ভূমিকা: অশোক (বৈজ্ঞানিক নাম: Saraca asoca ইংরেজি: ashoka tree.) ফেবেসিয়া পরিবারের সারাকা গণের বৃক্ষ। এটি ভেষজ গুনে ভরা গাছ। ঔষধের জন্য ব্যবহার হয় এর গাছের বা মূলের ছাল,ফল ও বীজ। এর ফুল দেখতে সুন্দর ও উজ্জ্বল। উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এটি লাগিয়ে থাকে।
অশোক বৈজ্ঞানিক নাম: Saraca asoca. সমনাম: Jonesia asoca Roxb.; Jonesia confusa Hassk.; Jonesia pinnata Willd.; Saraca confusa (Hassk.) Backer; Saraca indica sensu Bedd., non L. ইংরেজি নাম: ashoka tree. বাংলা নাম: অশোক জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Fabales পরিবার: Fabaceae গণ: Saraca প্রজাতি: Saraca asoca (Roxb.) Willd.
পরিচয়:
অশোক বহু শাখাবিশিষ্ট ছায়াতরু। এই গাছ দেখতে মাঝারি আকারের। ৬ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। অশোক চিরসবুজ ও মাথা ছড়ান গাছ। এর কচি ডাল ও পাতা ঝুলন্ত এবং হালকা তামাটে রঙের হয় । এটি যৌগপত্র ও জোড়পক্ষ বিশিষ্ট্য। পাতা ২৫ থেকে ৩০ সেমি লম্বা হয়, পত্রিকা ৩ থেকে ৬ জোড়া থাকে এবং ১০ থেকে ২০ সেমি লম্বা ও ৫ থেকে ৭ সেমি চওড়া হয়। পাতা দেখতে মসৃণ। হলুদ ও কমলা রঙের ১০ থেকে ১৫ সেমি চওড়া হালকা সুগন্ধি ফুলের থোকা গাছের কাণ্ড ও ডাল ফুটে থাকে। এই ফুল বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ভরে থাকে। বৃতিনল ১ সেমি লম্বা হয়, মুখে থাকে ৪ থেকে ৬টি লতি, প্রথমে কমলা, পরে লাল রং ধারন করে। পাপড়ি নেই। বহির্গত পুংকেশর ৬ থেকে ৮টি। ফল চ্যাপ্টা হয়। ফলের আকার ১০ থেকে ২০ সেমি লম্বা ও ৫ থেকে ৭ সেমি প্রস্থ। একটি ফলে বীজ থাকে ৪ থেকে ৮টি। S. cauliflora পূর্বোক্ত প্রজাতির মতো। তবে এর কাণ্ড বাদে ফুলের গুচ্ছগুলো থাকে কেবল সরু সরু ডালে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্বর্ণাশোক (S. thaipingensis) হলুদ ফুলের বড় বড় থোকা হয়, ফুল শীত ও বসন্তকালে হয়ে থাকে ।[১] এই গাছের বয়স দীর্ঘদিন হলে ২৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। কচিপাতা যখন বেরোয়, তখন তার রং লালচে তামাটে; এইজন্য গাছটির একটি নামকরণ করা হয়েছে ‘তাম্রপত্রী’।
বংশ বিস্তার ও চাষ পদ্ধতি:
সমতল ও পাহাড়ী অঞ্চল এছাড়া অরণ্যের জলাশয়ের কাছাকাছি জন্মে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই অশোক গাছের বীজ চাষ করলে গাছ হয়। বর্তমানে পথের ধারে একে রোপণ করতে দেখা যায়। পুর্বে এটি অযত্নে ছিলো, বর্তমানে আস্তে আস্তে দুষ্প্রাপ্য হয়ে আসছে, তবে শোভার জন্য অনেকে যত্নের সঙ্গে এই গাছটিকে বাগানে লাগিয়ে থাকেন। বসন্তকালে গুচ্ছ আকারে লালচে কমলালেবুর রঙের ফুল হয়, বর্ষায় ৩ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ও ১ থেকে দের ইঞ্চি চওড়া শিম্বী অর্থাৎ শুটি হয়, তার মধ্যে ৪ থেকে ৮টি পর্যন্ত বড় বড় বীজ হতে দেখা যায়। বীজ পুরু, চাপা, লালচে বাদামী।
ক্রোমোসোম সংখ্যা :
2n = ২৪ (Bir and Kumari, 1980).
