জাম গাছের মধ্যে ঔষধি কাজে তিন প্রকার জামের উল্লেখ দেখা যায়; যেমন, রাজজাম, কাকজাম ও ভূমিজাম। আয়ুর্বেদিক কাজে রাজজাম ব্যবহার করা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini (Linn.) Skeels, কাকজামের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium fruticosa আর ভূমিজাম বলতে যে জাম ব্যবহার করা হয় সেটাতে সন্দেহে আছে; তবে এ সম্পর্কে বাংলার পূর্বাংশের ও উত্তরাংশের প্রাচীন বৈদ্যাক সম্প্রদায় ‘হামজাম’ বলে এক ধরণের গাছকে ব্যবহার করেন, তার পাতায় ও ফলে জামের গন্ধ পাওয়া যায়, এসবে মিল থাকলেও সব দিক থেকে সেটি আকৃতিতে ছোট। এর বৈজ্ঞানিক নাম Polyalthia suberosa. Glossary of Indian medical plants নামক পুস্তকে Syzygium operculatum Gamble গাছটিকে ভূমিজাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দিতে তাকে ‘রাই জাম’ বলে। এই তিন প্রকারের গাছ ভারতের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। নিম্নে রোগ প্রতিকারে জামের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো। রাজ জাম বা কালো জাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন।
কালো জাম একটি জনপ্রিয় ঔষধি ফল
১. সাদা বা রক্ত আমাশায়: জামের কচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সেরে যায়। সম্ভব হলে ছাগল দুধ তাতে মিশিয়ে নিলে ভালো।
২. পেটের সমস্যা: যাদের জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ থাকে, তারা এই পাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে ছোঁকে নিয়ে খাবেন; উপকার নিশ্চয়ই পাবেন।
৩. শয্যামুত্র: এ রোগে শিশু ও বৃদ্ধ অনেকেই অসুবিধায় পড়েন এবং অনেক মাকেও সন্তানের জন্য ভুগতে হয়। সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ চা চামচ জামপাতার রস বয়সানুপাতে খেলে উল্লেখযোগ্য উপকার হবে।
৪. বমনে বা বমি: পিত্ত বিকৃতিতে যেখানে বমি হতে থাকে, সেখানে ২ থেকে ১টা কাঁচ জাম পাতা জলে সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
৫. রক্তরোধে: হঠাৎ হাত পা কেটে বা ছিঁড়ে বা ছিলে গেলে জামপাতার রস সেখানে লাগালে তৎক্ষণাৎ রক্তপড়া বন্ধ হয়, অথচ বিষিয়ে যাওয়ারও ভয় থাকে না।
৬. পচা ঘায়ে: এর পাতাকে সিদ্ধ করে সেই ক্বাথ দিয়ে ঘা ধুয়ে দিলে ২ থেকে ৪ দিনেই বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। এমন কি পশুপাখির ক্ষেত্রেও ওটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৭. ক্ষতে: যে ঘা বা ক্ষত তাড়াতাড়ি পুরে উঠছে না, সেখানে জাম ছাল মিহি গুড়ো করে ঐ ঘায়ের উপর ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি পুরে যায়।
৮. রক্ত পায়খানায়: জাম গাছের ছালের রস ১ থেকে ২ চা চামচ ছাগলের দুধে মিশিয়ে খেতে দিলে রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এটা চক্রদত্তের ব্যবস্থা।
৯. দাঁতের মাড়ির ক্ষত: যাঁদের মাড়ি আলগা হয়ে গিয়েছে, একটুতে রক্ত পড়ে, তাঁরা জাম গাছের ছালের গুড়া দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার নিশ্চয়ই হবে; তবে দাঁতে একটু ছোপ পড়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্য ২ থেকে ১ দিন অন্তর মাজলে এ দাগ হয় না। অনেক বৃদ্ধ বৈদ্য এর সঙ্গে পাতার গুড়োও সমান পরিমাণ মিশিয়ে ব্যবহার করতে বলেন।
১০. বাচ্চাদের পেটের দোষ: যেসব বালক বালিকার সর্বদা পেটের দোষের জন্য শরীর ভালো থাকে না, তাদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ গ্রেণ মাত্রায় জাম গাছের ছাল চূর্ণ ৫ থেকে ১০ ফোঁটা গাওয়া ঘি ও অল্প চিনি মিশিয়ে কিছুদিন খাওয়ালে স্বাস্থ্য ভালো হয়।
১১. হাত পা জ্বালায়:হাত পা জ্বালায় ৪টি পাকা জামের রস মাখলে তৎক্ষণাৎ কমে যায়।
১২.পাতলা পায়খানা, অরুচি, বমিতে: পাকা জাম সৈন্ধব লবণ মাখিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা রেখে, সেটা চটকে, ন্যাকড়ার পুঁটলি বেধে টানিয়ে রাখলে যে রস ঝরে পড়বে, সেটা ২০ থেকে ২৫ ফোঁটা প্রয়োজন বোধে ১ চা চামচ জল মিশিয়ে খেতে হবে তাহলে পাতলা দাস্ত, অরুচি ও বমিভাব কমে যাবে। তবে লবণ একটু বেশী থাকলে ওটি শীঘ্র নষ্ট হয় না এবং মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিতে হয়।
১৩. ডায়াবিটিসে: জামের বীজের ব্যবহার বহুদিন থেকে হয়ে আসছে। যাঁদের ডায়াবিটিসের সঙ্গে হাই ব্লাডপ্রেসার আছে, তাঁদের এটি ব্যবহার করা সমীচীন নয়।
নিষেধ: আধা পাকা বা ডাসা জাম খাওয়া উচিত নয়। আর যাঁদের পেটে বায়ু হয়, তাঁদের না খাওয়াই ভাল।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১১৬-১১৯।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forestowlet
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।