সুগন্ধি কেয়াকাঁটা এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ

গুল্মের প্রজাতি

সুগন্ধি কেয়াকাঁটা

বৈজ্ঞানিক নাম: Pandanus odorifer সমনাম: Pandanus fascicularis,Pandanus tectorius ইংরেজী নাম: Large Screw-pine. স্থানীয় নাম: সুগন্ধি কেয়াকাঁটা, কেয়া কাঁটা, কেওড়া কিংবা কেতকী। সাধারণ নাম: Crew pine, Caldera Bush.fragrant screw-pine, umbrella tree • Assamese: কেতেকী ketaki • Bengali: কেতকী ketaki • Gujarati: કેતક ketak • Hindi: गगण धूल gagan-dhul, जम्बाला jambala, जम्बूल jambul, केओड़ा keora, केतकी ketaki, केंवड़ा kevara, पांशुका panshuka, पांसुका pansuka, पुष्प चामर pushp-chamar, तीक्ष्ण गन्धा tikshna-gandha • Kannada: ಕೇದಗೆ kedage, ಕೇದಗಿ kedagi, ಕೇದಿಗೆ kedige, ಕೇತಕೆ ketake, ತಾಳೇ ಹೂ taale hu • Konkani: बोन्नोंग bonnong, केगदी kegdi, खेवडा khevada • Malayalam: കൈനാറി kainaari, കൈത kaitha • Marathi: केगद kegad, केतकी ketaki, केवडा kevada • Nepalese: केतकि ketaki • Oriya: kia • Sanskrit: हनीलः hanilha, जम्बूल jambul, केतकी ketaki, पांशुका panshuka, पांसुका pansuka, सुगंधिनी sugandhini • Tamil: கேதகை ketakai, தாழை talai • Telugu: గేదగ gedaga, గొజ్జంగి gojjangi, కేతకి ketaki • Tulu: ಕೇದಯಿ kedayi • Urdu: جمبالا jambala, جمبول jambul, کيتکی ketaki, کيوڙا kevara, پانشکا panshuka.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. বর্গ: Pandanales. পরিবার: Pandanaceae. গণ: Pandanus. প্রজাতি: Pandanus odorifer.

ভূমিকা:

কেয়া কাঁটা (বৈজ্ঞানিক নাম: Pandanus odorifer ইংরেজি নাম: Large Screw-pine) হচ্ছে প্যান্ডানাসি পরিবারের প্যান্ডানাস গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম। এটিকে বাংলাদেশে আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বিভিন্ন উদ্যানে লাগানো হয়। এর ‘একাধিক প্রজাতি আছে। হলুদ-সবুজ পাতার একটি ভ্যারাইটি আছে যা টবে লাগিয়ে’[১] বাড়ির বা বাগানের শোভাবর্ধন করা হয়।

সুগন্ধি কেয়াকাঁটা গুল্মের বর্ণনা:

কেয়া দৃঢ় গুল্ম বিশেষ। কান্ড ঝোপাকার বা ঋজু হয়। এর উচ্চতা প্রায় ৩-৪ মি উঁচু, চকচকে সবুজ থেকে বাদামী, কান্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে শাখার সৃষ্টি। পাতার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ সেমি ও প্রস্থ ৬-৮ সেমি। পাতা নিচের দিকে বাড়তে থাকে, প্রান্ত ও মধ্যশিরা বক্র কন্টকযুক্ত, মধ্যশিরার কাঁটা প্রতিমুখ।

আরো পড়ুন:  আইনা এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বনের চিরসবুজ বৃক্ষ

পুংপুষ্পবিন্যাস সাদা, সুগন্ধী, চমসা সাদা। কেয়া গাছের ফল বড়, দেখতে আনারসের মতো হয়। ফল নিচের দিকে মুখ করে থাকে, এক্ত্রে প্রায় ৫-৮ টি আটিবদ্ধ হয়ে থাকে। ফলের ত্বক দেখতে কাঠের মতো, ৩-৫ সেমি লম্বা, শীর্ষ তুরপুন আকার, কেন্দ্র খাজযুক্ত, গর্ভমুন্ড বিদ্যমান। পরিপক্ক অবস্থায় এর রং কমলা-হলুদ থেকে লাল বর্ণের হয়। ফুল ও ফল ধারণ মে-অক্টোবর মাসে ধরে।