বিস্তৃতি:
মালয় পেনিনসুলার ইষ্ট ইরাওয়ার্দি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে আদিনিবাস। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। বাংলাদেশের পথিপার্শ্ব, উদ্যান, পার্ক, অফিস চত্বর ও বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করা হয়। বন্য উদ্ভিদরূপে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অরণ্যে জন্মে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রজাতি এই অশোক। দক্ষিণ ভারত, আরাকান, টেনাসেরিম, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, উড়িষ্যা ও আসামের অঞ্চল বিশেষ।[২]
ব্যবহার্য অংশ:
অশোকের বাকলের বহু ভেষজগুণ আছে। ঔষধের জন্য ব্যবহার হয় এর গাছের বা মূলের ছাল,ফল ও বীজ। নারীদের ঋতুকালীন যাবতীয় রোগের নিরাময় করে বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে। অশোকের ছাল ভিজিয়ে পরে ছেঁকে খেলে হৃদদৌর্বল্য সেরে যায়। এছাড়া এই গাছ আমাশয়, পাইলস, সিফিলিস, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব ও শ্বেত প্রদরে ইত্যাদি রোগ সারাতে কার্যকরী।[১]
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এর বাকল থেকে তৈরি মাদার টিংচার স্ত্রী রোগে ব্যবহার করা হয়। পুষ্প গুঁড়া করে পানির সাথে মিশ্রিত করে পুরাতন আমাশয় রোগে ব্যবহার করা হয়। থাইল্যান্ডে পুষ্প আহার্যরূপে। ব্যবহার করা হয় (Larsen et al., 1984)।
মন্তব্য:
একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে, ময়ূরভঞ্জ অঞ্চলের গাছের ছালের অর্থাৎ ত্বকের রঙও একটু লাল এবং সিদ্ধ করলে কালচে লাল রং হয়; মনে হয় ঐ অঞ্চলের মাটিতে লৌহের অংশ থাকাতে এই গাছের ছাল লৌহের অংশের প্রভাব পায় এবং তার গুণ গ্রহণ করাটাও অস্বাভাবিক নয়। উপকারিতার দিক থেকে ময়ূরভঞ্জের ছালই ভাল আর দক্ষিণ ভারত থেকে যে ছাল আমদানি হয়, তার রং লালচে নয়, একটা হলদে ধরনের। সিদ্ধ করলে তার রং হলদে ধরনেরই হয়। এর প্রজাতি বা গণের কোনো পার্থক্য নেই। [৩]
অশোক গাছের নিচে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কথিত আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছেও এটি একটি পবিত্র গাছ। বীজ থেকে এর বংশবৃদ্ধি হয়। অশোক শব্দের অর্থ দুঃখহারী। রোগের বিভিন্ন যন্ত্রণা থেকে উপশমে জন্য এ গাছ অব্যর্থ। এ গাছের ছায়া শীতল। এর সুমিষ্ট গন্ধ সত্যই দুঃখহারী। গণে প্রজাতি সংখ্যা ২০।[৪]
তথ্যসূত্রঃ
১ দ্বিজেন শর্মা; ফুলগুলি যেন কথা, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ মে ১৯৮৮, প্রথম পুনর্মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০০৩ পৃষ্ঠা, ১৩।
২ বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৩৮-১৩৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
৩ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৩৮-৪৪।
৪ শেখ সাদী; উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ৪১।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sailesh
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।