেচ ও রোগ বালাই দমন করতে হবে।
ঠ. গোবর সার ও সরিষার খইল ভিজিয়ে তরল সার তৈরী করে চারা রোপণের পরের মাস থেকেই দিতে হবে এবং কুড়ি আসার সময় তরল সারে সামান্য ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে।
ড. গাছ ২৫ থেকে ৩০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে প্রধান শাখাটি কোন বাউনীতে বাড়িলে দিলেও তাতে ছোট ছোট শাখা বের হবে এবং ফুলের উৎপাদন হবে।
জিনিয়া ফুল সংগ্রহ:
১. জিনিয়া গাছের ফুল পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হলে তা সংগ্রহ করে নিজেদের ব্যবহারে লাগাতে হবে অথবা বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. জিনিয়ার ফুল বেশ শক্ত প্রাণের, গাছে ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত শক্ত থেকে পরে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়।
৩. বোটাসহ ফুল সংগ্রহ করে টবে রাখা যায় এবং বাণিজ্যিকভাবে প্যাক করে বাজারে পাঠানো যায়। ফুল তুলে বোটাগুলি বালতির পানিতে ডুবিয়ে রেখে পরে প্যাক করতে হবে।
৪. লক্ষ্য রাখতে হবে কুড়ি অবস্থায় ফুল যাতে তোলা না হয়। এ অবস্থায় ফুল তুললে তা ফুটে বড় হবে না এবং ক্রেতা পছন্দ করবে না।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০১-১০৩। আইএসবিএন 984-461-128-7
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Narek75
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।