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ: কেয়া গাছ চোষকমূল ও শাখাকলমের দ্বারা বংশ বিস্তার করে। বালুকাময় সমুদ্র উপকুল, খালের বা ভিজা ভূখন্ডের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। বড় কেয়াগাছে আনারসের মতো ফল হয় আশ্বিন-কার্তিক মাসে। অনেকে এই ফল খায়। কেতকী তিতা স্বাদের। অনেকে বাড়ি বাগানে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে লাগায়।

বিস্তৃতি:

মালয় দ্বীপপুঞ্জ, মরিশাস, চীন ও পলিনেশিয়া। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনে ব্যাপক জন্মে। চট্টগ্রাম জেলায়। চাষাবাদ করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মায়, তবে সমুদ্র উপকূলে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশ, ভারত, হাওয়াই, মালদ্বীপের সমুদ্র তীরে, জলার ধারে এগুলো বেশি হয়, তবে সম্পূর্ণ জলবিবর্জিত স্থানে এমন কি পাহাড়েও হতে পারে।

সুন্দরবনের যেসব নদী বা খালের পাড়ে একটু স্থিতিশীল ভূমি পাওয়া যায় সেখানেই এই হলুদ কেয়াকাঁটা এবং সুগন্ধি কেয়াকাঁটা আছে, যদিও হরগজা বা গোলপাতা (Nypa fruticans) দখল করে রাখে প্রায় সবটা জায়গা। বাড়ি ও আবাদী জমির চতুস্পার্শ্বে বেড়ার জন্য রোপন করা হয়।

সুগন্ধি কেয়াকাঁটা গুল্মের নানা ব্যবহার:

কেয়া পাতার রস ব্রণ, কুষ্ঠ, ডায়াবেটিস রোগে উপকারী। ফুলের তেল পেট ব্যথা কমাতে পারে। বাংলায় বিরিয়ানী রান্না কেওড়ার জল ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। এই ফুল থেকেই বাস্পীভবন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় কেওড়ার জল (pandanus flower water)। বিশেষ করে ভারতের রাজস্থানে এর সুগন্ধি বরফী, রসমালাই, রসগোল্লা, পিঠা সহ নানারকমের মিষ্টান্ন তৈরীতে ব্যবহার হয়। এর ফল সহজে খাওয়া যায় না যদি তা চাষের না হয়। বুনো কেয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম অকজ্যালেট থাকে যেমন থাকে কচুর ভেতর। এগুলো মুখে চুলকানি সৃষ্টি করে বলে সাধারণত আদার সঙ্গে জ্বাল দিয়ে নেয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে স্প্রেড হিশেবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশের সাধারণ কেয়া Pandanus tectorius ফ্লোরিডাতে লাগানো হয়েছে। যে সব কেয়া কৃষিজাত করা হয়েছে সেগুলির ফলে অকজ্যালেট খুব কম থাকে, তাই সরাসরি মুখে দিয়ে খাওয়া যায়। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটি সবচেয়ে সুগন্ধি।

বিবিধ:

বাংলাদেশে বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির কেয়া পাওয়া যায়। দুটো প্রজাতিকে বলে কেয়াকাঁটা বা কাইকি কাঁটা। অন্যটির না হচ্ছে হলুদ কেয়াকাঁটা, Pandanus foetidus. দুটো প্রজাতিকে বলে কেয়া বা কেতকী (Pandanus furcatusPandanus tectorius)। একটা নিজেকে পরিচয় দেয় ছোট কেয়া নামে (Pandanus unguifer), আরেকটাকে লোকে ডাকে পোলাওপাতা (Pandanus amaryllifolius)। রবীন্দ্রনাথ গানে লিখেছেন “কেয়া পাতার নৌকো করে সাজিয়ে দিবো ফুলে, তালদিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে”।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কেয়া কাঁটা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কেয়া কাঁটা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ২০, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

২. . এ কে পাশা (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৫৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!