সবচেয়ে সুগন্ধিযুক্ত মন মাতানো দৃষ্টিনন্দন প্রাণ জুড়ানো আলংকারিক দশটি ফুল

একেক ঋতুতে ফোটা সবচেয়ে সুগন্ধিযুক্ত মন মাতানো ১০টি বিচিত্র ফুল (Flower) নিয়ে আমাদের এই লেখা। ফুল তার রং, গন্ধ, আকৃতির কারনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মানুষের কাছে। ফুল থেকে উদ্ভিদের ফল হয় আর সেই ফল থেকে নতুন উদ্ভিদ। কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা শীর্ষে অথবা পাতার কক্ষে ফুল জন্মায়। ফুল হলো একটি উদ্ভিদের সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন অংশ। সমস্ত সপুষ্পক উদ্ভিদেরই ফুল ফোটে এবং এরা উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। ফুলের মিষ্টি গন্ধ মানুষের মনযোগ আকর্ষন করে। জুঁই, বেলি, গন্ধরাজসহ বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল আছে যা আমরা সুগন্ধির জন্য শখ করে লাগিয়ে থাকি।

১. বেলী: বেলী, বনমল্লিকা, মালশি, মগরা  (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminium sambac, ইংরেজি নাম: Arabian Jasmine, Sambac Jasmine, Tuscan Jasmine) হচ্ছে জেসমিন গণের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি ছোট, ঝোপাল গাছ হলেও উচ্চতায় প্রায় ১ মিটার হয়। বেলী গ্রীষ্ম ও বর্ষার ফুল। একটি থোকায় কয়েকটি ফুল থাকে। ফুলের আকার ও গড়ন অনুসারে কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। কলম ও শিকড় থেকে গজান চারায় চাষ। শীতে ছেঁটে দিতে হয়। টবেও ভালো থাকে।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন বেলী

বেলী ফুল

২. বন জুঁই: বন জুঁই, যুথি (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum auriculatum, ইংরেজি নাম : Jasmine) জেসমিন গণের একধরনের লতা বা আরোহী গুল্ম অথবা ভাইন। এটি একটি মধ্যপ্রসারি উদ্ভিদ। এর ফুল সাদা বর্ণের। গাছে থোকায় থোকায় ফোটে ও সুগন্ধি। এর বীজ এবং কান্ড কেটে বিস্তৃতি হয়। বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা এই গাছ জন্মে থাকে।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন বন জুঁই

বন জুঁই, আলোকচিত্র: J.M.Garg

৩. চামেলি: চামেলি বা বড় চামেলি (বৈজ্ঞানিক নাম: Jasminum grandiflorum   ইংরেজি: Catalonian Jasmine বা Spanish Jasmine) হচ্ছে ওলিয়াসি পরিবারের জেসমিন গণের লতানো বা অর্ধলতানো গুল্ম। চামেলি সমভূমি উদ্ভিত। এটি বংশ বিস্তার করে বীজ দ্বারা। জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল ধরে। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ জেলায় চামেলী পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:  লতা পারুল বা রসুন লতা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের আলংকারিক উদ্যান উদ্ভিদ

মূল প্রবন্ধ পড়ুন চামেলি

বড় চামেলী, আলোকচিত্র: Adityamadhav83

৪. হাসনাহেনা: হাছনাহেনা বা হাসনাহেনা  (বৈজ্ঞানিক নাম: Cestrum nocturnum, ইংরেজি নাম: Night Jasmine) হচ্ছে সোলানাসি পরিবারের কেস্ট্রাম গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটি  গোলাকার ঝোপালো গাছ। ছোট ছোট থোকায় ফুল ফোটে। কান্ডের শাখা কলম করে নতুন চারা জন্মে। এর সুগন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ায়।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন হাসনাহেনা

হাসনাহেনার ফুল, আলোকচিত্র: Vinayaraj

৫. দোলন চাঁপা: দোলন চাঁপা (বৈজ্ঞানিক নাম: Hedychium coronarium, ইংরেজী নাম: White Ginge) হচ্ছে আদা পরিবারের হেডিচিয়াম গণের একটি সপুষ্পক বীরুৎ।  দোলন চাঁপার ফুল সাদা সুঘ্রাণযুক্ত। এর ফুল বর্ষাকালে বেশি ফুটে।  তাছাড়া এই ফুল ফোটার সময় আগস্ট-জানুয়ারী। সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে চাষ করা হয়। এটি ঔষধি গুণসম্পূর্ণ বীরুৎ।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  দোলন চাঁপা  

দোলন চাঁপার ফুল ও পাতা, আলোকচিত্র: Judgefloro

৬. গন্ধরাজ: গন্ধরাজ (বৈজ্ঞানিক নাম: Gardenia jasminoides ইংরেজি: gardenia, cape jasmine, cape jessamine, danh-danh, বা jasmin) হচ্ছে রুবিয়াসি পরিবারের গার্ডেনিয়া গণের বৃহৎ গুল্ম। গন্ধরাজ গাছে মার্চ থেকে জুলাই মাসে ফুল ধরে। সন্ধ্যা বেলা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ফুলের সুগন্ধের তিব্রতা থাকে।   চীন এবং জাপানে স্বদেশী উদ্ভিদ এটি। সমগ্র উষ্ণমন্ডলে আবাদ বা লাগানো হয়। বাংলাদেশে প্রায় সব জেলায় বাগান বা বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আবাদ করা হয়।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  গন্ধরাজ

গন্ধরাজ, আলোকচিত্র: Lazaregagnidze

৭. কুরচি: কুরচি বা কুড়চি (বৈজ্ঞানিক নাম: Holarrhena pubescens) হচ্ছে হোলার্হেনা গণের মাঝারি আকৃতির গাছ। এর ছোট ছোট ফুলের বেশ মিষ্টি গন্ধে ভরা থাকে। সুগন্ধের জন্য বাগানে লাগিয়ে থাকে। বীজ থেকে চারা জন্মে। বসন্তকালে গাছের পাতা ঝরে যায়, বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠে আবার নতুন পাতা গজায়। ফলের ভিতরে লম্বা আঁশের তুলোর মধ্যে লম্বাভাবে সারি সারি বীজ সাজানো থাকে। এই গাছের ছালের রং ধূসর বর্ণ।  কুরচির বিভিন্ন অংশ ঔষধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  কুরচি

আরো পড়ুন:  ঝোপ অলকনন্দা গ্রীষ্মমণ্ডলের শোভাবর্ধনকারী গাছ
কুরচি গাছের ফুল ও পাতা

৮. শিউলি: শিউলি বা সেফালি (বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctanthes arbor-tristis ইংরেজি: night-flowering jasmine বা parijat) হচ্ছে অলিয়াসি পরিবারের নেকটানথি গণের বৃক্ষ। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফুলের তালিকায় শিউলি আছে।  সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছোট তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে ফুটে থাকে। রাতে ফুটে আর সকালে গাছের নিচে বিছিয়ে থাকে। 

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  শিউলি

শিউলির ফুল ও পাতা, আলোকচিত্র: Krish Dulal

৯. সন্ধ্যামালতি:  সন্ধ্যামালতী, কৃষ্ণকলি বা সন্ধ্যামণি (বৈজ্ঞানিক নাম: Mirabilis jalapa, ইংরেজি:4 O’clock Plant, Marvel of Peru, Beauty of the Night) হচ্ছে নিকটাগিনাসি পরিবারের মিরাবিলিস গণের  একটি সপুষ্পক ঝোপজাতীয় বীরুৎ। মার্চ ও মে মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে এবং আগষ্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বীজ হয়। সন্ধ্যামালতির মূল ও বীজের মাধ্যমে নতুন চারা জন্মে। এটি একটি ঔষধি বিরুৎ।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  সন্ধ্যামালতি

সন্ধ্যামালতী ফুল

১০. বকুল: বকুল, বহুল, বুকাল, বাকুল, বাকাল (বৈজ্ঞানিক নাম: Mimusops elengi, ইংরেজি নাম- Spanish cherry, Indian Medlar, and Bullet wood) হচ্ছে মিমুসোপ গণের একটি প্রজাতি। এর বাংলা নাম অনেক থাকলেও বকুল নামেই বেশি পরিচিত। বকুলের আদি আবাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আন্দামান ও বার্মা। তবে বর্তমানে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী এলাকার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, বার্মা, ইন্দো-চীন, থাইল্যান্ড, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এলাকা জুড়ে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া, মালয়েশিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, নিউ ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স), ভানুয়াতু, এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়াতে এই গাছ চাষ করা হয়।

মূল প্রবন্ধ পড়ুন  বকুল

বকুল গাছের পাতা

১১. রজনীগন্ধা: রজনীগন্ধা মূলত বাগানে লাগানো হয়। প্রায় সারা বছরই বাজারে এ ফুল পাওয়া যায়। এর চাহিদা বেশী থাকায় সারা বছরই এ ফুল চাষ করা হয়। তবে শীতকালে এটি কিছুটা কম ফোটে। রজনীগন্ধার বংশ বিস্তার কন্দাল মৌল কান্ড থেকে সহজেই বংশবদ্ধি হয়, বীজদ্বারা সামান্যই বংশ বৃদ্ধি ঘটে। কন্দ লাগালে নতুন চারা জন্মে। মার্চ ও এপ্রিল মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়। আদি নিবাস মেক্সিকো ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচুর চাষাবাদ চলছে।

আরো পড়ুন:  সিঙ্গাপুরি কাঠগোলাপ দক্ষিণ এশিয়ার সাদাটে-হলদে রঙের সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট বৃক্ষ

মূল প্রবন্ধ পড়ুন রজনীগন্ধা

রজনীগন্ধা। আলোকচিত্রী: Subhashini Natarajan.

3 thoughts on “সবচেয়ে সুগন্ধিযুক্ত মন মাতানো দৃষ্টিনন্দন প্রাণ জুড়ানো আলংকারিক দশটি ফুল”

  1. দোলন চাপা আমার খুব ভালো লাগে। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!